অচল: নলকূপ চত্বরে ঘুঁটে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। ছবি: ঋষি চত্রবর্তী
সরকার থেকে দেগঙ্গাকে ‘আর্সেনিকপ্রবণ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে বহু দিন আগেই। অথচ, পরিত্রাণ মেলেনি সমস্যা থেকে।
অভিযোগ, এখনও অনেক জায়গায় জলের সঙ্গে মিশে আছে আর্সেনিক। কোথাও আবার জলই উঠছে না। বন্ধ হয়ে পড়ে আছে সরকারি কল। পরিস্রুত পানীয় জলের অভাবে দিন কাটাচ্ছেন বাসিন্দারা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভোট এলে জনপ্রতিনিধিরা ফিতে কাটেন, প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ভোট মিটলে তাঁদের আর দেখা মেলে না। গত কয়েক বছর ধরে পাইপ বসানোর কাজ চললেও এখনও কাজ শেষ হয়নি।
উত্তর ২৪ পরগনার ২২টি ব্লকের ২১টিই আর্সেনিকপ্রবণ। গত সাত দশক ধরে ব্লকের বহু মানুষের শরীরে মিলেছে আর্সেনিকের ক্ষতচিহ্ন। মৃত্যুর সংখ্যা শতাধিক। বাম আমলে এখানকার কুণ্ডুপাড়ায় ৫ জনের মৃত্যু হয়। সে সময়ে নড়েচড়ে বসে সরকার। জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, বাম আমলে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছনোর পাইপ বসানোর পদক্ষেপ করা হয়।
২০১৪ সালে আর্সেনিক বিশেষজ্ঞ দামোদর সারেঙ্গির নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল দিল্লি থেকে দেগঙ্গা ঘুরে দেখেন। কথা বলেন আক্রান্তদের সঙ্গে। খোঁজ নেন, কত জনের বাড়িতে সেই জল পৌঁছেছে।
বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করে জেলাকে আর্সেনিকমুক্ত করতে পদক্ষেপ করে বর্তমান সরকার। দেগঙ্গায় বসানো হয় জলের প্ল্যান্ট। পাশাপাশি, নদিয়া জেলার চাকদা এবং নৈহাটি থেকে গঙ্গার জল আনতে পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয় কয়েক বছর আগে।
জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, ২০২১ সালের মধ্যে দেগঙ্গা ছাড়াও উত্তরের আর্সেনিকপ্রবণ ব্লকগুলিতে সেই জল সরবরাহের কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি।
প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০২০ সালে দেগঙ্গা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা মতো পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প দ্রুত রূপায়ণের নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। বিচারপতি এসপি ওয়াংদি ও বিশেষজ্ঞ সদস্য নাগিন নন্দার বেঞ্চ দ্রুত কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেয়। আদালতকে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর জানায়, ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পগুলির কাজ শেষ হবে। আদালত এই সময়সীমা আরও কমিয়ে আনার কথা বলে। তবে ২০২৩ সালে এসেও দেগঙ্গা ব্লকের সব মৌজায় পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার পাইপ বসাতে পারেনি সরকার।
স্থানীয় বাসিন্দা কুমারেশ সরকার বলেন, ‘‘বাম আমল থেকে শুনছি, জল আসবে পাইপে। তৃণমূল এসে একই কথা বলছে। কিন্তু আজও সব গ্রামে জল পৌঁছয়নি। বন্ধ হওয়া গভীর নলকূপগুলি দিয়ে জল ওঠে না। অনেক বার ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু অনেক কলের জলই ব্যবহারের অযোগ্য।’’
আর এক বাসিন্দা আজিবুল হোসেন বলেন, ‘‘আর্সেনিক নিয়ে সরকার ভাবে না। কী জল খাচ্ছি জানিই না। বাম-তৃণমূল সকলেই শুধু ভোটের আগে আশ্বাস দেয়। কাজ কবে হবে জানি না।’’
এ বিষয়ে দেগঙ্গার বিধায়ক রহিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘কাজ চলছে। শীঘ্রই সকলের বাড়ি জল পৌঁছে দেবে সরকার। ইতিমধ্যে বহু গ্রামে জল পৌঁছে গিয়েছে। কিছু মৌজা এখনও বাকি আছে।’’
যদিও পাইপ বসানোর কাজের দায়িত্বপ্রাপ্তদের একাংশের মতে, চলতি বছরেও দেগঙ্গার সব বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়া রীতিমতো চ্যালেঞ্জ। সে ক্ষেত্রে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করতে হবে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ জ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জলের ট্যাঙ্ক করতে সময় লাগে। সে কারণে দেরি হচ্ছে। চেষ্টা করছি, চলতি বছরে শেষ করার। তবে ২০২৪ সালের মধ্যে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে যাবেই। এলাকার গভীর নলকূপগুলি জেলা পরিষদ বসিয়েছিল। রক্ষণাবেক্ষণ করে পঞ্চায়েত। তহবিলে অর্থ সঙ্কট থাকায় সংস্কার করা যায়নি। চেষ্টা চলছে অন্য ব্যবস্থা করার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy