Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Freedom fighter

বিধবা ভাতাও পাননি স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্ত্রী

স্বাধীনতার যুদ্ধে অবদান আছে, এমন পরিবারটির দিকে ফিরেও থাকায়নি কেউ। তেমন কোনও সরকারি সাহায্য না মেলায় স্বাধীনতার এত বছর পরে ক্ষোভ ধরে রাখতে পারেননি লক্ষ্মী শীল।

এ ভাবেই দিন কাটছে লক্ষ্মীদের। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

এ ভাবেই দিন কাটছে লক্ষ্মীদের। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

নির্মল বসু 
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২০ ০৩:৪৬
Share: Save:

আমপানের ঝড়ে উড়েছে ঘরের চাল। ভাঙাচোরা সেই ঘরের ছবি জমা পড়েছে ব্লক অফিসে। এখনও মেলেনি ক্ষতিপূরণের অর্থ। ভাঙা টালির উপরে পলিথিনের ছাউনির মধ্যেই দিন কাটছে বৃদ্ধা ও তাঁর দুই সন্তানের।

স্বাধীনতার যুদ্ধে অবদান আছে, এমন পরিবারটির দিকে ফিরেও থাকায়নি কেউ। তেমন কোনও সরকারি সাহায্য না মেলায় স্বাধীনতার এত বছর পরে ক্ষোভ ধরে রাখতে পারেননি লক্ষ্মী শীল। নেতাজির হাতে গড়া আজাদ হিন্দ বাহিনীর সদস্যের স্ত্রী তিনি। এক সময়ে বার্মা প্রদেশ থেকে এসে দেগঙ্গার বেড়াচাঁপার চারাবাগান এলাকায় সরকারি খাসজমিতে খড়, তালপাতার ঘর বেঁধে সংসার শুরু করেছিলেন কৃষ্ণমোহন শীল। তিনি ছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর সদস্য। বাহিনীর সদস্যদের চুল কাটার কাজ ছিল তাঁর।

স্বাধীনতার যুদ্ধে ইংরেজ সেনার ছোড়া গুলি তাঁর হাতে লাগে। তাঁকে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে চলে আসেন কলকাতায়। মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মীকে বিয়ে করেন। বর্তমানে তাঁর মেয়ে অন্যের বাড়িতে গৃহ সহায়িকার কাজ করেন। বছর চল্লিশের ছেলে ইলেকট্রিক দফতরের ঠিকা সংস্থায় শ্রমিকের কাজ করেন। বৃদ্ধ মা ও দিদিকে দেখাশোনা করেন তিনিই।

আজাদ হিন্দ বাহিনীর শংসাপত্র দেখিয়ে লক্ষ্মী বলেন, ‘‘শুনেছি স্বামীর আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। তিনি থাকতেন রেঙ্গুনে। ১৯৮৯ সালে অসুস্থ হয়ে পড়লে অর্থাভাবের কারণে চিকিৎসা করাতে না পারায় মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর পরে তিরিশটা বছর কেটে যাওয়ার পরেও বিধবা ভাতাটুকু কেউ দিলে না।’’ সরকার স্বাধীনতা যোদ্ধাদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা করেছে সরকার। তা-ও পায়নি পরিবারটি। টাকার অভাবে মেয়ে সুধারানির বিয়ে দিয়ে পারেননি বলে জানালেন লক্ষ্মী। স্বাধীনতা দিবস নিয়ে যখন তোলপাড় সর্বত্র, তখন পলিথিনে ঘেরা এক চিলতে ঘরে এক বেলা আধপেটা খেয়ে দিন কাটছে বলে জানালেন তিনি।

কৃষ্ণর ছেলে শঙ্করমোহন বলেন, ‘‘বাবার রেখে যাওয়া আজাদ হিন্দ বাহিনীর শংসাপত্র নিয়ে অনেক নেতা, মন্ত্রীর কাছে ঘুরেও কোনও লাভ হয়নি। মেলেনি সাহায্য। বাবার মৃত্যুর পরে আমাদের দিকে ফিরেও তাকায়নি কেউ। অনেক দিন আগে বাম আমলে একটা ঘর মিলেছিল। সেটা এখন এতটাই জরাজীর্ণ, বৃষ্টি হলে জল পড়ে। ওই একটা ঘরেই মা ও বোনকে নিয়ে আমাদের সংসার।’’ আমপানের পরে যে প্লাস্টিক মিলেছিল, তা দিয়ে কোনও রকমে বাস করছে পরিবারটি।

শঙ্করমোহনের কথায়, ‘‘স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে বাবার পেনশন তো দূরের কথা, মা বিধবা ভাতা পর্যন্ত পাননি। আমপানের পরে সরকারি ভাবে ছবি তুলে নিয়ে গেলে কী হবে, ঘর ভাঙার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।’’

দেগঙ্গার বিডিও সুব্রত মল্লিক বলেন, ‘‘সত্যিই ওই বৃদ্ধা এবং তাঁর পরিবারের অবস্থা বেশ খারাপ। আমাদের পক্ষে সাধ্য মতো নগদ অর্থ, চাল, আটা, পলিথিন, পোশাক দিয়ে সাহায্য করা হয়। বৃদ্ধা যাতে মাসিক এক হাজার টাকা করে বিধবা ভাতা সামনের মাস থেকে পান, সেই ব্যবস্থা করা হবে।’’ তিনি জানান, আমপানে ঘরের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০ হাজার টাকা এবং একশো দিনের কাজ বাবদ ১৮ হাজার টাকা দু’চার দিনের মধ্যে ব্যাঙ্কে এসে যাবে। তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতা সংগ্রামীর ছেলে যদি কোনও কাজের জন্য আবেদন করেন, তা হলে বিবেচনা করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Freedom fighter Widow's pension
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy