Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Teacher

‘মায়ের মতো ভাল’, বদলি হওয়া প্রধানশিক্ষিকাকে ছাড়তে নারাজ পড়ুয়া এবং অভিভাবকেরা! বিক্ষোভ

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নামখানা ব্লকের দক্ষিণ চন্দ্রনগর মোক্ষদাময়ী অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। পড়ুয়ার সংখ্যা ২০০-র কাছাকাছি। দীর্ঘ ১৭ বছরে ওই স্কুলে শিক্ষকতা করছেন মিনতি মণ্ডল।

Guardians and school children protest as Head Teacher transfers to another school

প্রধানশিক্ষিকা মিনতি মণ্ডলকে ঘিরে অভিভাবকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
নামখানা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ১১:৩৩
Share: Save:

‘‘মিনতি ম্যাডামকে কিছুতেই যেতে দেব না। দেখি কী ভাবে যান উনি!’’ এক বার নয়, বার বার জোরে জোরে চেঁচিয়ে যাচ্ছে এক পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া। সে একা নয়। প্রায় একশো ছেলেমেয়ে তার সঙ্গে গলা মিলিয়েছে। তাদের মায়েরাও তাই। কেউ বলছেন, ‘‘দিদিমণিকে কী ভাবে ছাড়ব? ছাড়বই না।’’ কেউ বলছেন, ‘‘উনি আমাদের ছেলেমেয়েদের কাছে মায়ের মতো। কী সুন্দর পড়ান! সবাইকে কী ভালবাসেন! ওঁকে আমরা কোথাও যেতে দেব না।’’ দৃশ্যটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষিকার অন্য স্কুলে বদলি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাঁকে ছাড়তে নারাজ পড়ুয়া থেকে অভিভাবকেরা। মঙ্গলবার দীর্ঘ সময় বিক্ষোভ হয় স্কুল চত্বরে। কী বলবেন, বুঝতে না পেরে বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় ‘মিনতি ম্যাডাম’কে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নামখানা ব্লকের দক্ষিণ চন্দ্রনগর মোক্ষদাময়ী অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। পড়ুয়ার সংখ্যা ২০০-র কাছাকাছি। দীর্ঘ ১৭ বছরে ওই স্কুলে শিক্ষকতা করছেন মিনতি মণ্ডল। গত ১০ বছর ধরে তিনি সেখানকার ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষিকা। সম্প্রতি জেলা শিক্ষা সংসদের তরফে একাধিক স্কুলে স্থায়ী প্রধানশিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বদলির নির্দেশ এসেছে মিনতিরও। আর তার পরেই স্কুলে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষিকার বদলি রুখতে ক্লাসরুমে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন অভিভাবকেরা। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে নামখানা থানার পুলিশ আসে স্কুলে। কিন্তু পড়ুয়া এবং অভিভাবকেরা বিক্ষোভ চালিয়ে যান। মল্লিকা মণ্ডল নামে এক পড়ুয়ার কথায়, ‘‘আমাদের দাবি, আমরা মিনতি ম্যাডামকে এই স্কুল থেকে যেতে দেব না। ম্যাডাম আমাদের খুব ভালবাসেন। আমরাও ওঁকে খুব ভালবাসি। কিছুতেই যেতে দেব না।’’ পঞ্চম শ্রেণির প্রীতম বারিক চিৎকার করে ওঠে। হাত তুলে বলে বলে, ‘‘আমরা মিনতি ম্যাডামকে যেতে দিচ্ছি না, দেব না। উনি আমায় ছোট থেকে বড় করেছেন। ম্যাডামকে আমরা ঠাকুরের মতো মানি। তিনি চলে গেলে আমাদের কে বড় করবে!’’

অভিভাবকদের বক্তব্যও সে রকম। সাহানা বিবি নামে এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘আমাদের দিদিমণি আমাদের এই স্কুলেই থাকুন। আমরা যেমন চাইছি, বাচ্চারাও ওঁকে চাইছে। কেউ ওঁকে ছাড়তে চাইছি না। আমাদের ছেলেমেয়েদের খুব ভাল করে পড়ান। স্কুলের সব কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখেছেন উনি। খাওয়াদাওয়া (মিড ডে মিল) থেকে পড়াশোনা— সব কিছু সুন্দর ভাবে পরিচালনা করেন উনি। স্কুলের উন্নতি করেছেন উনি।’’

মিনতি জানান, তিনি ২০০৬ সালে ওই স্কুলে যোগদান করেছেন। ২০১৩ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষকের পদে রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পড়ুয়ারা আমায় খুব ভালবাসে। অভিভাবকদেরও ভীষণ সমর্থন পেয়েছি। এক সময়ে স্কুলটার অবস্থা ভাল ছিল না। এখন ১৮৩ জন পড়াশোনা করে এখানে। স্কুলের উন্নতির চেষ্টা করেছি।’’ একটু থেমে তিনি আবার বলেন, ‘‘এখন আমার বদলির নির্দেশ এসেছে। বাড়ি থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে একটি স্কুলে যেতে হবে। বাচ্চারা কেউ ছাড়তে চাইছেই না।’’

ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষিকা যখন ওই কথাগুলো বলছেন, তখনও তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন এক অভিভাবিকা। তিনি বলেন, ‘‘দিদিমণি যেন কোথাও না যায়।’’ এ সব দেখেশুনে শাড়ির খুঁটে চোখ মুছলেন মিনতি ম্যাডাম।

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher Transfer namkhana
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy