রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনলেন রাজভবনেরই এক অস্থায়ী মহিলা কর্মী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে যে মহিলা শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছেন, মোবাইলে তাঁর কথা বলার একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে বৃহস্পতিবার রাতে। সেই ভিডিয়োর সত্যতা যদিও আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। ওই ভিডিয়োয় মহিলাকে মোবাইলে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘স্যর, আজ আমি যদি প্রতিবাদ না করি, তা হলে ভবিষ্যতে অন্য কোনও মেয়ের সঙ্গেও এই ধরনের ঘটনা ঘটবে।’’
শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিবৃতি দিয়েছেন রাজ্যপাল বোস। তিনি এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলের পোস্টে লিখেছেন, ‘‘সত্যের জয় হবেই। কৌশলী কোনও আখ্যানের সামনে আমি মাথা নত করতে রাজি নই। যদি আমার বদনাম করে কেউ ভোটে ফায়দা তুলতে চান, ঈশ্বর তাঁদের মঙ্গল করুন। কিন্তু তাঁরা বাংলায় দুর্নীতি এবং হিংসার বিরুদ্ধে আমার লড়াই থামাতে পারবেন না।’’
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা মহিলার যে ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ওই মহিলা এক জনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলছেন। তাঁর পাশে বসে রয়েছেন এক মহিলা পুলিশকর্মী। আর পটভূমিকায় শোনা যাচ্ছে ওয়াকি টকিতে কথা বলার শব্দ। আর অভিযোগকারিণী যাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন, তাঁকে ‘স্যর’ সম্বোধন করছেন। ফোনে কাঁদতে কাঁদতে ওই মহিলাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘আমি কন্ট্র্যাকচুয়াল স্টাফ হয়ে চাকরি হারানোর ভয়ে কত দিন মুখ বুজে থাকব!’’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হেয়ার স্ট্রিট থানায় যান অভিযোগকারিণী। সেখানে পৌঁছন লালবাজারের উচ্চপদস্থ কর্তারাও। গিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। পরে তিনি বলেন, ‘‘আজ বিকেল ৫টা নাগাদ রাজভবনের আউটপোস্টে একটি অভিযোগ আসে। এক জন মহিলা, যিনি রাজভবনের কর্মী, উনি শ্লীলতাহানির একটি অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগটি রাজভবনের আউটপোস্টে জমা পড়ে। সেটিকে হেয়ার স্ট্রিট থানায় ফরোয়ার্ড করা হয়। আমরা অভিযোগটি নথিভুক্ত করেছি এবং তদন্ত শুরু করেছি।’’ ইন্দিরা আরও বলেন, ‘‘অভিযোগটি রয়েছে মাননীয় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারিণী থানায় এসে সবিস্তারে অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগটি সংবেদনশীল হওয়ায় আমরা আপাতত বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। এর পাশাপাশি আইন এবং সংবিধান অনুযায়ী কী কী পদক্ষেপ করা যায়, সেই আলোচনাও করা হচ্ছে।’’ ডিসি সেন্ট্রাল বলেন, ‘‘কবে কী ঘটনা ঘটেছে, তা অভিযোগকারিণী আমাদের জানিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে তা এখনই প্রকাশ্যে আনা সম্ভব নয়। তবে তদন্তপ্রক্রিয়া কী ভাবে এগোবে, তা আপনাদের এখনই জানাতে পারছি না। আপনারা ধীরে ধীরে সব জানতে পারবেন।’’
পুলিশের কাছে করা ওই মহিলার একটি অভিযোগপত্রের ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে বৃহস্পতিবার রাতে। আনন্দবাজার অনলাইন সেই অভিযোগপত্রের ছবিরও সত্যতা যাচাই করেনি। তাতে দেখা যাচ্ছে, মহিলা রাজভবনের ওসির কাছে ওই অভিযোগপত্রটি জমা দিয়েছেন। তাতে মহিলা জানিয়েছেন, তিনি রাজভবনের কোয়ার্টারে থাকেন। অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ করেন রাজভবনে। তাঁর দাবি, গত ১৯ এপ্রিল রাজ্যপাল তাঁকে বলেছিলেন সময় করে সিভি নিয়ে দেখা করতে। এর পর তিনি গত ২৪ এপ্রিল দুুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। সেই সময় রাজ্যপাল তাঁকে আলোচনার সময়ে কুপ্রস্তাব দেন। অভিযোগকারিণীর দাবি, রাজ্যপাল তাঁর শরীরেও হাত দেন। ওই দিনে তিনি কোনও ক্রমে সেখান থেকে সরে যান।
অভিযোগকারিণী আরও দাবি করেছেন, গত ২৪ এপ্রিলের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২ মে আবার তাঁকে ডাকেন রাজ্যপাল। আগের দিনের ঘটনার কথা ভেবে মহিলা তাঁর সুপারভাইজ়ারকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যপালের কাছে যান। তাঁদের কনফারেন্স রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছু ক্ষণ আলোচনার পর রাজ্যপাল সুপারভাইজ়ারকে কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। মহিলার দাবি, এর পর তাঁকে চাকরিতে পদোন্নতির প্রলোভন দেখিয়ে কথাবার্তা চালাতে থাকেন রাজ্যপাল। রাতে ফোনও করবেন বলে জানান রাজ্যপাল। কিন্তু মহিলা যাবতীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় রাজ্যপাল তাঁর সঙ্গে অভব্য আচরণ করেন বলে দাবি করেছেন অভিযোগকারিণী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy