বীথিকা দাস। —নিজস্ব চিত্র।
সংসারের হাল ধরার চাপে একাধিক বার ‘ছেদ’ পড়েছে পড়াশোনায়। সঙ্গে রয়েছে আর্থিক সঙ্কটও। তা-ও দমেননি তিনি। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের চাপদুয়ারের দুঃস্থ পরিবারের বীথিকা দাস ৪৪ বছর বয়সে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় ৬৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন।বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর পড়াশোনার প্রতি উৎসাহকে ‘দৃষ্টান্ত’ হিসাবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অবিবাহিত বীথিকার বাবা যোগেশচন্দ্র পেশায় ছোট কৃষক ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি মারা যান। মা রেবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। দুই দাদা পলাশ ও বিলাস সামান্য জমিতে চাষবাস করেন। বীথিকা জানান, সংসারে প্রবল আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেই ১৯৯৬ সালে তিনি বাহিন হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। তাঁর দাবি, এর পরে তাঁর বাবা খরচ চালাতে না পারায় পড়াশোনায় ‘ছেদ’ পড়ে। এই পরিস্থিতিতে, বাড়িতে পোষা গরু-ছাগলের দুধ বিক্রির টাকায় নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে ২০০৮ সালে তিনি রায়গঞ্জ করোনেশন হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। সংসারে আর্থিক সঙ্কট ও বাবার মৃত্যুর জেরে পড়াশোনায় ফের ‘ছেদ’ পড়ে। ২০১০ সালে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সমীক্ষা প্রকল্পে চুক্তিভিত্তিক কাজে যোগ দেন। সেই কাজের ফাঁকে বীথিকা ২০১৯ সালে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। সে বছরই তাঁকে কাজটি হারাতে হয়। কিন্তু দমে যাননি বীথিকা। দুধ বেচে ও জমানো টাকায় বছর দু’য়েক আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন। বীথিকা বলেন, ‘‘ছোট থেকেই পড়াশোনায় আগ্রহ। চাকরির বয়স পেরিয়েছে জেনেও স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ভর্তি হই। কষ্ট করে বই-খাতা কিনেছি। প্রাইভেট টিউশন নেওয়ার ক্ষমতা নেই বুঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছে পড়া বুঝে নিতাম।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দুর্লভ সরকার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আর্থিক অনটন ও সংসারে নানা প্রতিকূলতাকে হারিয়ে বীথিকা ভাল নম্বর নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। তা-ও এই বয়সে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত পড়ুয়ার পড়াশোনার প্রতি উৎসাহ বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেমিনার, আলোচনাসভা ও বিভিন্ন ক্লাস রুমে বীথিকার এই ‘দৃষ্টান্ত’ টানা প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’
বীথিকা বিয়ে করেননি। তিনি বলেন, ‘‘সংসার চালানোর চাপ তো ছিলই। আর আমাদের যে গরু-ছাগল আছে, সেগুলিকেও তো সামলাতে হয়। সঙ্গে পড়াশোনা। এই সব নিয়েই দিন কেটে গিয়েছে। বিয়ের কথা ভাবার সময়ই পাইনি।’’ বীথিকা জানিয়েছেন, এক সময়ে তিনি স্থায়ী সরকারি চাকরির চেষ্টা করেও পাননি। এখন আর তাঁর সরকারি চাকরির বয়স নেই। তবে, কেউ বা কোনও প্রতিষ্ঠান তাঁকে সম্মানযোগ্য কাজ দিলে, তা করতে রাজি। তা না হলে, প্রাইভেট টিউশন করতে হবে তাঁকে। এখন সেটাই তাঁর আপাতত লক্ষ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy