বুধবার বিকেলে হাবড়ার রেলবস্তিতে আগুন লেগে ৩৩টি টিন-টালি-দরমার ঘর পুড়েছে। যাবতীয় জিনিসপত্রও পুড়ে গিয়েছে। কার্যত সর্বস্ব হারিয়ে বহু মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও হাবড়ার রেলবস্তিতে আগুন লাগার কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গেল। আগুন লাগার পরে দমকল বাহিনীর ঘটনাস্থলে পৌঁছতে বেশ কিছুটা সময় লেগে গিয়েছিল বলে অভিযোগও উঠেছে। একই সঙ্গে, হাবড়া দমকলের পরিকাঠামোয় খামতির দিকটিও আলোচনায় উঠে এসেছে।
বুধবার বিকেলে হাবড়ার রেলবস্তিতে আগুন লেগে ৩৩টি টিন-টালি-দরমার ঘর পুড়েছে। যাবতীয় জিনিসপত্রও পুড়ে গিয়েছে। কার্যত সর্বস্ব হারিয়ে বহু মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকে জানালেন, বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ আগুন লাগলেও হাবড়া দমকল স্টেশন থেকে একটি গাড়ি এসে জল নেভানোর কাজ শুরু করে ৪টে ৫৪ মিনিট নাগাদ। হাবড়া দমকল স্টেশন স্থানীয় জয়গাছি এলাকায়। সেখান থেকে ঘটনাস্থল দেড় কিলোমিটারেরও কম পথ। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এইটুকু পথ পেরিয়ে আসতে কেন ২০-২৫ মিনিট সময় লাগবে!
বাসিন্দারা অনেকে আরও জানিয়েছেন, হাবড়া দমকল স্টেশন থেকে একটি গাড়ি আসার প্রায় ৪০ মিনিট পরে দ্বিতীয় গাড়ি আসে। অভিযোগ, দমকল বাহিনীর দ্বিতীয় গাড়ির জন্য কোনও চালক ছিলেন না। প্রথম গাড়ির চালককে বাইকে করে স্টেশনে পাঠিয়ে দ্বিতীয় গাড়ি আনানো হয়। এ সব করতে গিয়ে সময় কেটে যায়। অভিযোগ, অশোকনগর থেকেও দমকলের গাড়ি আসতেও বেশ খানিকটা সময় লেগে গিয়েছিল।
হাবড়া দমকল স্টেশন সূত্রে জানানো হয়েছে, মানুষজন ফোন করে আগুন লাগার দু’টি জায়গার কথা বলেছিলেন। সেই বিভ্রান্তির জেরেই ঘটনাস্থলে গাড়ি পৌঁছতে কিছুটা দেরি হয়। অশোকনগরের গাড়িও অন্যত্র চলে গিয়েছিল।
হাবড়া দমকল স্টেশনে এখন ৪ জন চালক আছেন। প্রয়োজন মোট ৯ জন। এখন ৪ জন চালকের মধ্যে একজন করে একই সময়ে ডিউটিতে থাকেন। প্রয়োজন হলে আর একজনকে ডেকে নেওয়া হয়।
অভিযোগ, অশোকনগর থেকে গাড়ি আসতে দেরি হয়েছে, কারণ, খবর পাওয়ার পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সেখানকার কর্মীরা।
স্থানীয় বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘দমকল মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। হাবড়া দমকল স্টেশন গাড়ির চালকের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখন থেকে কোথাও আগুন লাগলে যাতে নির্দেশের অপেক্ষা করতে না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
কিন্তু কেন লাগল আগুন?
পুরপ্রধান নারায়ণ সাহা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে আমরা জানতে পেরেছি, শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছিল একটি বাড়িতে। সেই বাড়িতে বাইক ছিল। সেটি ফেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।’’ বাড়িটি ভ্যানচালক অজয়কুমার দাসের। তাঁর ছেলের একটি বাইক ঘরে ছিল। অজয় বলেন, ‘‘ঘটনার সময়ে আমরা কেউ বাড়িতে ছিলাম না। ঘরে তালা দেওয়া ছিল। সব কিছু পুড়ে গিয়েছে। কোন বাড়িতে প্রথম আগুন লেগেছে, তা বলতে পারব না।’’
প্রতিবেশী কয়েকজন মহিলা জানালেন, অজয়ের বাড়ি থেকে ধোঁয়া-আগুন দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। ওই বাড়িতেই প্রথমে সকলে আগুন নেভানোর চেষ্টায় হাত লাগান। তবে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের একটি সূত্র আবার জানাচ্ছে, শর্টসার্কিটের পাশাপাশি কেউ রান্না করছিলেন। সেখান থেকে আগুন ছড়িয়ে থাকতে পারে। পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘আগুন লাগার কারণ স্পষ্ট নয়। দমকল তদন্ত করছে। রিপোর্ট দিলে তখন জানা যাবে।’’
প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস আগুন নেভানোর কাজে প্রথম থেকেই বাসিন্দাদের সঙ্গে ছিলেন। দমকল বাহিনীর সঙ্গেও তাঁকেও জল কাজে হাত লাগাতে দেখা যায়। নীলিমেশ বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলের পাশেই ছিল একটি পেট্রল পাম্প। আমরা চেষ্টা করেছিলাম, সেখানে যেন আগুন ছড়িয়ে না পড়ে।’’
তবে কী ভাবে আগুন লাগল, তা জানতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ আগ্রহী নন। তাঁরা চাইছেন, সরকার পাশে দাঁড়াক। ভবিষ্যতে আগুন লাগলে যেন দ্রুত নেভানোর ব্যবস্থা থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy