E-Paper

আমরি-কাণ্ডে সাক্ষীর ডাকের পথ চেয়ে ধনঞ্জয়

আমরির আগুনে বিষাক্ত ধোঁয়া ঢুকে বদ্ধ হাসপাতালে অসহায় মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়া ৯৩ জন হতভাগ্যের এক জন ধনঞ্জয়ের কন্যা। ১৪ বছরের প্রাকৃতা পাল।

— প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৫:২৭
Share
Save

১৩ বছর আগের রাতটা এখনও তাড়া করে তাঁকে। হাসপাতালের বেসমেন্টের আগুনের ধোঁয়াটা একটু একটু করে বেড়েই চলেছে। উপরে অ্যানেক্স বিল্ডিংয় ভর্তি তাঁর কিশোরী মেয়ের কাছে যেতে নির্দয় প্রাচীর হয়ে বাধা দিচ্ছেন আমরি হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষীরা। জয়রামবাটির গা ঘেঁষে বাঁকুড়ার কোতুলপুরের দেশড়া গ্রামের বাসিন্দা, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ফার্মাসিস্ট ধনঞ্জয় পাল এই বিভীষিকার সাক্ষী হন ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে।

আমরির আগুনে বিষাক্ত ধোঁয়া ঢুকে বদ্ধ হাসপাতালে অসহায় মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়া ৯৩ জন হতভাগ্যের এক জন ধনঞ্জয়ের কন্যা। ১৪ বছরের প্রাকৃতা পাল। আমরির আগুনের সেই হত্যালীলার প্রধান প্রত্যক্ষদর্শীও ধনঞ্জয়। আজ, সোমবার আমরি-কাণ্ডের ১৩ বছর পূর্তির প্রাক্কালে ধনঞ্জয় বললেন, ‘‘আর জি করের মতো আমরিও কলকাতারই একটি হাসপাতাল, আরও অনেক বেশি দামি। কিন্তু ১৩ বছর আগের একটি ঘটনায় আজও আমার আদালতে সাক্ষী দিতে ডাক পড়ল না।’’

মেয়ে তাঁর মোটরবাইকের পিছনে বসেই স্কুলে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় সামান্য জখম হয়েছিল। কোতুলপুরে হাসপাতালে তখন সিটি স্ক্যান করার কেউ ছিলেন না-বলে মেয়েকে কলকাতায় নিয়ে আসেন বাবা। তার পরে পাকেচক্রে আমরি হাসপাতাল। ধনঞ্জয় বলেন, ‘‘মেয়েকে আর এক দিন বাদেই ছাড়ার কথা ছিল। মেয়ে ভর্তি আর আমার দূরে বাড়ি বলেই হাসপাতালের ওয়েটিংরুমে রাত কাটাচ্ছিলাম আমি। তাই নিজের চোখেই সব দেখি কী ঘটেছে।’’ আমরির অগ্নিকাণ্ডকে অনেকে রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিষ্করুণ কর্পোরেট গাফিলতির দলিল হিসেবেই দেখেন। ধনঞ্জয়ের মনে আছে, আগুনের ধোঁয়া বাড়ছে দেখে মেয়েকে বার করে আনতে হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে বচসা হয় তাঁর। তবু কোল্যাপসিব্‌ল গেট খোলেনি। তার দাবি, নিরাপত্তা রক্ষীরা বলেন,হুকুম নেই!

ধনঞ্জয় ছাড়া বাংলাদেশের এক রোগীর পরিজনও আমরিতে ছিলেন সে-রাতে। তিনি এখন কোথায় কে জানে! ধনঞ্জয় বলেন, ‘‘দু’মাসে, তিন মাসে শুনানিতে আমি যাই। কবে সাক্ষীর ডাক আসবে কেউ বলতে পারল না।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, গত দু’বছর ধরে ময়না তদন্তের রিপোর্ট সংক্রান্ত সাক্ষ্য চলছে। সরকারি হাসপাতালের প্রবীণ চিকিৎসক বিশ্বনাথ কাহালি ৯৩ জনের দেহের ময়না তদন্ত করেছিলেন। অশীতিপর ডাক্তারবাবুকে আদালতে সবার রিপোর্ট ধরে ধরে পড়তে হচ্ছিল। এক দিনে তিন, চার জনের বেশি রিপোর্ট পড়া শেষও হত না। এর মধ্যে বিশ্বনাথ সম্প্রতি মারা গিয়েছেন। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ডাক্তারবাবুর সহকারীদের ডেকে সাক্ষ্য শুরু করা হবে। ৮২ জনের ময়না তদন্তের রিপোর্ট আদালতে পড়া হয়েছে। জনা দশেকের বাকি।

আমরিতে যাঁরা মারা গিয়েছিলেন বেশির ভাগই প্রবীণ। ধনঞ্জয়ের কিশোরী কন্যা ব্যতিক্রম। আজ, সোমবার সাফারি পার্কের কাছে আমরির মৃতদের স্মারকের কাছে জড়ো হবেন গুটিকয়েক শোকার্ত মানুষ। স্থানীয় পঞ্চাননতলা বস্তিতে দরিদ্রসেবার কিছু কর্মসূচিতেও শামিল এই শোকার্তরা।

ধনঞ্জয় ছাড়া আসেন মা মৃদুলা গুহঠাকুরতাকে হারানো পারমিতা বা পিতৃহারা রাজা গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো কেউ কেউ। মুনমুন চক্রবর্তীর মেয়ে আর ছেলেরা তখন খুবই ছোট ছিল। তাঁরা এখন বড় হয়েছেন। বিচারের বাণী এখনও এই মানুষগুলোর জন্য সূদূরের স্বপ্ন বললেও কম বলা হবে। বিচারের প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষীটুকুও শুরু হয়নি। ধনঞ্জয়েরা এখনও মোমবাতি মিছিল করেই চলেছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

AMRI hospital Dhakuria Fire Accident Justice

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।