গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দুই প্রতিবেশী। এক পরিবার কুকুর ভীষণ ভালবাসে। অন্য পরিবারের কাছে চতুষ্পদ প্রাণীটি ততটাই বিরক্তির। এক পথকুকুরকে মারধর করার অভিযোগ ঘিরে দুই প্রতিবেশীর দ্বন্দ্বে ঢুকে পড়েন কুকুরপ্রিয় পরিবারের পরিচিত তরুণ। চেন্নাই আইআইটি-র ওই ছাত্র ফোনে প্রেমিকার কাছে পুরো ঘটনা শুনে তাঁর বাড়িতে চলে আসেন। তার পর এই মারধরের ঘটনা ঘটেছে। সোনারপুর কুকুরকাণ্ডে এমনই তথ্য পেল পুলিশ। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত অর্চন ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে সোনারপুর থানার পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সোনারপুরে চৌহাটি এলাকার বাসিন্দা গোবিন্দ অধিকারী এবং সুভাষ দেবনাথ। গোবিন্দ বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। তবে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্বের শুরু পথকুকুরকে খাওয়ানো নিয়ে। দেবনাথ পরিবারের সদস্যেরা বাড়ির সামনে পথকুকুরদের খাওয়াতেন। সেই কুকুরেরা মাঝেমধ্যেই অধিকারী বাড়িতে ঢুকে যেত। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বেশ কয়েক বার অশান্তি হয়েছে। কিন্তু, দিন কয়েক আগে একটি পথকুকুরকে মারধর ঘিরে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়। অভিযোগ, অধিকারীদের বাড়িতে একটি কুকুর ঢুকে যাওয়ায় তাকে মারা হয়। চেন্নাইতে বসে ওই খবর পান পশুপ্রেমী অর্চন। তাঁর বাড়ি সোনারপুরের সুভাষগ্রামে। দেবনাথ পরিবারের মেয়ে স্মৃতি দেবনাথের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তাঁর। ফোনে প্রেমিকার মুখে পুরো ঘটনার বিবরণ শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে যান অর্চন। প্রেমিকা কান্নাকাটি করায় আইআইটি পড়ুয়া সিদ্ধান্ত নেন বাড়ি ফিরবেন। তার পরেই ভোররাতের এই ঘটনা।
শুক্রবার গভীর রাতে গোবিন্দ, তাঁর স্ত্রী নমিতা অধিকারী এবং পুত্র গৌরব অধিকারীর উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে অর্চন হামলা করেন বলে অভিযোগ। অধিকারী পরিবারের তিন সদস্য এখন এমআর বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা তদন্তসাপেক্ষ। যদিও স্থানীয় বিজেপি নেতা দেবনাথ চক্রবর্তীর দাবি করেছেন, লোকসভা ভোটের সপ্তাহখানেক আগে একটি কুকুর নিয়ে দুই বাড়ির মধ্যে অশান্তি হয়েছিল। বিষয়টি তখনই থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘ভোটে গোবিন্দ আমাদের দলের পোলিং এজেন্ট হয়েছিলেন। আমাদের ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়েও ছিল। যাঁরা গোবিন্দদের মেরেছেন, তাঁরা তৃণমূল করেন। অশান্তির সময়ে তাঁরা হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা তৃণমূল করি, আমরা দেখে নেব।’ বাইরে থেকে কয়েক জন এসেও হুমকি দিয়েছিলেন।’’ যদিও তৃণমূল সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর রাজীব পুরোহিত দাবি করেছেন, এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। পারিবারিক বিবাদ থেকে এই ঘটনা ঘটেছে। তিনি পুলিশি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে এখনও পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে, তাতে পুরো গন্ডগোল একটি পথকুকুরকে মারধর করাকে কেন্দ্র করে। দিন দুয়েক আগে পুলিশের মধ্যস্থতায় দুই পরিবারের মধ্যে গন্ডগোল মিটমাটের চেষ্টাও হয়েছিল। তার মধ্যে শুক্রবার রাত ৩টে নাগাদ হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে খবর, ধৃত অর্চন চেন্নাই আইআইটি-র প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। দেবনাথ পরিবারের সদস্যা স্মৃতির সঙ্গে তাঁর প্রণয়ের সম্পর্ক। স্মৃতি সোনারপুর মহাবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। প্রেমিককে অধিকারী পরিবারের লোকজনের ‘খারাপ ব্যবহারের’ কথা জানিয়েছিলেন। ফোনে কান্নাকাটিও করেন। সেটা শুনেই চেন্নাই থেকে বাড়ি চলে আসেন অর্চন।
স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, দেবনাথ পরিবারে যাতায়াত রয়েছে অর্চনের। ফলে এলাকা সম্পর্কে তাঁর জানাশোনা রয়েছে। অর্চনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে, তিনি গভীর রাতে স্মৃতির এলাকায় যান। অধিকারীদের নির্মীয়মাণ বাড়িতে ঢোকার ক্ষেত্রে তাঁকে কোনও বাধা পেতে হয়নি। প্রথমে ওই পরিবারের ছেলে গৌরবের উপর হামলা চালান তিনি। তার পর গৌরবের বাবা-মাকে আক্রমণ করেন। ওই পরিবারের আর এক সদস্য গার্গী অধিকারী ওই সময় একই ঘরে ছিলেন না। তবে বাবা, মা এবং ভাইয়ের চিৎকারে তিনি পাশের ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। ঘুম থেকে উঠে বাবা-মা-ভাইকে ওই অবস্থায় দেখে চিৎকার শুরু করেন তিনি। তখন প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। খবর দেওয়া হয় সোনারপুর থানায়। এই ঘটনা নিয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কুকুরকে মারধর করা নিয়ে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যাচ্ছে।’’ তিনি এই হামলার নেপথ্যে রাজনৈতিক কোনও কারণ এখনও খুঁজে পাননি বলে জানিয়েছেন। পুলিশ সুপারের কথায়, ‘‘ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এই ঘটনা।’’
শেষ পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, অভিযুক্তকে ছ’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy