গোবরডাঙায় পানীয় জলের সমস্যার কারণে সরকারি এই কল থেকে বাড়ির জন্য জল নিয়ে যান অনেকে। ছবি: সুজিত দুয়ারি।
পুরসভার বয়স প্রায় দেড়শো বছর পেরিয়ে গিয়েছে। অথচ, আজও গোবরডাঙা পুর এলাকায় বসবাসকারী মানুষের পানীয় জলের সমস্যা মিটল না। যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে, তাঁরা পানীয় জল কিনে প্রয়োজন মেটান। আর যাঁরা তা পারেন না, তাঁরা টিউবওয়েলের জলই বাধ্য হয়ে পান করেন।
এলাকাটি আর্সেনিকপ্রবণ। শহরবাসীর অভিযোগ, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কয়েক বছর আগে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি আর্সেনিকমুক্ত পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। গোবরডাঙা পুরসভা তৈরি হয় ১৮৭০ সালে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পুর এলকায় প্রায় ১৬ হাজার পরিবার বসবাস করেন। বাম আমলে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য এখানে প্রাথমিক পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সেখানে দু’টি ওভারহেড রিজ়ার্ভার তৈরি করে। বেশ কিছু এলাকায় পাইপ লাইন বাসানো হয়েছিল। পুরসভার পক্ষ থেকে আগে বাড়িতে জলের লাইনের সংযোগ দেওয়া হত। এখন অবশ্য আর বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া হয় না।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় মাস্টার কলোনি এলাকায় এবং রঘুনাথপুরে দু'টি রিজ়ার্ভার আছে। সেখানে মাটির তলা থেকে জল তুলে শোধন করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পাঠানো হয়। পুর এলাকার মধ্যে কমবেশি সব ওয়ার্ডে নলবাহিত জল পৌঁছয়। পুরনো দু’টি রিজ়ার্ভারের অবস্থা ভাল নয়। অভিযোগ, নলবাহিত যে জল বাড়িতে পৌঁছয়, তা পানের উপযুক্ত নয়। লোকজন স্নান করা বা জামাকাপড় কাচার কাজে সেই জল ব্যবহার করেন। কেউ কেউ অবশ্য শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক জেনেও ওই জল পান করেন।
গোবরডাঙার প্রাক্তন পুরপ্রধান, সিপিএমের বাপি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এখন যে দু’টি রিজ়ার্ভার আছে তা থেকে নিম্ন মানের জল সরবরাহ হয়। পান করা দূরের কথা, জলে এত আয়রন যে কাপড়ও কাচা যায় না। আমাদের সময়ে বাদে খাটুরা এবং গৈপুর এলাকায় দু’টি রিজ়ার্ভার তৈরির জন্য জমি চিহ্নিত করার কাজ করা হয়েছিল। তারপরে ২০১০ সালে তৃণমূল পুরসভায় ক্ষমতায় আসার পরে আর কাজ এগোয়নি।’’ তাঁর দাবি, তাঁদের আমলে তৈরি ‘আর্সেনিক এবং আয়রন রিমুভেবল প্লান্ট’ মুখ থুবড়ে পড়েছে।প্রাক্তন পুরপ্রধানের অভিযোগ, ‘‘কয়েক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী যখন জল প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন, এলাকার মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কারণ, এলাকাটি আর্সেনিকপ্রবণ। সেই স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি। গোবরডাঙাবাসীকে পরিস্রুত পানীয় জল দিতে পুরসভা বা রাজ্য সরকার এখনও সদর্থক পদক্ষেপ করেনি।’’
বিজেপির গোবরডাঙা মণ্ডল সভাপতি আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়িতে যে জল আসে, তাতে পোকামাকড়, ময়লা থাকে। পানীয়ের উপযুক্ত নয়। জল কিনে খাই। সেই জলও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় তা কিনে খেতে হচ্ছে।’’ এলাকার অনেকে জানান, বহু মানুষ এখন পানীয় জল কিনে খাচ্ছেন। ২০ লিটার জলের দাম ২০ টাকা।
পুরপ্রধান শঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘এ বছর ১২ মার্চ হাবড়ার প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী গোবরডাঙার জল প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন। পুরনো দু’টি রিজ়ার্ভার ভেঙে চারটি নতুন রিজ়ার্ভার তৈরি হবে। পাইপ লাইন বসানোর কাজ সহ যাবতীয় কাজের দরপত্র ডাকা হয়েছে। ভোটের পরেই কাজ শুরু হবে। শীঘ্রই শহরের মানুষ পরিস্রুত আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল বাড়িতে পেতে চলেছেন। লিফলেট ছাপিয়ে সে কথা আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছি।’’ বিজেপি নেতা আশিসের অবশ্য কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী প্রতি বার ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দেন। ভোট হয়ে গেলে প্রতিশ্রুতিও ভুলে যান!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy