Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bikes

রাতের পথে বাইকের দাপটে ত্রস্ত বনগাঁ

স্থানীয় অনেকেই বলছেন, এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বনগাঁয় পাল্লা দিয়ে বাড়ে বাইকের দৌরাত্ম্য। অনেক মোটরবাইকের নম্বর প্লেটও থাকে না।

An image of bike

রাতের পথে বাইকের দাপাদাপি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:২২
Share: Save:

সময়, রাত দেড়টা। এলাকা, বনগাঁ থানার কাছে একটি চায়ের দোকান। হঠাৎই কয়েকটি মোটরবাইকে জনা দশেক যুবক এসে দাঁড়াল। সকলের মুখ ঢাকা। দোকানে তখন ছিলেন কয়েক জন সাংবাদিক। তাঁদের উদ্দেশ্যে গালিগালাজ করে, হুমকি দিয়ে চলে গেল যুবকেরা। এক সাংবাদিক থানায় অভিযোগ করেন পরে।

স্থানীয় অনেকেই বলছেন, এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বনগাঁয় পাল্লা দিয়ে বাড়ে বাইকের দৌরাত্ম্য। অনেক মোটরবাইকের নম্বর প্লেটও থাকে না। বেপরোয়া গতিতে বাইক চালিয়ে ছুটে যায় যুবকের দল। গালিগালাজ করতে থাকে। যশোর রোড, বনগাঁ-চাকদহ সড়ক, বাগদা রোডে চলে বাইক-বাহিনীর এমন দৌরাত্ম্য।

দিন কয়েক আগে, রাত দেড়টা নাগাদ বনগাঁর হাসপাতাল কালীবাড়ি বাজার এলাকায় দেখা গেল, দোকানপাট সব বন্ধ। পাশের বনগাঁ-চাকদহ সড়ক দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক ছুটে যাচ্ছে বেপরোয়া গতিতে। চোখে পড়ল, গোপালনগরের দিক থেকে নম্বরহীন বাইকে তিন যুবক তীব্র গতিতে ছুটে এসে মিলিয়ে গেল। যশোর রোড পাশের একটি এটিএম ছিল রক্ষীহীন।

বনগাঁ শহরে কয়েকটি মন্দির আছে। রাতে সেখানে পুলিশ পাহারা চোখে পড়ল না। অতীতে মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটেছিল। শহরে ১ নম্বর রেলগেট থেকে ২ নম্বর রেলগেট যাওয়ার রাস্তায় বাইকের আনাগোনা দেখা গেল। বনগাঁর প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত আদালত সংলগ্ন এলাকাতেও কোনও নিরাপত্তা চোখে পড়েনি। ওই এলাকায় আদালত ছাড়াও, রয়েছে মহকুমাশাসকের অফিস ও বাংলো। রয়েছে এসপি আবাস, বনগাঁ উপসংশোধনগার সহ বিভিন্ন সরকারি দফতর।

শহরবাসীর অভিযোগ, রাতে বাইকের দাপাদাপির কারণে নিরাপদ যাতায়াত করা যায় না। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে অকারণ গালিগালাজ করে। স্থানীয় অনেকের আশঙ্কা, শহরের বাইরে থেকে গভীর রাতে বাইকের আনাগোনা বেড়েছে। অনেকের কাছেই আগ্নেয়াস্ত্র থাকছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

দিন কয়েক আগে গাইঘাটার বকচরা এলাকায় একটি পানশালার সামনে দু’রাউন্ড গুলি চালায় কয়েক জন দুষ্কৃতী। পুলিশ ওই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। একটি আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুষ্কৃতীরা মোটরবাইকে করে বনগাঁ শহর থেকে বকচরায় গিয়েছিল।

বিরোধীদের অভিযোগ, জুয়ার বাড়বাড়ন্তের সঙ্গেই বেড়েছে বাইক-বাহিনীর দাপাদাপি। কেবল বনগাঁ শহর নয়, গোটা মহকুমা জুড়েই রাতে বাইকের তাণ্ডব চলছে বলে অভিযোগ। খুচরো হেরোইনের কারবার, নিষিদ্ধ কাশির ওষুধের কারবারের সঙ্গে এই বাইক-বাহিনীর যোগ আছে বলে অনুমান অনেকের। তাঁদের অভিযোগ, রাতে কারবারিদের আনাগোনা বাড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীদের এখানে চলে আসা নতুন কোনও ঘটনা নয়। রাতে বাইক চালকদের মধ্যে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরাও থাকতে পারে।’’

গাইঘাটার বিজেপি নেতা চন্দ্রকান্ত দাস বলেন, ‘‘বছরখানেক ধরে গাইঘাটায় জুয়া, সাট্টা-সহ বেআইনি কার্যকলাপ চলছে। এই সব বেআইনি কারবারের সূত্রেই রাতভর মোটরবাইকে দুষ্কৃতীদের আনাগোনা বেড়েছে। পুলিশ-প্রশাসন নির্বিকার।’’ সিপিএমের বনগাঁ শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুমিত করের কথায়, ‘‘আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। সে কারণেই রাতে বাইক বাহিনীর তাণ্ডব দেখা যাচ্ছে।’’ বনগাঁ শহরের বাসিন্দা, বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘‘মাঝে কিছু দিন কম থাকার পরে আবার রাতে বাইক বাহিনীর তাণ্ডব শুরু হয়েছে। সবই তৃণমূল-আশ্রিত। পুলিশ কিছু বলে না। সে কারণেই দৌরাত্ম্য বাড়ছে। শহরের মানুষ রাতে বাইরে বেরোতে পারেন না।’’ সীমান্তবর্তী শহর বনগাঁয় রাতে বাইরে থেকে সন্দেহজনক মানুষদের আনাগোনা নতুন নয়। বাইরে থেকে এসে অপরাধ করে দুষ্কৃতীদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। ফলে গভীর রাতে শহরের মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে একটা সংশয় থাকেই। পরিস্থিতির কথা মানছেন শাসক দলের নেতারাও। গাইঘাটার তৃণমূল নেতা গোবিন্দ দাস বলেন, ‘‘বকচরা এলাকায় একটি হোটেল রয়েছে। সেখানে বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়েছে।’’ বনগাঁর পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘রাতে বাইকের আনাগোনা এবং মাদক কারবার বন্ধ করতে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।’’ তবে বাইক-বাহিনীর দৌরাত্ম্যের পিছনে তৃণমূলের লোকজন আছে বলে মানতে চাননি শাসক দলের নেতারা।

পুলিশের দাবি, রাতে টহল নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বনগাঁ থানার আইসি শিবু ঘোষ রাতেও এলাকায় ঘোরাঘুরি করছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। বনগাঁর পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, ‘‘শহর সহ মহকুমা জুড়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নাকা তল্লাশি চালানো হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bikes Bangaon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy