ক্যানিংয়ের তালদি এলাকার বাসিন্দা রবিন বলদে-র লক্ষ্য, ইংলিশ চ্যানেল পার করবেন। সুনগরবনের ম্যানগ্রোভকে বাঁচানোর বার্তা দিতে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে সেই অভিযানে নামবেন বছর চুয়াল্লিশের রবিন। তার আগে নিজের শারীরিক ক্ষমতা পরীক্ষা করতে শুক্রবার পক প্রণালী অতিক্রম করতে বেরিয়ে পড়েছেন।
এ দিন ভোরে তালাইমান্নার থেকে সাঁতার শুরু করে সন্ধ্যার মধ্যে ধনুষ্কোডিতে ভারত-শ্রীলঙ্কার মধ্যে পক প্রণালী পেরোনোর কথা তাঁর। এই অঞ্চলে জলে অপ্রত্যাশিত স্রোত আছে। রবিনের সঙ্গে আছেন প্যারা অলিম্পিয়ান প্রশান্ত কর্মকার-সহ দশ জনের একটি দল। রিলে সাঁতারের মাধ্যমে পক প্রণালী অতিক্রম করবেন তাঁরা। প্রশান্ত বলেন, “ভারতের সুইমিং ফেডারেশনের প্রতিনিধিরা এই সাঁতার পর্যবেক্ষণ এবং যাচাই করবেন, যা এই কৃতিত্বের জাতীয় স্বীকৃতি এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করবে।”
বর্তমানে পূর্ব রেলের কর্মী রবিন। গত কয়েক দিন ধরে বঙ্গোপসাগরের রামেশ্বরমে সঙ্গীদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ওয়াটার পোলো খেলেন তিনি। ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন, দীর্ঘ দিন বাংলা দল ও রেলের দলের ক্যাপ্টেন হিসেবেও দায়িত্ব সামলেছেন। প্রায় পনেরো বছর আগে সাঁতার ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের টিকিট পরীক্ষক হিসেবে কাজ করেন রবিন। ছোট বয়সে বাবা মারা যান। পাঁচ ভাইকে মা বৃহস্পতি অতিকষ্টে মানুষ করেছেন। অল্প খরচে কী খেলাধূলা করা যায়, তা বাছতে গিয়ে সাঁতারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে রবিনের। অন্যের বাতিল হওয়া সাঁতারের পোশাক ধার করে জলে দাপাদাপি শুরু। নানা সমাজসেবার কাজে যুক্ত রবিন। বললেন, ‘‘ম্যানগ্রোভ আমাদেরই বাঁচাতে হবে। না হলে সুন্দরবনকে রক্ষা করা যাবে না। ভূগর্ভস্থ জল অপচয় বন্ধ করতে হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দা অমলকৃষ্ণ দাস বলেন, ‘‘রবিন ছোট থেকে অভাবের সঙ্গে লড়াই করে যে ভাবে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তা দৃষ্টান্ত। সুন্দরবনবাসীকে সচেতন করতে ওঁর এই উদ্যোগের পাশে আমরা সকলে আছি।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)