বোলপুর থেকে খুব বেশি দূরে নয় ইলামবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতটি। একদা এই পুরো অঞ্চলেই দাপট ছিল অনুব্রত মন্ডল তথা কেষ্টর। বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা অভিযোগ উঠেছে বার বার শাসকদলের বিরুদ্ধে। তার মধ্যেও কিন্তু পঞ্চায়েতটি উন্নয়নের কাজ করে গিয়েছে টানা। সেই কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে খোদ কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক, ইলামবাজার পঞ্চায়েতকে ২০১৫ সাল থেকে মোট ছ’বার পুরস্কৃত করে।
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন রাজীব গান্ধী চেয়েছিলেন ‘পিএম টু ডিএম’ পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় সাহায্য সরাসরি গ্রামীণ এলাকায় পৌঁছে দিতে। পদ্ধতিটি ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পরিপন্থী’, এই দাবিতে রাজ্যের তৎকালীন শাসকদল সিপিএম এর সমালোচনা করেছিল। তার পরে গঙ্গা-যমুনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। কেন্দ্র এবং রাজ্য, দু’পক্ষই বর্তমানে একমত যে, দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য জরুরি গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন। এবং সেই কাজে গ্রাম পঞ্চায়েতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই বেশ কিছু প্রকল্পের অর্থ সরাসরি কেন্দ্র থেকে পঞ্চায়েতে আসে। তার ফলে উন্নয়নের রূপরেখা দ্রুত কার্যকর করা সম্ভব হয়।
ইলামবাজার পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, শাসকদলের দাপুটে নেতার এলাকার মধ্যে থাকা সত্ত্বেও এবং স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও সেই পঞ্চায়েত চোখে পড়ার মতো কাজ করেছে। যার স্বীকৃতি জাতীয় স্তরে পুরস্কার।
এমন কাজ কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক জায়গাতেই হয়েছে। যেমন ধরা যাক বেলপাহাড়ির আমলাশোলের কথা। বাম আমলে অনাহারে মৃত্যুতে শিরোনামে এসেছিল জায়গাটি। এখন সে গ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত মুড়ার কথায়, ‘‘এক দশকে এলাকার রাস্তাঘাটের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। ৫০টির বেশি পুকুর হয়েছে। এর ফলে পাহাড়ি এলাকায় সেচের সুবিধা হয়েছে।’’
মুর্শিদাবাদ জেলায় ১০-১৫ বছর আগেও বহু গ্রামে রাস্তা ছিল না। এখন অনেক ক্ষেত্রেই পিচ বা ঢালাইয়ের রাস্তা হয়েছে। একই ছবি বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া-সহ আরও নানা জেলায়। প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্টকে কাজে লাগিয়ে পূর্ব বর্ধমানের রায়না, আউশগ্রামের মতো কয়েকটি জায়গায় নীল-সবুজ রঙের রাস্তা তৈরি হয়েছে। ‘পথশ্রী’ প্রকল্প থেকে ১০৯ কোটি টাকা খরচ করে ৩৪৩ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়েছে। রাস্তা পাকা হওয়ায় উন্নত হয়েছে গ্রামের যোগাযোগও। গ্রামীণ হাওড়ায় পাকা রাস্তা দিয়ে খেত থেকে হাট-বাজারে ফসল নিয়ে যাওয়া সহজ হয়েছে। বাগনানের টোটোচালক হারুন রশিদ বলছেন, ‘‘গ্রামে ঢালাই রাস্তা হওয়ায় টোটো চালিয়ে আগের চেয়ে বেশি রোজগার করি।’’ পূর্ব মেদিনীপুরেও এক চিত্র। সেখানকার বাসিন্দা দুলাল ভুঁইয়া, ফাল্গুনী দাসেরাও বলেন, ‘‘আগে বর্ষায় কাদা পেরিয়ে জিনিস বিক্রি করতে যেতে খুব কষ্ট হত। এখন সমস্যা নেই।’’
যদিও গোটা রাজ্যে এমন পরিস্থিতি নয়। বরং ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে বার বার বিভিন্ন জায়গায় ‘দিদির দূত’ হয়ে গিয়ে জনবিক্ষোভের মুখে পড়ছেন তৃণমূলের নেতারা। ক্ষোভ দেখা গিয়েছে অন্য পরিষেবাগুলি নিয়েও। বিরোধীদেরও অভিযোগ, ‘কাটমানি সংস্কৃতি’র জন্যই বহু গ্রামে এমন অবস্থা। যদিও তৃণমূলের পাল্টা দাবি, সেই সব ক্ষোভ থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মসূচিতে গতি আনা হয়েছে। স্থানীয়দের একাংশেরও মত, গ্রামের উন্নয়নের যোগদানে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হয়। সেই উন্নয়নের কাজে রাজ্যের কিছু অঞ্চল এখন অগ্রণী। কিছু ক্ষেত্রে অভাব অভিযোগ অবশ্যই রয়েছে। তবে সে সব রাজ্যেই আছে। তার পরেও দল ও দুর্নীতির উপরে উঠে কিছু গ্রাম প্রধান উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
এমন যে গ্রাম প্রধানদের হাত ধরে গ্রামের সর্বাঙ্গীন ও পরিকাঠামোগত বিকাশ হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে থেকে আল্ট্রাটেক সিমেন্ট পরিবার বেছে নেবে ‘আল্ট্রাটেক যশস্বী প্রধান’। আল্ট্রাটেক সিমেন্ট দেশ জুড়ে এই বিকাশ ও নির্মাণকার্যে সহযোগিতা করে চলেছে। নিজেদের এই অভিজ্ঞতা, গুণমান এবং বিশ্বস্ততাকে পাথেয় করে পশ্চিমবঙ্গেও সকল গ্রাম প্রধানদের সার্বিক উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই সংস্থা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)