মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে হাসপাতালে অপারেশনের জন্য ভর্তি করল ভাঙড়ের সোশ্যাল মিডিয়া টিমের সদস্যরা। নিজস্ব চিত্র।
সন্দেহের বশে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে একাধিক। তার মধ্যেই অন্য ছবি ভাঙড়ে। নিজেরাই টাকা জোগাড় করে পা ভেঙে যাওয়া ভবঘুরের অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করলেন স্থানীয় একটি ফেসবুক গ্রুপের সদস্যেরা। ‘ভাঙড় আছে ভাঙড়েই’ নামে ওই কমিউনিটি গ্রুপের উদ্যোগে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের অস্ত্রোপচার হয়েছে। গ্রুপের ‘মডারেটর’ ইন্তিয়াজ মোল্লা বলেন, ‘‘এই ঘটনা যদি সন্দেহের বশে গণপিটুনি রুখতে বা বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়াতে বার্তা দিতে পারে, তা হলেই আমাদের উদ্যোগ সার্থক।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক দিন ধরে কাশীপুর বাজারে একটি যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখা যাচ্ছিল বছর বাইশের এক যুবককে। মাথায় লম্বা উস্কোখুস্কো চুল, পরনে হাফপ্যান্ট, গেঞ্জি। লাঠি ধরে হাঁটার চেষ্টা করলে পারছিলেন না। পায়ে ক্ষত, গোড়ালির উপরের দিকে পা ফুলে হাড় উঁচু হয়ে ছিল। স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা খাবার-দাবার দেন।
ইন্তিয়াজ সমাজমাধ্যমে যুবকের ছবি পোস্ট করে তাঁর কথা জানিয়ে সকলের কাছে সাহায্যের আবেদন করেন। ফেসবুক গ্রুপের সদস্য আশরাফুল ইসলাম, সাজ্জাত মোল্লা, আনিসা ইয়াসমিন সহ অনেকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করে পায়ে প্লেট বসানোর কথা বলেন।
ইন্তিয়াজ জানান, অস্ত্রোপচারের খরচের কথা জানিয়ে যোগাযোগ করা হয় ওই হাসপাতালের কর্ণধার নিতাই দেবের সঙ্গে। তিনি সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে কেবলমাত্র অস্ত্রোপচারের খরচ ২২ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলেন। ওই টাকা জোগাড় করার জন্য ফের সমাজমাধ্যমে আবেদন করেন গ্রুপের সদস্যেরা। বিষয়টি নজরে পড়ে ভাঙড়ের বিশিষ্ট শিল্পপতি জাহাঙ্গির আলমের (পাপ্পু)। তিনি টাকা পাঠিয়ে দেন। ফেসবুক গ্রুপের সদস্যেরা যুবককে চুল কাটিয়ে, পরিচ্ছন্ন করে, নতুন পোশাক পরান। শনিবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার রাতে অস্ত্রোপচার হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ‘ভাঙড় আছে ভাঙড়েই’ ফেসবুক গ্রুপ থেকে আগেও নানা সামাজিক কাজকর্ম করা হয়েছে। স্থানীয় কারও রক্তের প্রয়োজনে রক্তদান ছাড়াও আগে এক ক্যানসার আক্রান্ত যুবকের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন গ্রুপের সদস্যেরা। সম্প্রতি সন্দেহের বশে পর পর দু’টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ভাঙড়ে। প্রাণও গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অপরিচিত ভবঘুরের জন্য স্থানীয় যুবকদের এমন উদ্যোগে গর্বিত এলাকার অনেকেই।
ইন্তিয়াজ বলেন, ‘‘ওই যুবক কথাবার্তা বুঝতে পারছেন। কিন্তু কিছু বলতে পারছেন না। ওঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পরে কোথায় থাকার ব্যবস্থা করব, বুঝতে পারছি না।’’ বিডিও (ভাঙড় ২) পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি ওই যুবকদের ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করব না। সকলকে কুর্নিশ জানাই। বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে যুবককে কোনও হোমে বা নিরাপদ কোনও আশ্রয়ে থাকার ব্যবস্থা করা যায় কিনা, তা দেখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy