রাত বাড়লেই শুনশান হয়ে পড়ে দু’টি হাসপাতালের মধ্যবর্তী রাস্তা ও করিডোর। নিজস্ব চিত্র
সন্ধে গড়িয়ে রাত নামলেই নানা ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয় রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের।
বসিরহাটে দু’টি হাসপাতাল। জেলা হাসপাতাল এবং সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। দুই হাসপাতালের মধ্যে পাঁচশো মিটারের দূরত্ব। মাঝে আলো ঝলমলে রাস্তা। কিন্তু রাতপাহারার ভাল ব্যবস্থা নেই বলে জানালেন অনেকে। মদ্যপদের আনাগোনা চোখে পড়ে। বেশি রাতে জরুরি প্রয়োজনে বা ওষুধের খোঁজে যেতে হলে ভয়ে ভয়ে থাকেন অনেকে।
দুই হাসপাতালের মধ্যে যাতায়াতের জন্য করিডরও আছে। তবে রাতে সেই করিডর চলে যায় গাড়ি এবং হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের আত্মীয়দের দখলে। জেলা হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর আত্মীয় স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘সাহেবখালি থেকে এসেছি। থাকার জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে ছাউনির তলায় মশারি টাঙিয়ে শুয়ে পড়ি।’’ বাকিদের পক্ষে রাতে করিডর দিয়ে যাতায়াত করা যে কারণে মুশকিল হয়ে পড়ে।
এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘নির্জন রাস্তা পেরিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল যেতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করি। তা ছাড়া, একজন সুপারের পক্ষে দু’টি হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা খুবই চাপের। রাত বাড়লে বাইরের মানুষ রোগীদের ওয়ার্ডেও ঢুকে পড়ে।’’
এক নার্সের কথায়, ‘‘রাতে জরুরি প্রয়োজনে নার্স, আয়াদেরও এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে যেতে হয়। বেশ খানিকটা নির্জন পথ পেরোতে হয়। একমাত্র ন্যায্যমূল্যের দোকান ছাড়া রাত ১২টার মধ্যে সমস্ত দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জীবনদায়ী ওষুধের জন্য অনেক সময়ে পরদিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।’’
হাসপাতাল দু’টিতে সমস্ত রকম চিকিৎসা পরিকাঠামো আছে। অথচ, রাত হলে অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসক এবং টেকনিশিয়ানের অভাবে সঠিক পরিষেবা মেলে না বলে অভিযোগ। খিছু চিকিৎসক হাসপাতালের কোয়ার্টারে থাকেন না। ‘কলবুক’ পাঠানোর পরে অনেক সময়ে রাতে ডাক্তার আসেন না বলেও অভিযোগ অনেকের। সকালের অপেক্ষায় থাকতে হয়।
চিকিৎসকের অভাবেই রোগীকে অনেক সময়ে রাতের দিকে কলকাতার ‘রেফার’ করা হয় বলে অভিযোগ রোগীর পরিবারের।
রাত হলে বন্ধ হয়ে যায় ইসিজি, এক্সরে। রাতে অনেক সময়ে বাড়তি টাকা খরচ করে বাইরে থেকে এই সব পরীক্ষা করান অনেকে। না হলে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায়ান্তর নেই।
ফতেমা বিবির বাড়ি বাঁকড়া গ্রামে। আত্মীয় ভর্তি থাকায় হাসপাতালে রাতে থাকতে হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এত দালাল, মদ্যপ এবং উটকো লোকের দৌরাত্ম্য বাড়ে। ভয়ে ঘুম আসে না।’’ এক রোগীর আত্মীয় স্বপ্না দাসের কথায়, ‘‘রাতে চিকিৎসকদের দেখা বিশেষ পাওয়া যায় না।’’ বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাসপাতালে নিরাপত্তার দিকটি দেখা হচ্ছে। পুলিশকে বলব, তারা যেন দু’টি হাসপাতালের মধ্যে টহল দেন।’’
দু’টি হাসপাতালের মাঝে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর। স্বাস্থ্য জেলার আধিকারিক রবিউল ইসলাম গায়েন বলেন, ‘‘সব চিকিৎসকই সপ্তাহে অন্তত পাঁচ-ছ’দিন থাকেন হাসপাতালে। কলবুক পাঠালে কেউ আসেন না, এ কথা ঠিক নয়।’’ দু’টি হাসপাতালের মাঝের রাস্তায় পাহারা বাড়ানো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। রাতে যাতে ইসিজি, এক্স-রে-সহ সব পরিষেবা মেলে, তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy