E-Paper

মিড ডে মিলে ‘হিসেবে জল’, উঠছে প্রশ্ন

মিড ডে মিল প্রকল্পে বড়সড় আর্থিক গরমিল হয়েছে বলে জানাচ্ছে কেন্দ্রের রিপোর্ট। স্কুলে কত জন উপস্থিত, কত জন খাবার খাচ্ছে— সেই পরিসংখ্যানে গোঁজামিল দিয়ে তছরুপ হচ্ছে বলে অভিযোগ।

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:১৫
Share
Save

কী ভাবে ঘটছে গরমিল? খাতায়-কলমে একশো পড়ুয়ার জন্য আদৌ কি একশো জনের রান্না হচ্ছে স্কুলে? কেন্দ্রের রিপোর্টে মিড মিল নিয়ে আর্থিক গরমিলের খোঁজ-খবর করতে বিভিন্ন স্কুলের সঙ্গে কথা বলে উঠে এল নানা তথ্য।

জানা যাচ্ছে, অনেক পড়ুয়া সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হয়ে পাড়ার বেসরকারি স্কুলেও পড়ে। বছরের বেশির ভাগ দিনেই সরকারি স্কুলে যায় না। পরীক্ষার সময় বা বিশেষ কোনও দিন স্কুলে যায়। সেই সব পড়ুয়া সরকারি প্রাথমিক স্কুলের মিড ডে মিল খায় না। এই সংখ্যাটা একটু শহর বা শহর ঘেঁষাএলাকায় বেশি। যে সব গ্রামে বেসরকারি স্কুল গজিয়ে উঠেছে, সেখানেও এমন হয়।

হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েতের বাসিন্দা হালিমা খাতুন বলেন, “আমার ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ও পাড়ার সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তবে স্কুলে যেতে পারে না প্রতি দিন। পরীক্ষার সময়ে যায়। বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করেছি। পড়াশোনা ভাল হয় তাই। ওখানে প্রতি দিন যায়। ওই স্কুলে এমন ছাত্র অনেক আছে।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এই সব বেসরকারি স্কুল বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সরকার অনুমোদিত নয়। তাই সরকারি হাইস্কুলে ভর্তির সময়েএই শংসাপত্রের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে সরকারি প্রাথমিকস্কুলে ভর্তি করিয়ে রাখা হয় ছেলেমেয়েকে।

প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী স্কুলে গেলেও নানা কারণে মিড ডে মিল খায় না বলে জানা গেল। বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে আসে। অথবা, টাকা দিয়েস্কুলের পাশের দোকান থেকে কিনেও খায়।

সন্দেশখালি থানার এলাকার একটি স্কুলের অভিভাবক পরিমল গায়েন বলেন, “আমার ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলের মিড ডে মিল খায় না। ও বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে যায়।” অভিভাবকদের একাংশের দাবি, বিভিন্ন স্কুলের মিড ডে মিল মান এত খারাপ, সম্পন্ন বাড়ির পড়ুয়ারা স্কুলে প্রতি দিন গেলেও মিড ডে মিল খেতে চায় না। সন্দেশখালির একটি স্কুলে কয়েক দিন আগে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের ‘কমপ্লেন বুকে’(অভিযোগ জানানোর খাতা) নিম্নমান ও কম পরিমাণ মিড ডে মিলদেওয়া, অপরিছন্নতার অভিযোগ জানিয়েছিল।

বিভিন্ন স্কুলে প্রত্যেক দিন সব পড়ুয়া উপস্থিত থাকে না। জানা যাচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষ মিড ডে মিলের হিসাবে সব নামই ঢুকিয়ে দিয়ে গরমিল করে থাকেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক জানান, শহরের দিকের অভিভাবকেরা অনেকটা সচেতন। তাই পড়ুয়াদের উপস্থিতি খানিকটা বেশি থাকে। তবুও একশো শতাংশ পড়ুয়া সব দিন থাকে না। গ্রামের দিকে উপস্থিতি প্রত্যেক দিন গড়ে খুব জোর ৬০-৬৭ শতাংশ থাকে। যারা উপস্থিত থাকে, তাদের মধ্যে আবার পঞ্চম শ্রেণির ৭০-৭৫ শতাংশ পড়ুয়া খায়। কিন্তু অষ্টম শ্রেণিতে দেখা যায়, অনেক বেশি সংখ্যক পড়ুয়া মিড ডে মিল খায় না। একটু সম্পন্ন পরিবারের সন্তান হলে টিফিন হিসাবে ভাত-তরকারি খেতে চায় না। কেউ কেউ আবার যে দু’দিন ডিম হয়,সেই দু’দিন মিড ডে মিল খায়।’’ কিন্তু মিড ডে মিলের হিসাবে প্রতি দিন সংখ্যাটা অনেকটা বাড়িয়েই দেখানো হয় বলে জানালেন কিছু স্কুলের কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষকের মতে, বাজার দরের থেকে মিড ডে মিলের বরাদ্দ এত কম, মিড ডে মিল খাওয়া পড়ুয়াদের প্রকৃতসংখ্যা পেশ করলে খরচ সামলানো যাবে না। অন্তত ৭-৯ জন রাঁধুনি থাকেন। এঁরা নিজেদের বাড়ির লোকের জন্যও দুপুরের খাবার নিয়ে যান মিড ডে মিল থেকে। এ ছাড়া, চাল ওকাঁচাআনাজ অনেক সময়ে নষ্ট হয়। এই সব বাড়তি খরচ স্কুলকে সামলাতে হয়মিড ডে মিলের বরাদ্দ থেকে।

সব মিলিয়ে কত জন স্কুলে এল আর কত জন মিল খেল— সেই পরিসংখ্যানে গোঁজামিল থেকে যায় বহু স্কুলেই। উত্তর ২৪ পরগনার মিড ডে মিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক বলেন, “আমাদের তরফে নজরদারি চলে। বিভিন্ন স্কুলে মিড ডে মিল ক’জন খাচ্ছে আর ক’জন দেখানো হচ্ছে— সেটা খেয়াল রাখা হয়। আমাদের নজরদারিতে কোনও বেনিয়ম ধরা পড়েনি।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Hasnabad Mid Day Meal Corruption

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।