Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Supreme Court on CAA

নাগরিকত্ব: প্রশ্নের মুখে ‘সদিচ্ছা’

পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা এ রাজ্যের মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষের নাগরিকত্বের দাবি দীর্ঘ দিনের। মতুয়ারা অনেক দিন ধরে আন্দোলন করছেন। কেন্দ্র নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন (সিএএ) করেছিল কয়েক বছর আগেই।

—ফাইল চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র  
বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:০৮
Share: Save:

অসমে নাগরিকত্ব দেওয়া হলেও পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের কেন নাগরিকত্ব দেওয়া হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। দেশের শীর্ষ আদালতের এই পর্যবেক্ষণকে স্বাগত জানাচ্ছেন এ রাজ্যে বসবাসকারী মতুয়া উদ্বাস্তু ও শরণার্থী মানুষের একটা বড় অংশ। তাঁদের আশা, এ বার হয় তো কেন্দ্র দ্রুত তাঁদের নাগরিকত্ব দিতে পদক্ষেপ করবে।

পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা এ রাজ্যের মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষের নাগরিকত্বের দাবি দীর্ঘ দিনের। মতুয়ারা অনেক দিন ধরে আন্দোলন করছেন। কেন্দ্র নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন (সিএএ) করেছিল কয়েক বছর আগেই। মতুয়ারা আশান্বিত হয়েছিলেন। কিন্তু সিএএ আজও কার্যকর না হওয়ায় মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষের একটা বড় অংশই হতাশ, ক্ষুব্ধ। এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য নতুন করে তাঁরা আশা দেখছেন।

নাগরিকত্ব আইনের ৬-এ ধারা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অসমে আসা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হলেও কেন পশ্চিমবঙ্গে আসা শরণার্থীদের বাদ দেওয়া হল— জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের যখন অনেক বেশি লম্বা সীমান্ত রয়েছে, শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য কেন তা হলে অসমকেই কেন বেছে নেওয়া হল?

সুপ্রিম কোর্টের এই প্রশ্নকে স্বাগত জানাচ্ছেন মতুয়াদের একাংশ। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য যথার্থ। আসলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের এ রাজ্যের মতুয়া উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সদিচ্ছা নেই। থাকলে অনেক আগেই তাঁদের নাগরিকত্ব দিয়ে দিতে পারত। বিজেপি মতুয়া ও উদ্বাস্তুদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে আসছে। নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের ভাঁওতা দিয়ে আসছে।’’ মমতার দাবি, ‘‘এখন লোকসভা ভোট এসেছে, সে কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীদের মুখে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। সদিচ্ছা থাকলে কেন্দ্র সব মতুয়া উদ্বাস্তু শরণার্থীদের নিঃশর্ত নাগরিক ঘোষণা করে দিক। কিন্তু ওরা তা করবে না। কারণ, বিজেপি মতুয়াদের নিয়ে রাজনীতি করবে।’’

দিন কয়েক আগে ধর্মতলায় দলীয় কর্মসূচিতে এসে অমিত শাহ বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএএ-এর বিরোধিতা করছেন। সিএএ কার্যকর করতে দিচ্ছেন না। বলেছিলেন, ‘‘মমতাদিদি, সিএএ দেশের আইন। কেউ এটাকে রুখতে পারবে না। সিএএ আমরা চালু করবই।’’ তবে দিনক্ষণ জানাননি তিনি। ফলে ফের হতাশ হন মতুয়াদের অনেকে। কয়েক দিন আগে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র (টেনি) গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে এসে বলে গিয়েছিলেন, যত দিন না সিএএ কার্যকর হচ্ছে, তত দিন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ থেকে সঙ্ঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের দেওয়া কার্ড নিয়ে দেশের যে কোনও প্রান্তে মতুয়ারা নির্ভয়ে যাতায়াত করতে পারবেন। যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। প্রশ্ন তুলেছিলেন বিজেপিরই হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকার। তিনি জানিয়েছিলেন, একটি ধর্মীয় সংগঠনের পরিচয়পত্র কী করে নাগরিকত্বের প্রমাণ হতে পারে!

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়াদের ঠাকুরবাড়িতে এসে জানিয়েছিলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু হবে। বাস্তবে তা হয়নি।

সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নে মতুয়া ভক্ত বলাই বাড়ুই বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ শুনে পেয়ে ভাল লাগছে। আমরা চাই, দ্রুত নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। অনেক আগেই তা উচিত ছিল।’’ মতুয়াভক্ত স্বদেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার বয়স ৬৫। এ দেশেই আমার জন্ম। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সবই আছে। নিয়মিত ভোট দিই। নাগরিকত্ব দিলে নেব। কিন্তু আমার প্রশ্ন, আমি কি নাগরিক নই?’’

সুপ্রিম কোর্টের তোলা প্রশ্ন নিয়ে শান্তনু ঠাকুরের প্রতিক্রিয়া, ‘‘নাগরিকত্ব সংশোধিত আইনের ধারাগুলি আমার এখনও সম্পূর্ণ দেখা হয়নি। ফলে এ নিয়ে মন্তব্য করতে পারব না। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন আশ্বাস দিয়েছেন, তখন নিশ্চয়ই সিএএ কার্যকর হবে। মতুয়ারা এটা জানেন।’’ বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘‘মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই সিএএ। মতুয়ারা জানেন, একমাত্র কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তাঁদের নাগরিকত্ব দিতে পারে।’’

সিএএ প্রসঙ্গে তৃণমূল বরাবরই বলে আসছে, মতুয়ারা যেখানে ভোট দেন, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড আছে— সে ক্ষেত্রে তাঁদের নতুন করে নাগরিকত্ব নেওয়ার দরকার নেই। এ দিন সুপ্রিম কোর্টর প্রশ্ন প্রসঙ্গে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘মতুয়া উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব নিয়ে ভাঁওতা দিয়ে আসছে কেন্দ্র। কেন্দ্র ওঁদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Matua Community Bangaon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy