Advertisement
E-Paper

হোমের বেড়া ডিঙিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে তরুণী

নিজের বলতে তেমন কেউ নেই ওই তরুণীর। কিন্তু তাতে কী! সরকারি হোম থেকে বেরনোর পরে যে দিদি-দাদাদের পেয়েছেন, তাঁরাই এখন আপনজন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৪০
Share
Save

দেবীপক্ষের শুরুতে বদলে গেল তাঁর জীবনটাও।

প্রায় পাঁচ বছর সরকারি হোমের চার দেওয়ালের মধ্যে কাটিয়েছিলেন বছর কুড়ির তরুণী। সেখান থেকে বেরিয়ে রবিবার এক নতুন জীবনে পা রাখলেন তিনি। কপালে চন্দন, পরনে লাল বেনারসি ও গয়নায় সেজে চার হাত এক হওয়ার ফাঁকে তিনি বলেন, ‘‘জীবনটা যে ফের আলো ঝলমলে হবে, তা কখনও ভাবিনি। সব কিছু ভুলে নতুন জীবন শুরু করতে চাই।’’

নিজের বলতে তেমন কেউ নেই ওই তরুণীর। কিন্তু তাতে কী! সরকারি হোম থেকে বেরনোর পরে যে দিদি-দাদাদের পেয়েছেন, তাঁরাই এখন আপনজন। হয়েছে আইবুড়ো ভাতের অনুষ্ঠান। গত রবিবার সন্ধ্যায় রেজিস্ট্রারের সামনে বসেছিল তাঁর বিয়ের আসর।

পিছনে ফেলে আসা দিনগুলি আজ মনে করতে চান না ওই তরুণী। তাঁর জন্মের আগেই মৃত্যু হয়েছিল বাবার। বড় হচ্ছিলেন মায়ের কাছে। শরীরে দুরারোগ্য ক্যানসার বাসা বাঁধলেও মেয়েকে বড় করতে বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করতেন মা। স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে মেয়েকে ভর্তি করিয়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই মায়ের মৃত্যুর পরেই লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় মেয়ের। মাত্র ১০ বছর বয়সে শুরু হয় লড়াই।

আয়ার কাজ করা দিদা দশ বছরের সেই কিশোরীকেও বাচ্চা দেখাশোনার কাজে লাগিয়ে দেন। ওই তরুণীর কথায়, ‘‘পুরো বেতন এনে দিদার হাতে না দিলেই জুটত মারধর। ১৫ বছর বয়সে পাড়ার এক কাকিমার সঙ্গে পালিয়ে যাই।’’ প্রথমে গিয়ে ওঠেন দিল্লির একটি বাড়িতে। কিছু দিন পরে ওই মহিলা তাঁকে নিয়ে যান রাজস্থানে। তরুণীর অভিযোগ, ‘‘এক দিন আড়াল থেকে শুনি, এক লক্ষ টাকায় আমায় বিক্রি করবে বলে এক জনের সঙ্গে কথা বলছে কাকিমা। শুনেই কোনও মতে সেখান থেকে পালিয়ে গ্রামের একটা বাড়িতে আশ্রয় নিই।’’ এর পরে রাজস্থান পুলিশ খবর পেয়ে ওই মহিলা-সহ আরও কয়েক জনকে গ্রেফতার করে। পাশাপাশি, তরুণীকে পাঠানো হয় রাজস্থানের একটি হোমে। ‘‘প্রায় চার বছর ধরে ওই হোমে থাকতে থাকতে মনে হত, আর বোধহয় কোনও দিন বাইরের জগত দেখব না’’— বলছেন ওই তরুণী।

তবে এ রাজ্যের বাসিন্দা হওয়ায় পরে ওই তরুণীকে পাঠানো হয় লিলুয়া হোমে, যেখানে তাঁর পরিচয় হয় বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়ার সঙ্গে। বৈশালী বলছেন, ‘‘ওই তরুণী সবসময়ে মনমরা হয়ে থাকতেন। এক দিন ওঁর সঙ্গে কথা বলে অতীতটা জানি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ওঁর বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই।’’ হাওড়া আদালত এবং জেলা শিশুকল্যাণ সমিতির নির্দেশে গত বছরের মাঝামাঝি অবশেষে হোম থেকে ছাড়া পান ওই তরুণী। বিধায়কের অফিসে পিওনের একটি চাকরিও জোটে তাঁর। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও হয় সেখানে।

এরই মধ্যে আত্মীয়দের খোঁজে একদিন রানাঘাটে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। জানাচ্ছেন, সেখানে কয়েক জন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাঁকে আটকে রাখেন। পরে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে। সেই সময়েই রানাঘাটের বাসিন্দা, পেশায় গাড়িচালক এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় ওই তরুণীর। পরে দু’জনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। রেজিস্ট্রারের কাছে সই পর্ব মিটিয়ে মালাবদলের পরে ওই তরুণীর স্বামী বলছেন, ‘‘সব শুনেছি। পুরনো সব কিছু ভুলিয়ে ওকে নতুন জীবন উপহার দেব।’’

গত পাঁচ বছর হোমের ঘেরাটোপের মধ্যেই চাপা পড়ে থাকত বোধন থেকে বিসর্জনের আনন্দটা। সেখানে এ বছর নতুন সংসারের পাশাপাশি দুর্গাপুজোটাও অন্য রকম ভাবে কাটাতে চান ওই তরুণী।

লাজুক মুখে নববধূ বলছেন, ‘‘সবটাই যেন স্বপ্ন!’’

Marriage Shelter Home Baishakhi Dalmia

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।