Advertisement
E-Paper

Madhyamik Candidate: চার পাত্রকে নাকচ করে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ সারথি

সারথির মতো গ্রামের আরও অনেক ছেলেমেয়ের ভরসা তাপসী। বছর কয়েক আগে সুন্দরবনের বালি থেকে পিয়ালির গ্রামে আসেন তিনি।

সারথি রপ্তান। নিজস্ব চিত্র

সারথি রপ্তান। নিজস্ব চিত্র

সমীরণ দাস 

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২২ ০৮:০৭
Share
Save

বয়স সবে সতেরো। এর মধ্যেই বার চারেক পাত্রপক্ষের সামনে ইন্টারভিউয়ে বসতে হয়েছে তাকে। নানা ভাবে বিয়ের চাপ এড়িয়ে সেই মেয়েই এ বার মাধ্যমিক পাশ করল।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার পিয়ালির নতুনপল্লিতে বাড়ি সারথি রপ্তানের। মা নেই। সৎ মায়ের সংসারে বেড়ে ওঠা। অভাব-অনটনের সংসারে আরও টানাটানি শুরু হয় করোনা-পরিস্থিতিতে। দিনমজুর বাবা মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছে মেয়ের চোখে। সারথি পাশে পায় পড়শি এক জেঠিমাকে। তাপসী মণ্ডল নামে ওই মহিলা কখনও বুঝিয়ে, কখনও আইনের ভয় দেখিয়ে কিশোরী মেয়ের বিয়ে আটকান।

সারথির মতো গ্রামের আরও অনেক ছেলেমেয়ের ভরসা তাপসী। বছর কয়েক আগে সুন্দরবনের বালি থেকে পিয়ালির গ্রামে আসেন তিনি। লকডাউন-পরবর্তী সময়ে তাঁর চোখে পড়ে, ঘরে ঘরে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন বাবা-মা। গার্হস্থ্য হিংসাও বেড়ে চলেছে। নানা ভাবে যার প্রভাব পড়ছে ছেলেমেয়েদের উপরে।

এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায়তায় বাড়ির ছাদে একটি গ্রন্থাগার তৈরি করেন তাপসী। নাম দেন, ‘পিয়ালির বইঘর।’ সারথির মতো অনেকে এখানে এসে খানিকটা খোলা বাতাসের সন্ধান পায়। তাদের নাচ-গান শেখানোর ব্যবস্থাও করেন তাপসী। আত্মরক্ষার উপায়-সহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। তাপসীর তত্ত্বাবধানে ছেলেমেয়েদের মানসিকবিকাশ ঘটতে থাকে ধাপে ধাপে। মুক্তচিন্তার বাতাবরণে বেড়ে ওঠে সারথির মতো অনেকে। তারা রাস্তা-ঘাটে, বাড়িতে অন্যায়ের বিরুদ্ধেও মুখ খুলতে শুরু করে। সেই সঙ্গে স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দানা বাঁধে দু’চোখে।

সারথি এবং বইঘরের আরও দুই ছাত্রী এ বার মাধ্যমিক দিয়েছিল। সকলেই পাস করেছে। তাপসী জানান, প্রতিকূলতা সকলেরই ছিল। তবে সারথির লড়াইটা ছিল একেবারে আলাদা। বাড়িতে বরাবর বঞ্চনাই জুটেছে তার। সে সবের মধ্যে নিজের পড়াশোনা, ছোট ভাইয়ের দেখাশোনা চালিয়ে গিয়েছে সে। বইঘরে পড়তে আসার আগে বাড়িতে ভাইয়ের জন্য রান্না করে আসতে হয় তাকে। মা চলে যাওয়ার পরে ঠাকুমার স্নেহচ্ছায়ায় তবু কিছুটা নরম বাতাস বইত সারথির জীবনে। কিন্তু তিনিও বছরখানেক আগে মারা গিয়েছেন।

তারপরেই বাড়ির লোক উঠে পড়ে লাগে বিয়ে দিতে। তাপসী বলেন, “গত এক বছরে চার বার পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে ওকে। চারবারই নাকচ করেছে সারথি নিজেই। একবার পাত্রপক্ষ দেখে যাওয়ার পরে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল। সেখান থেকেও ফিরিয়ে আনা হয়েছে।” খোলাঘাটা আদর্শ মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে পড়ত সারথি। সারথির কথায়, “একাদশে ভর্তির আবেদনপত্র তুলেছি। পড়াটা চালিয়ে যাবই। পড়াশোনা করে চাকরি করব। এখন বিয়ের প্রশ্নই নেই।”

মেয়ে মাধ্যমিক পাস করায় বিয়ে দেওয়ার হুড়োহুড়ি খানিক নেমেছে সারথির বাবা গোবিন্দর মাথা থেকে। বললেন, “অভাবের সংসারে ভেবেছিলাম বিয়ে দিলে মেয়েটা ভাল থাকবে। কিন্তু এ বার মাধ্যমিক পাস করল। মনে হচ্ছে, পড়াটা চালিয়ে গেলেই ভাল।’’ 

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

Madhyamik South 24 Parganas

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।