Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Panchayat Election

ঘরে বাইরে চাপ কাটাতেই কি জনসংযোগে শান্তনু, উঠছে প্রশ্ন

মন্ত্রীর এই জনসংযোগ কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, শান্তনুর উপর ঘরে বাইরে ক্রমশ চাপ বাড়ছে।

দুপুরের খাওয়া সারছেন শান্তনু ঠাকুর। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

দুপুরের খাওয়া সারছেন শান্তনু ঠাকুর। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৩৫
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটের আগে জনসংযোগে নেমে পড়লেন বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। সোমবার দুপুরে বাগদার কুঠিবাড়ি এলাকায় যান শান্তনু। সেখানে নন্দরানি সিংহ নামে এক আদিবাসী মহিলার বাড়িতে দুপুরে খাওয়াদাওয়া করেন। এলাকার মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন তিনি। শোনেন তাঁদের অভাব অভিযোগ।

মন্ত্রীর এই জনসংযোগ কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, শান্তনুর উপর ঘরে বাইরে ক্রমশ চাপ বাড়ছে। অনেকেই মনে করছেন, দলের একাংশের সঙ্গে শান্তনুর দূরত্ব বেড়েছে। তার উপর সিএএ কার্যকর না হওয়ায় মতুয়াদের কাছেও প্রশ্নের মুখে পড়ছেন সাংসদ। এসব কাটাতেই জনসংযোগ শুরু করেছেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি রামপদ দাসের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে শান্তনুর। শান্তনু ও রামপদকে কেন্দ্র করে বনগাঁয় বিজেপি এখন আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। কোনও দলীয় কর্মসূচিতেই রামপদ ও শান্তনুকে একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে না। কিছুদিন আগে গাইঘাটার ঠাকুরনগরে সভা করতে এসেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সভাস্থলের কাছেই থাকেন শান্তনু এবং তাঁর দাদা গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর। কিন্তু সুকান্তের সভায় দু’জনকে দেখা যায়নি। আবার দিন কয়েক আগে সিএএ-এর সমর্থনে ঠাকুরনগরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে এসে সভা করেন শান্তনু। সেখানে ব্রাত্য ছিলেন সুকান্ত ও রামপদরা।

দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, রামপদকে নিয়ে গোড়া থেকেই আপত্তি ছিল শান্তনুদের। সভাপতি পদ থেকে রামপদকে সরানোর দাবি করা হলেও, নেতৃত্ব সেই দাবি মানেনি। ফলে বনগাঁয় দলের উপর শান্তনুর রাশ আলগা হয়েছে। তা থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত।

পাশাপাশি, এই রাজ্যে এখনও সিএএ কার্যকরী না হওয়ায় মতুয়াদের একাংশের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। ঠাকুরনগরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মতুয়াদের দ্রুত নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন। মতুয়ারা তা বিশ্বাসও করেছিলেন। লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে তার সুফল মিলেছিল বিজেপির। মূলত মতুয়াদের সমর্থনেই রাজনৈতিক উত্থান হয়েছিল শান্তনুর। কিন্তু এখন সেই মতুয়াদের অনেকেই হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। এদিকে তৃণমূল বারবারই বলছে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড থাকলেই নাগরিক। এই কথায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন অনেকেই। তৃণমূলের সভায় মতুয়াদের উপস্থিতি বাড়ছে। শান্তনু অবশ্য জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের আগেই সিএএ কার্যকর করা হবে। করোনা পরিস্থিতি ও সুপ্রিম কোর্টে মামলার কারণে সিএএ কার্যকর করতে দেরি হচ্ছে।

সাংসদকে নিয়ে নানা অভিযোগও রয়েছে বনগাঁ মহকুমার মানুষের। অনেকেরই অভিযোগ, সাংসদকে এলাকায় দেখা যায় না। প্রয়োজনেও তাঁকে পাওয়া যায় না। শংসাপত্র পেতে বিস্তর কাঠ খড় পোড়াতে হয়। করোনা-আমপানেও তাঁকে পাশে পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ।

এই পরিস্থিতিতেই নিজের অবস্থান পাকা করতে শান্তনু মাঠে নেমেছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এ দিন তিনি অবশ্য বলেন, “কারও বাড়িতে এসে খাওয়াটা আমার কাছে নতুন কোনও বিষয় নয়। যখন রাজনীতি করতাম না, তখনও আমাদের সামাজিক সংগঠনের কাজে এ কাজ অনেক করেছি। ভবিষ্যতেও করব। করোনা-আমপানে আমি ছিলাম কিনা, সেটা মানুষ জানে।” সিএএ প্রসঙ্গে শান্তনুর দাবি, “২০২৪-এর আগে সিএএ কার্যকর হবেই। মতুয়ারা এটা বিশ্বাসও করেন। তাঁরা জানেন বিজেপি আইন করেছে। নাগরিকত্ব তারাই দেবে।”

তৃণমূলকে নিশানা করে শান্তনু বলেন, “তৃণমূল ঠাকুরবাড়ি নিয়ে জঘণ্য রাজনীতি করেছে। সেই কারণে তাদের বিদায় জানানো হয়েছে। ওদের জন্য ঠাকুরবাড়ির কয়েকজনের জীবনহানি হয়েছে। ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ঠিক সময়ে ওরা টের পাবেন।”

তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “২০১৯ সালের পর থেকে শান্তনুকে বনগাঁর মানুষ দেখেননি। মানুষ ওঁকে বর্জন করেছেন। কোনও উন্নয়ন করেননি। ভোটের আগে জনসংযোগের নামে নাটক করছেন। মানুষকে ওঁকে ছুড়ে ফেলে দেবেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayat Election Bangaon Shantanu Thakur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy