গ্রাফিক—শৌভিক দেবনাথ।
কৌতূহল ছিল তৃতীয় কিস্তিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ আসবে কি না, তা নিয়ে। দেখা গেল, নেই। তৃণমূলের মুখপত্রে প্রয়াত সিপিএম নেতা অনিল বিশ্বাসের মেয়ে অজন্তা বিশ্বাসের নিবন্ধের তৃতীয় কিস্তি প্রকাশিত হয়েছে শুক্রবার। সেখানে তিনি প্রবীণ কংগ্রেসনেত্রীর স্মৃতিচারণ করেছেন। কিন্তু ‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি’ শীর্ষক সেই নিবন্ধে শুক্রবার পর্যন্ত আসেননি মমতা। তবে লেখার আরও কিস্তি প্রকাশিত হবে। ফলে কৌতূহলও জারি থাকবে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, অজন্তা কবে সেই ‘অগ্নিগর্ভ’ প্রসঙ্গে ঢুকবেন, সেটাই দেখার।
তৃণমূলের দৈনিক মুখপত্রে বুধবার প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল অজন্তার লেখা। তার পরেই তা নিয়ে শোরগোল পড়েছিল। আলোচনা শুরু হয়েছিল সিপিএমের অন্দরেও। পাশাপাশিই বাম মহলে তৈরি হয়েছিল কৌতূহল। কেন অজন্তা তৃণমূলের মুখপত্রে উত্তর সম্পাদকীয় নিবন্ধ লিখছেন, কেন সেখানে মমতার প্রসঙ্গ আসছে, এলেও অজন্তা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কী লেখেন— সব বিষয়েই কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বস্তুত, সিপিএমের পার্টি সদস্য অজন্তা মমতাকে নিয়ে কী লেখেন, তার উপরেও নজর রয়েছে সিপিএমের। বাম মহলের খবর, অজন্তার কাছে দলের একাংশের তরফে বিষয়টি জানতে চাওয়া হতে পারে। আবার অজন্তার ঘনিষ্ঠ সূত্রের বক্তব্য, তেমনকিছু হলে অজন্তা তার জবাব দিতেও প্রস্তুত।
অজন্তার লেখার প্রথম এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে প্রাক্ স্বাধীনতা সময়ের রাজনীতিতে বাঙালি মহিলাদের রাজনীতিকদের অবদানের কথা বলা হয়েছিল। তৃতীয় কিস্তিতে এসেছে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাঙালি মহিলাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের বিভিন্ন চিত্র। বামপন্থী এবং অবামপন্থী— রাজনীতির বিভিন্ন ধারায় যোগ দিয়ে মহিলারা কী রকম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক অজন্তা। তিনি লিখেছেন মণিকুন্তলা সেনের মতো কনক মুখোপাধ্যায়, রেণু চক্রবর্তীর অবদানের বিস্তারিত বর্ণনা। কৃষক আন্দোলনে ইলা মিত্র, শ্রমিক আন্দোলনে সুধা রায়ের ভূমিকার কথাও লিখেছেন অনিল-কন্যা। উল্লেখ রয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে অবামপন্থী রাজনীতিতে বাঙালি মহিলাদের উপস্থিতির কথাও লিখেছেন। সেই প্রসঙ্গেই তিনি লিখেছেন প্রবীণ কংগ্রেসনেত্রী ফুলরেণু গুহের কথা। লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার পাশাপাশি ইন্দিরা গাঁধীর মন্ত্রিসভায় ফুলরেণু কতটা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছিলেন।
তবে অজন্তার নিবন্ধের দিকে সিপিএম এবং রাজ্যের রাজনৈতিক মহল নজর রেখেছে মূলত মমতা-প্রসঙ্গের জন্যই। অন্তত শুক্রবার পর্যন্ত সে প্রসঙ্গ তাঁর লেখায় আসেনি। সে কারণেই শনিবারের কিস্তি নিয়ে কৌতূহল জারি রয়েছে। অজন্তার পরিচিতদের একাংশের দাবি, অনিলের প্রয়াণের পর দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দলগত স্তরে খানিকটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তাঁর পরিবারের। যদিও ব্যক্তিগত স্তরে সম্পর্ক অটুটই ছিল। বরং সাম্প্রতিক কালে অজন্তার পরিবারের খোঁজ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। অতীতে অনিলের সঙ্গে মমতার তীব্র রাজনৈতিক লড়াই থাকলেও সময় তাতে প্রলেপ দিয়েছে। অনিলের প্রয়াণের পর সৌজন্যবশতই মমতা তাঁর পরিবারের সঙ্গে নিভৃতে যোগাযোগ রেখেছেন। যেমন যোগাযোগ রেখেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গেও। বুদ্ধদেব অসুস্থ হওয়ায় বারবার তাঁকে দেখতে গিয়েছেন। অনিল-কন্যার পরিচিতদের বক্তব্য, রাজনীতির আঙিনা ছাড়িয়েও মমতার সঙ্গে অজন্তার পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এখন দেখার, মমতাকে নিয়ে অজন্তা তাঁর লেখায় কী ‘রাজনৈতিক মূল্য়ায়ন’ করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy