Advertisement
E-Paper

জোড়া মৃত্যুর স্মৃতি বইছে আধপোড়া বাড়ি

বিপর্যয়ের চিহ্ন ঘরের আর এক কোণ। সেখানে জানলার পাশে পোড়া কাপড়ের টুকরো। ঘরে ঢুকতে গিয়ে চোখে পড়ে, কালো পোড়া দাগ ধরা আসবাস, দরজার পাল্লা।

এই বাড়িতেই মিলেছিল দাস দম্পতির পোড়া দেহ। নিজস্ব চিত্র

এই বাড়িতেই মিলেছিল দাস দম্পতির পোড়া দেহ। নিজস্ব চিত্র

সমরেশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:১৭
Share
Save

ঘরের এক কোণে ভাঙা টালি, আধপোড়া কাঠের দরজার ফ্রেম। অন্য কোণে দুটো প্লাস্টিকের চেয়ার। ত্রিপলের নীচে কিছু জিনিস ঢাকনা দেওয়া। ঘরের সামনের বারান্দায় ভাঙা অ্যাসবেস্টস ও বাঁশের টুকরোয় আগাছা জন্মেছে। টালির চাল লতাগুল্মে ছেয়ে গিয়েছে। চালের উপরে একা দাঁড়িয়ে অ্যান্টেনা।

বিপর্যয়ের চিহ্ন ঘরের আর এক কোণ। সেখানে জানলার পাশে পোড়া কাপড়ের টুকরো। ঘরে ঢুকতে গিয়ে চোখে পড়ে, কালো পোড়া দাগ ধরা আসবাস, দরজার পাল্লা। ঘর-লাগোয়া দরমার বেড়ায় পোড়া কালো দাগ।

গত পঞ্চায়েত ভোটের আগের দিন কাকদ্বীপের বুধাখালি পঞ্চায়েতের সিপিএম কর্মী দেবু দাস ও তাঁর স্ত্রী উষা দাসের আধপোড়া দেহ উদ্ধার হয়েছিল এই বাড়ি থেকেই। তাঁদের মুখ-হাত কাপড়ে বাঁধা ছিল।

জোড়া খুনের ঘটনায় আন্দোলন শুরু করে সিপিএম। গ্রেফতার হয়েছিল কয়েক জন সিপিএম-তৃণমূল কর্মী। পরে সকলে জামিনে মুক্ত হয়। কিছু দিন আগে কলকাতা হাই কোর্ট আইপিএস দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে সিট গঠন করেছে। ফের তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেবে সিট।

এই আবহেই আবার পাঁচ বছর পরে বুধাখালিতে পঞ্চায়েত ভোট। স্বাধীনতার পর থেকে সিপিএমের দখলে ছিল এই পঞ্চায়েত। ২০১৮ সালে ভোটে পালাবদল হয়। বুধাখালি এখন তৃণমূলের দখলে।

১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে নেমে নিউ বকখালি যেতে ইটপাতা রাস্তা ধরে মাইলখানেক এগোলে মুড়িগঙ্গা নদীর পাশেই দেবু দাসের বাড়ি। খোঁজ-খবর করার সময়ে এগিয়ে এলেন বছর সত্তরের হরেন হালদার। বললেন, ‘‘আজও প্রকৃত দোষীরা ধরা পড়ল না। ওদের আত্মা শান্তি পাবে না, যতক্ষণ না দোষীরা সাজা পায়!’’

হরেন বলেন, ‘‘যে দিন এই ঘটনা ঘটেছিল, সে দিন আমি পায়ের অপারেশন করে বাড়ি এসেছি। হাঁটাচলা ঠিক করতে পারি না। রাত প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে লোকে আগুন আগুন বলে চিৎকার করছিল। আমার বাড়ির সামনে দিয়ে ছুটে যাচ্ছিল অনেকে। এক জন এসে বলল, দেবুর বাড়িতে আগুন লেগেছে। স্বামী-স্ত্রী আগুনে পুড়ছে।’’

দেবুর ভাই শ্রীকান্ত দাস জানালেন, ঘটনার দিন দেবুর একমাত্র ছেলে দীপঙ্কর কাকদ্বীপে ক্যাটারিংয়ের কাজ শেষ করে মায়ের জন্য দই-মিষ্টি নিয়ে ফিরছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি এসে দেখেন, কোথাও আগুন লেগেছে। একটু এগোতেই বুঝতে পারেন, পুড়ছে তাঁদের বাড়ি। বাড়ির ভিতরে ঢুকে দেখেন, বাবা-মায়ের গায়ে আগুন ধরে গিয়েছে। উদ্ভ্রান্তের মতো সে দিন ছুটে এসে পাড়ার লোকজনকে ডেকে এনেছিলেন দীপঙ্কর। তবে কাউকে বাঁচানো যায়নি।

দীপঙ্কর সে সময়ে থানায় অভিযোগ করেছিলেন, বাবা-মাকে হাত-পা বেঁধে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। একই অভিযোগ ছিল প্রতিবেশীদেরও। খুনের অভিযোগ তুলে তৃণমূলকে দায়ী করেন দীপঙ্কর। যদিও পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে পরে জানায়, শর্টসার্কিট থেকে দুর্ঘটনা। গ্রামের লোকজন অবশ্য সে সময়ে জানিয়েছিলেন, অগ্নিকাণ্ড যখন ঘটে, সে সময়ে এলাকায় লোডশেডিং চলছিল।

দীপঙ্কর এখন পেশায় আইনজীবী। শ্রীকান্ত বলেন, ‘‘দাদার খুনিরা শাস্তি পায়নি। শুনছি তদন্ত চলছে। আমাদের ছেলে উকিল হয়েছে। সুবিচার এ বার পাব নিশ্চয়ই।’’

কলকাতাতেই থাকেন দীপঙ্কর। মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়িতে এসে জেঠুর বাড়িতে ওঠেন। ফোনে জানালেন, রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকুক। মানুষের ভাল-মন্দ দেখার জন্য রাজনীতি। যে ঘটনা ঘটে গিয়েছে, আবার যেন ফিরে না আসে।

দীপঙ্করের কথায়, ‘‘কলকাতা হাই কোর্ট আইপিএস দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে সিট গঠন করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল। কিন্তু সেই রিপোর্ট জমা পড়ার আগে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সিট গঠনের অর্ডারের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে আপিল করা হয়। সেই মামলার শুনানি ছিল বুধবার। শুনানি হয়নি। পরবর্তী শুনানির তারিখ ১ মার্চ।’’

স্থানীয় তৃণমূল নেতারা পুরনো ঘটনাটি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তৃণমূলের সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলার যুব সভাপতি বাপি হালদার বলেন, ‘‘মামলাটি বিচারাধীন। এ বার পঞ্চায়েত ভোট শান্তিপূর্ণই হবে। গতবারের মতো কোনও ঘটনা ঘটবে না। আমরা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ভোট করব।’’

পঞ্চায়েতে ভোট নিয়ে কী ভাবছেন দীপঙ্কর? ভোট দিতে আসবেন এলাকায়?

দীপঙ্কর জানান, এখনও এ নিয়ে কিছু ভাবেননি। তবে গ্রামে এলেই পুরনো ভয়ানক সেই ঘটনা তাঁকে ব্যথিত করে বলে জানালেন। দীপঙ্করের কথায়, ‘‘যে রাজনীতি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়, সেই রাজনীতিতে না থাকাই ভাল।’’

kakdwip CPIM dead body

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।