Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Rape and Murder

সালিশিতে মিটমাট না করে প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ায় নির্যাতিতাকে খুন! ধৃত কলকাতা পুলিশের কর্মী

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৯ সেপ্টেম্বর নির্যাতিতা কলকাতা পুলিশের ওই কর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন। ওই কর্মী পুলিশের গাড়ির চালক।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উত্তর ২৪ পরগনা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৫:২২
Share: Save:

‘চাপ’ থাকলেও ধর্ষণের অভিযোগ সালিশি সভায় না মিটিয়ে থানায় গিয়েছিলেন নির্যাতিতা। তার জেরেই তাঁকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল অভিযুক্ত ও নির্যাতিতার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনায় ওই মহিলার শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার মূল পান্ডা কলকাতা পুলিশের এক কর্মী। ওই কর্মী, তাঁর স্ত্রী তথা তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্য ও নির্যাতিতার স্বামীকে শনিবার গ্রেফতার করে পুলিশ। রবিবার জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৯ সেপ্টেম্বর নির্যাতিতা কলকাতা পুলিশের ওই কর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন। ওই কর্মী পুলিশের গাড়ির চালক। পুলিশ সূত্রে খবর, মহিলা জানান মাস ছ’য়েক ধরে তিনি ওই পুলিশকর্মীর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। দু’জনের আত্মীয়তা আছে। ৫ সেপ্টেম্বর ভোরে ওই যুবক তাঁকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ করেন নির্যাতিতা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহিলার দুই ছেলেমেয়ে। স্বামী কর্মসূত্রে ভিন্‌ রাজ্যে থাকেন। শ্বশুরবাড়িতে অশান্তির কারণে মহিলা বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন। নির্যাতিতা অভিযোগ করেন, ৫ সেপ্টেম্বর রাত ২টো নাগাদ অভিযুক্ত পুলিশকর্মী তাঁর ঘরে ঢোকে। মহিলা মেয়েকে নিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। মহিলার মুখ চেপে ধরে তাঁকে পাশের ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের কাছে নির্যাতিতা জানান, ধর্ষণের পরে তাঁকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়। তাঁর অভিযোগ, গ্রামে সালিশি ডেকে বিষয়টি মেটানোর জন্য ‘চাপ দেওয়া হয় অভিযুক্তের তরফে। তবে তাতে রাজি না হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন নির্যাতিতা। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত পলাতক ছিল।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনার পর মহিলা আবার শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যান। তার পরেই শুক্রবার তাঁর শ্বশুরবাড়ির দোতলার ঘরে গলায় দড়ির ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তাঁর ঝুলন্ত দেহ মেলে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছ, বাড়ির লোকজনই দেহটি নামিয়ে ছিলেন। পুলিশ দেহটি নামানো অবস্থায় উদ্ধার করে। দেহ ময়না তদন্তের জন্য বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

শনিবার মৃতের ভাই থানায় অভিযোগ করেন, তাঁর দিদিকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দিনই পুলিশ মহিলার স্বামী, ধর্ষণে অভিযুক্ত কলকাতা পুলিশের কর্মী এবং তাঁর পঞ্চায়েত সদস্য স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশকে করা অভিযোগে নির্যাতিতার ভাই জানিয়েছেন, বিয়ের পর থেকেই তাঁর দিদিকে স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। বাধ্য হয়ে তিনি ভাড়া বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। এ বারে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মী এবং তার পঞ্চায়েত সদস্যা স্ত্রী মিলে দিদির স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে দিদিকে খুন করেছে বলে তাঁর অভিযোগ।

পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত ওই পঞ্চায়েত সদস্যা পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, তাঁর স্বামী ধর্ষণের ঘটনায় যুক্ত নয়। অন্য এক যুবক মহিলাকে ধর্ষণ করেছিল। খুনের অভিযোগও মিথ্যে বলে দাবি তাঁর। এলাকার তৃণমূল নেতা বাপি মজুমদার বলেন, ‘‘দল কোনও অন্যায় কাজ সমর্থন করে না। পঞ্চায়েত সদস্য দোষ করে থাকলে পুলিশ আইননত পদক্ষেপ করুক। এখানে দল হস্তক্ষেপ করবে না।’’ পুলিশের বক্তব্য, তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মহিলার মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Rape and Murder Kolkata Police unnatural death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy