প্রতীকী চিত্র।
টানা বৃষ্টিতে ইতিমধ্যেই ভাঙড়, জীবনতলা-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় নিচু জমিতে জল জমতে শুরু করেছে। চাষিদের আশঙ্কা, পালং শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলো, মটরশুটি, সর্ষে-সহ রবিশস্যের প্রচুর ক্ষতি হতে পারে।
সোমবার ভাঙড়ের সাতুলিয়া, কচুয়া, পানাপুকুর এলাকা ঘুরে দেখা গেল, নিচু জমিতে জল জমে রয়েছে। আনাজ বাঁচাতে অনেকেই বাঁধাকপি, পালং শাক তুলে ফেলছেন। অনেকে আবার খেত থেকে জমা জল বের করার চেষ্টা করছেন।
ভাঙড়ের চাষি মুজিদ মোল্লা বলেন, ‘‘বৃষ্টির জন্য ফুলকপি এবং পালংশাকে পচন ধরবে। তার উপরে খেতে জল জমে গেলে অন্যান্য রবিশস্যের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।’’ পানাপুকুর গ্রামের চাষি আনোয়ার আলির কথায়, ‘‘এমনিতেই এ বছর পর পর অকাল ঝড়-বৃষ্টিতে চাষের ক্ষতি হয়েছে। নতুন করে জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি চাষ করেছিলাম। ফসল ওঠার মুখে আবার যে ভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তাতে ফুলকপিতে দাগ এসে গিয়েছে। ক্ষতি সামাল দিতে বাধ্য হয়ে খেত থেকে ফসল তুলে কম দামে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।’’ ক’দিন আগেও ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ, পোলেরহাট, সাতুলিয়া-সহ বিভিন্ন হাটে ফুলকপি প্রতি পিস পাইকারি দাম ছিল ১৫ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস পাইকারি দাম ছিল ১২-১৫ টাকা। বৃষ্টির কারণে চাষিরা ক্ষতি এড়াতে সেই ফুলকপি, বাঁধাকপি ৮-১০ টাকা প্রতি পিস বিক্রি করে দিচ্ছেন।
জেলা হর্টিকালচার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে রবি শস্য চাষ হয়। যা পরিস্থিতি, তাতে মনে করা হচ্ছে ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হতে পারে। শীতের মরসুমে অধিকাংশ ফসল ওঠার মুখে। তার মধ্যেই এই বিপর্যয়।
ভাঙড় ১ ব্লকে ২৪০০ হেক্টর জমিতে রবিশস্যের চাষ হয়। এর মধ্যে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। ব্লক এলাকায় প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে সর্ষে চাষ হয়। জমিতে জল জমলে অধিকাংশ খেতের সর্ষে চাষের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্যানিং ২ ব্লকের প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে মটরশুটি চাষ হয়। অধিকাংশ জমির মটরশুটি চাষের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলার ডেপুটি ডিরেক্টর অফ এগ্রিকালচার (এডমিন) অরুণকুমার বসু বলেন, ‘‘বৃষ্টির কারণে নিচু জমিতে জল জমার কারণে কিছু ক্ষেত্রে আনাজের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে জেলার অধিকাংশ জমির ধান প্রায় কাটা হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। প্রতিটি ব্লক থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন করা হচ্ছে।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার আনাজ আশপাশের জেলাগুলিতে তো বটেই, রাজ্যের বাইরেও যায়। শীতকালীন আনাজ ওঠার মুখে এই ক্ষয়ক্ষতির ফলে বাজারে কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। চাষিদের মতে, আপাতত কিছুটা অল্পদামে অনেকে অভাবী বিক্রি করছেন বটে, কিন্তু ফলন বেশ কিছু নষ্ট হওয়ার ফলে বাজারে জোগান কম থাকবে। ফলে দাম বাড়ার আশঙ্কা থাকছে।
জেলার এক কৃষি আধিকারিকের মতে, জোগান কমলে দাম বাড়বে, অর্থনীতির এই সহজ অঙ্ক তো বোঝাই যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কী ভাবে খোলা বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা দরকার।
সব মিলিয়ে, শীত পড়লেই বাঙালি যে ভাবে হাত খুলে শাকসব্জি খাওয়ার কথা ভাবে, এ বার বাজারদর তাতে কতটা সহায়ক থাকে, সে প্রশ্ন থাকছেই। শীত পড়লে সচরাচর আনাজ কিছুটা সস্তাতেই পেতে অভ্যস্ত বাঙালি ভোজনরসিক। এ বার সে সুযোগ কতটা মিলবে, তা নিয়েই এখন চিন্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy