সম্প্রতি মুড়িগঙ্গা নদীতে দুর্ঘটনায় দু’টুকরো হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশি বার্জ। ডুবন্ত জাহাজ থেকে ফ্লাই অ্যাশ মুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশি শিপিং এজেন্সি এ দেশের প্রশাসনকে জানিয়েছিল, তারা খালি দু’টি বার্জ এনে ডুবন্ত জাহাজ থেকে ছাই খালি করে বাংলাদেশ নিয়ে যাবে। কিন্তু তা তারা না করে ফ্লাই অ্যাশ নদীতে ফেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে (তার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার)।
বিষয়টি জানতে পেরে এ বার নড়েচড়ে বসল জাতীয় পরিবেশ আদালত। স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে আদালত। জানা গিয়েছে, চলতি সপ্তাহে পরিবেশ আদালতের তরফে এই মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলায় রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক দফতরকে যুক্ত করা হয়েছে।
প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু দফতর, অতিরিক্ত মুখ্য সচিব বন ও পরিবেশ বিভাগ পশ্চিমবঙ্গ, জেলাশাসক দক্ষিণ ২৪ পরগনা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ-সহ একাধিক পক্ষকে এই মামলায় যুক্ত করেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত।
মৎস্যজীবীদের একাংশের অভিযোগ, জাহাজের কর্মীরা অন্ধকারে লুকিয়ে পাম্পের সাহায্যে ছাইয়ে জল মিশিয়ে নদীতে ফেলে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এই ছাইয়ে আর্সেনিক, পারদ, ক্যাডমিয়াম এবং সীসার মতো ভারী ধাতু থাকে, যা নদীর জলকে দূষিত করতে পারে। জলজ জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। মাছের মাধ্যমে এ সব রায়াসনিক মানুষের খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করতে পারে।
ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সঞ্জীব সাগর বলেন, ‘‘দ্বীপ এলাকার চারদিকে নদীর জল, মাঝে মধ্যে ঘোলা অংশ দেখা যাচ্ছে। একটি জাহাজ এবং দু’টি নৌকো ঘটনাস্থলে পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটিকে খালি করছে, টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।’’
সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘যদি সত্যিই ফ্লাই অ্যাশ নদীতে ফেলা হয়, তা হলে তা অত্যন্ত বিপজ্জনক।’’
পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালত এই বিষয়ে একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে বলে জানতে পেরেছি। আমরাও বিভিন্ন জায়গায় চিঠি পাঠিয়েছি। ১৯৭৪ সালের জলদূষণ ও পরিবেশ দূষণ আইনে বাংলাদেশি ফিশিং এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)