Advertisement
০৪ জুলাই ২০২৪
Arrest

স্বামীর সঙ্গে অশান্তির জের, সদ্যোজাতকে ‘খুন’ করে ধৃত মা

পানিহাটি পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডের অরবিন্দপল্লির বাসিন্দা শর্মিলা পরিচারিকার কাজ করতেন। স্বামী লাল্টু দত্ত পেশায় দিনমজুর। স্থানীয়েরা জানান, বছরখানেক ধরে প্রায় প্রতিদিনই লাল্টু ও শর্মিলার মধ্যে অশান্তি হচ্ছিল।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪ ০৫:৫১
Share: Save:

বাড়িতেই সন্তান প্রসব করেছিলেন তরুণী। কিন্তু অভিযোগ, দাম্পত্য কলহের জেরে সেই সদ্যোজাতকে বালতির জলে চুবিয়ে খুন করার পরে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন মা! ঘটনার পরে চম্পট দিয়েছেন তরুণীর স্বামী। সোমবার পানিহাটিতে ঘটে এই ঘটনা। ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অত্যন্ত মর্মান্তিক ও অমানবিক ঘটনা। শর্মিলা দত্ত নামে ওই তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।স্বামীরও খোঁজ চলছে।’’ কী ভাবে এক জন মা এমন কাণ্ড ঘটালেন, তা ভেবে বিস্মিত স্থানীয় বাসিন্দারাও। তাঁরা দোষীর কড়া শাস্তির দাবি তুলেছেন।

পানিহাটি পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডের অরবিন্দপল্লির বাসিন্দা শর্মিলা পরিচারিকার কাজ করতেন। স্বামী লাল্টু দত্ত পেশায় দিনমজুর। স্থানীয়েরা জানান, বছরখানেক ধরে প্রায় প্রতিদিনই লাল্টু ও শর্মিলার মধ্যে অশান্তি হচ্ছিল। তা মাঝেমধ্যে এমন পর্যায়ে পৌঁছত যে প্রতিবেশীদের এসে সামাল দিতে হত। শর্মিলাকে সন্দেহ করতেন লাল্টু। তা নিয়েই দু’জনের অশান্তি বাধত। ওই তরুণী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে ঝামেলা চরমে ওঠে।

রবিবার রাতে বাড়িতে একাই ছিলেন শর্মিলা। তখন হঠাৎ প্রসব-যন্ত্রণা ওঠে তাঁর। ঘরেই তিনি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। রাতে বাড়ি ফিরে শিশুটিকে দেখে খেপে যান লাল্টু। ফের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চরম অশান্তি শুরু হয়। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, অশান্তির হাত থেকে বাঁচতে রাতেই সদ্যোজাতকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন শর্মিলা। বাড়িতে থাকা জল ভর্তি বালতিতে প্রথমে চুবিয়ে দেন শিশুটিকে। তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরে সোমবার ভোরে দেহটি এলাকার পুকুরে ফেলে আসেন।

এ দিন সকালে স্থানীয়েরা পুকুরে স্নান করতে গিয়ে ওই সদ্যোজাতের দেহ ভাসতে দেখেন। খবর পেয়ে চলে আসে খড়দহ থানার পুলিশও। তারা দেহ উদ্ধার করে তদন্ত শুরু করে। পুলিশ জানতে পারে, এ দিন সকালেও স্বাভাবিক অবস্থায় রাস্তায় দেখা গিয়েছে শর্মিলাকে। রবিবারও তাঁকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে, তিনি গর্ভবতী। কিন্তু এ দিন শর্মিলার বাড়িতে কোনও শিশুকে দেখা যায়নি। তা হলে সে গেল কোথায়? সন্দেহ হয় তদন্তকারীদেরও। এ দিন বিকেলে শর্মিলার বাড়িতে যায় খড়দহ থানার পুলিশ। প্রথমে ওই তরুণীকে আটক করা হয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই খুনের কথা স্বীকার করেন শর্মিলা। দাবি করেন, দাম্পত্য কলহ থেকে বাঁচতেই তিনি এই কাজ করেছেন। পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, লাল্টুকেও ধরে পুরো বিষয়টি জানার চেষ্টা করা হবে। স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেকের ক্ষেত্রেই প্রসব-পরবর্তী মানসিক অবসাদ দেখা যায়। কেউ ভাবেন, কী ভাবে সন্তানকে মানুষ করবেন। কেউ ভাবেন, সংসারে অশান্তি হবে। এমন বিভিন্ন কারণ থাকে। সে ক্ষেত্রে মা মারাত্মক হিংস্র আচরণ করেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘কোনও প্রসূতির মধ্যে এমন উপসর্গ দেখা গেলে তৎক্ষণাৎ তাঁকে মানসিক রোগের চিকিৎসকের কাছে পাঠাতে হবে। সদ্যোজাতকে তাঁর থেকে আলাদা রাখতে হবে। কাউকে কাউকে প্রয়োজনে মানসিক হাসপাতালেও পাঠাতে হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arrest new born baby Murder Panihati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE