Advertisement
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Canning Sub Division Hospital

ভেন্টিলেশনে রেখেই প্রসব, প্রাণ বাঁচল মা-শিশুর

হাসপাতালে নিয়ে আসার পরেও জ্ঞান ফেরনি আঞ্জুয়ারার। খিঁচুনিও থামানো যাচ্ছিল না। সিসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকায় ভেন্টিলেশনে রাখা হয়।

সন্তানকে কোলে নিয়ে আঞ্জুয়ারা।

সন্তানকে কোলে নিয়ে আঞ্জুয়ারা। নিজস্ব চিত্র ।

প্রসেনজিৎ সাহা
ক্যানিং  শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪ ০৯:১৯
Share: Save:

প্রসবের সময় হয়ে এসেছিল অন্তঃসত্ত্বা তরুণীর। হঠাৎই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন ঘরের মধ্যে। খিঁচুনি হতে থাকে। তাঁকে দ্রুত ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান পরিজনেরা। সেখানে তরুণীকে ভেন্টিলেশনে রেখে ঝুঁকি মাথায় নিয়েই শুরু হয় অস্ত্রোপচার। চিকিৎসকদের তৎপরতায় সুস্থ সন্তানের জন্ম দেন সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের পাঠানখালির বাসিন্দা আঞ্জুয়ারা মোল্লা নামে ওই তরুণী। বর্তমানে মা-শিশু দু’জনেই ভাল আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

পরিবার সূত্রের খবর, শনিবার আচমকাই অজ্ঞান হয়ে পড়েন আঞ্জুয়ারা। শুরু হয় খিঁচুনি। পরিবারের সদস্যেরা সামাল দিতে না পেরে হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন। তরুণীকে ভূতে বা জিনে ধরেছে বলে গুজব রটতে শুরু করে। পড়শিদের অনেকে পরামর্শ দেন তাঁকে ওঝা, গুনিনের কাছে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু কান দেননি পরিজনেরা। তাঁরা আঞ্জুয়ারাকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে মাতৃমা বিভাগের চিকিৎসকেরা দ্রুত চিকিৎসা শুরু করেন।

হাসপাতালে নিয়ে আসার পরেও জ্ঞান ফেরনি আঞ্জুয়ারার। খিঁচুনিও থামানো যাচ্ছিল না। সিসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকায় ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। চিকিৎসক অনিন্দ্য দাস বলেন, ‘‘রোগী শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন না। আমরা সিদ্ধান্ত নিই, রোগী স্থিতিশীল হলে তবেই সিজ়ারের মাধ্যমে প্রসব করানো হবে। কিন্তু ৮ ঘণ্টা পরেও জ্ঞান ফেরেনি রোগীর। এ দিকে, অবস্থা ক্রমশ সঙ্কটজনক হচ্ছিল। তাই ওই অবস্থাতেই অস্ত্রোপচারের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’’

রোগীকে ভেন্টিলেশনে রেখে প্রসব করানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি বলে জানান চিকিৎসকেরা। অনিন্দ্য বলেন, “এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে দশ জনের মধ্যে এক জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গর্ভস্থ সন্তানদের মধ্যেও অর্ধেক ক্ষেত্রে মৃত্যু হয় শিশুর।”

ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুতর্ষি মণ্ডল বলেন, “যে অবস্থায় রোগী এসেছিলেন, তখন তাঁকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করলে রাস্তাতেই মৃত্যুর আশঙ্কা ছিল। আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, অ্যানাস্থেটিস্ট, অপারেশান থিয়েটারের কর্মীরা সকলে দ্রুত প্রস্তুত হন। সকলে মিলে মা-সন্তানকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছেন।”

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন আঞ্জুয়ারা নিজেই এখন সন্তানের খেয়াল রাখতে পারবেন। শুক্রবার সন্তানকে কোলে নিয়ে আদরও করেছেন তিনি। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের তৎপরতায় খুশি রোগী ও তাঁর পরিজনেরা। আঞ্জুয়ারার মা সুফিয়া বলেন, “মেয়ের এত খিঁচুনি হচ্ছিল, ওকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়েছিল। হাসপাতালে আনলে ডাক্তারবাবুরা দ্রুত চিকিৎসা শুরু করেন। ওঁরা না থাকলে মেয়ে আর নাতনিকে নিয়ে ফিরতে পারতাম না।”

ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সুপার পার্থপ্রতিম কয়াল বলেন, “অনিন্দ্য দাস ও সুরেশ সর্দারের নেতৃত্বে যে ভাবে গোটা টিম কাজ করেছে তাতে আমি খুবই খুশি। পাশাপাশি বলতে চাই, এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সরাসরি হাসপাতালে আসুন। খিঁচুনি আসা, অজ্ঞান হয়ে পড়া এগুলি সবই অসুখ। সঠিক চিকিৎসায় এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে এই রোগীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবেন না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Canning Delivery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy