বাবা-মায়ের সঙ্গে এই বাড়িতেই থাকত সৌমিলি। —নিজস্ব চিত্র।
আজ, বৃহস্পতিবার আট বছর পূর্ণ হওয়ারা কথা ছিল ছোট্ট সৌমিলির। জন্মদিনে পায়েস আর মাংস খেতে আবদারও করেছিল সে। কিন্তু সেই ইচ্ছে আর পূরণ হল না। জন্মদিনের আগের দিন, বুধবার নিজের বাবার হাতে খুন হয়ে গেল সৌমিলি আর তার মা মৌসুমি। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও মেয়েকে খুন করে এ দিন ভোরে থানায় আত্মসমর্পণ করেন সঞ্জীব পাল নামে ওই ব্যক্তি। বাদুড়িয়ার রামচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের খাসপুর গ্রামের এই ঘটনায় স্তম্ভিত পড়শিরা।
মৌসুমির মা আলপনা জানান, মাসখানেক আগে মেয়েকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন সঞ্জীব। মৌসুমি বাপের বাড়িতে গিয়ে থাকছিলেন। ঠিক ছিল সেখানেই নাতনির জন্মদিন পালন করবেন। কিন্তু পরে সঞ্জীব ডেকে পাঠানোয় মৌসুমি ফিরে যান। আলপনা বলেন, ‘‘জন্মদিনে আসছে বলে খুব খুশি ছিল সৌমিলি। আমার কাছে পায়েস আর মুরগির মাংস খেতে চেয়েছিল। সেই মতো আয়োজনও করব ঠিক ছিল। তার আগেই মেয়ে, নাতনিকে মেরে ফেলল জামাই।’’
এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, গোটা এলাকা থমথম করছে। সঞ্জীবের বাড়িতে তদন্তে এসেছে পুলিশ। জড়ো হয়েছেন পড়শিরা। সঞ্জীব পেশায় মৃৎশিল্পী। তার বাড়ি সংলগ্ন একটি ঘরেই সার দিয়ে অর্ধসমাপ্ত প্রতিমা রাখা রয়েছে। সেখান দিয়ে সরু গলি পেরিয়ে ঘরে ঢুকতে হয়। সেই ঘরেই খুন হয়েছেন মা-মেয়ে। ঘরটি আপাতত সিল করে দিয়েছে পুলিশ। তবে জানলায় চোখ রেখে দেখা গেল চাপ চাপ রক্ত পড়ে রয়েছে মেঝেতে।
সঞ্জীবের বিরুদ্ধে শ্বশুরবাড়ির লোকেদের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই তিনি স্ত্রীর উপর পণের দাবিতে অত্যাচার চালাতেন। মারধর করতেন। সম্প্রতি স্ত্রীর অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িত সন্দেহে অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। পড়শিরা জানাচ্ছেন, মারধরের হাত থেকে রেহাই পেত না সাত বছরের ছোট্ট সৌমিলিও। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরও মারধর থামেনি। উল্টে ফের কন্যাসন্তান হলে দুই মেয়ের খরচ সামলানো যাবে না বলে সঞ্জীব মৌসুমীকে হুমকি দিেতন বলে দাবি পড়শিদের অনেকের।
সঞ্জীব এ বছর গোটা পনেরো দুর্গাপ্রতিমা ও খান কুড়ি বিশ্বকর্মার মূর্তি তৈরি করছিলেন। বেশ কিছু বায়নাও মিলেছিল এলাকায়। তিনি গ্রেফতার হওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন ওই সব পুজোর উদ্যোক্তারা। এলাকার একটি ক্লাবের সদস্য রতন পাল বলেন, ‘‘ঘটনাটা শুনে বিশ্বাস করতে পারছি না। দোষীর উপযুক্ত শাস্তি হোক সেটাই চাই। কিন্তু আমরা টাকা দিয়ে বায়না করে ফেলেছি। এখন ফের পুজোর আগে কী ভাবে প্রতিমা জোগাড় করব তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy