নিজের কাজে নিরলস বঙ্কিম। ছবি: সুজিত দুয়ারি
শুরুটা করেছিলেন দশ বছর বয়সে। তখন তিনি পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া। নিজের বাড়িতে তখন ফুল গাছের চারা লাগিয়ে ছিলেন। সেই থেকে চলছে তাঁর বৃক্ষরোপণ। এখন বয়স ৭৫ বছর। এখনও গাছের চারা পুঁতে চলেছেন বঙ্কিম চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘বৃক্ষরোপণ করতে পারলে শান্তি পাই। ভাল থাকি। আমৃত্যু এই কাজ করে যেতে চাই।’’
অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার কাঁকপুল এলাকার বাসিন্দা বঙ্কিমকে এলাকার মানুষ একডাকে চেনেন ‘বৃক্ষপ্রেমী’ হিসেবে। অনেকেই ডাকেন ‘গাছদাদু’ বলে। বাড়ির বাইরের এলাকায়, প্রতিবেশীর বাড়িতে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপণ করেছেন বঙ্কিম। এখনও পর্যন্ত লক্ষাধিক বৃক্ষরোপণ করেছেন বলে জানালেন। অশোকনগর থানা, হাসপাতাল, বিদ্যালয়, সরকারি অফিস চত্বর, হাবড়া-নৈহাটি সড়কের পাশে বহু গাছ তাঁর হাতে পোঁতা। এলাকার এমন জায়গা খুঁজে বের করা কঠিন, যেখানে তিনি গাছ লাগাননি।
অনেক গাছ এখন বড় হয়ে ফুল ফল ছায়া দিচ্ছে। সে দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বঙ্কিম। কেবল বৃক্ষরোপণ করেই তিনি দায়িত্ব শেষ করেন না। গাছগুলি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করেন। তাঁর কাছে বছরের প্রতিটি দিনই বৃক্ষরোপণ দিবস। সারা বছরই এ কাজ করেন।
এলাকার মানুষজন, জনপ্রতিনিধি সহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যেরা বৃক্ষরোপণ করতে হলে বঙ্কিমের কাছ থেকে গাছের চারা নিয়ে যান। শুক্রবার, বিশ্ব পরিবেশ দিবসে তাঁর বাড়ি থেকে ৫০-৬০টি গাছের চারা নিয়ে গিয়েছেন অনেকে। বঙ্কিম নিজেও এ দিন নালন্দামোড় কালীতলা সহ কয়েকটি এলাকায় শতাধিক গাছ পুঁতেছেন। এলাকার মানুষ, বিশেষ করে যুবকেরা তাঁকে সহযোগিতা করেছেন বলে জানালেন। সামাজিক অনুষ্ঠানে কেউ নিমন্ত্রণ করলে গাছের চারা উপহার দিয়ে থাকেন বলে জানালেন বঙ্কিম।
যখন চাকরি করতেন, তখন বেতনের টাকায় গাছের চারা কিনে রোপন করতেন, বিলি করতেন। এখন পেনশনের টাকায় একই কাজ করে চলেছেন।
সাম্প্রতিক আমপানের দাপটে প্রচুর গাছগাছালির মৃত্যু দেখে মানসিক কষ্টের মধ্যে আছেন বৃদ্ধ। সকলকে অনুরোধ করে বলছেন, ‘‘গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছ না বাঁচলে আমরাও বাঁচব না। আমাদের বেঁচে থাকার একটাই পথ, আরও বেশি করে গাছ লাগানো।’’
এই কাজে তাঁকে স্ত্রী মালতি তাঁকে সব সময়ে সহযোগিতা করেন, উৎসাহ দেন। মালতি অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা। বঙ্কিম বলেন, ‘‘স্ত্রী বাধা দিলে আমি গাছ নিয়ে এ ভাবে থাকতে পারতাম না। সব সময়ে উনি সহযোগিতা করেন।’’
পুরসভার প্রশাসক প্রবোধ সরকার বলেন, ‘‘নিজের পকেটের টাকা দিয়ে উনি বৃক্ষরোপণ করেন। এই বয়সেও কাজ করে চলেছেন। পুরসভার তরফেও ওঁকে সম্মান জানিয়েছিলাম। উনি আমাদের গর্ব।’’ অশোকনগরের প্রাক্তন বিধায়ক সত্যসেবী করের কথায়, ‘‘বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে আমরা সকলে ওঁকে শ্রদ্ধা করি। গাছ অন্ত প্রাণ মানুষটা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy