Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Egypt

পিরামিড মানে অপার বিস্ময়

ইতিহাসের অন্যতম এবং প্রায় অক্ষত আশ্চর্য মিশরের পিরামিড। এর সুবিশাল উচ্চতা ও শৈলীর সামনে দাঁড়ালে বাক্‌রুদ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় থাকে নাতবে খ্রিস্টপূর্ব ২৫৬০ অব্দে একদল লোক ভাবল, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সৌধ বানাবে, যা উচ্চতায় ৪৮১ ফুট আর চওড়ায় ৭৫৬ ফুট।

সোনার বরণ: গিজ়া মালভূমিতে স্ফিংস ও পিরামিড

সোনার বরণ: গিজ়া মালভূমিতে স্ফিংস ও পিরামিড

আবাহন দত্ত
শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:২১
Share: Save:

গিজ়া শহরের এক প্রান্তে গিজ়া মালভূমি। জগদ্বিখ্যাত চারকোনা বিশালাকৃতি ইমারতগুলো তার উপরেই। শহরের রাস্তা ধরে এগোতে থাকলে অনেক দূর থেকেই চোখে পড়ে এই চত্বর— গিজ়া পিরামিড কমপ্লেক্স। কেমন লাগে? বলা মুশকিল। প্রথম যখন নিজের চোখে দেখলাম, তখন রোমাঞ্চই বেশি হচ্ছিল। ছোটবেলা থেকে বইয়ে পড়া এক রহস্যঘেরা ইতিহাস আচমকা সাকার হয়ে উঠলে বোধহয় তেমনই হওয়ার কথা।

দূর থেকে খুব স্পষ্ট বোঝা যায় না পিরামিডগুলো। রোদ আর ধুলো মিলিয়ে দৃষ্টিপথ ঝাপসা। মালভূমি বেয়ে যখন তার সামনে পৌঁছলাম, তখন যেন নিজে থেকেই বিস্ময়সূচক শব্দ বেরিয়ে এল মুখ থেকে! বাক্‌রুদ্ধ হয়ে যাওয়াও আশ্চর্য নয়। স্বদেশে তাজমহল দেখেছি, ভিনদেশে বরোবুদুর, সব বিরাট বিরাট সৌধ, কিন্তু কখনও এত বড় এবং বিচিত্র কোনও সৃষ্টি দেখেছি বলে মনে করতে পারলাম না। বহু মাথা খাটিয়েও এই মাপের আন্দাজ পাওয়া কঠিন। এক-একটা চৌকো পাথর ১০-১৫ টন, সে রকম হাজার হাজার পাথর দিয়ে উঠে গিয়েছে এক বিশাল চারকোনা সৌধ। মিশরে অনেকেই বিশ্বাস করেন, পিরামিড মানুষের তৈরি নয়, ভিনগ্রহের প্রাণীদের বানানো! এ রকমও প্রচলিত যে, কোনও জাদুমন্ত্র বলে পাথরগুলোর ওজন শূন্য করে ফেলে সেগুলো পরপর সাজিয়ে পিরামিড বানানো হয়েছিল! এ সব কথাও কেন ভিতর থেকে বিশ্বাস করা সম্ভব, পিরামিডের সামনে না পৌঁছলে বুঝতাম না।

তবু যুক্তি দিয়ে ভাবতে তো হবেই। জানলাম, কিছু পাথর এসেছিল ওই এলাকার খনি থেকে, বাকিটা দক্ষিণ মিশরের আসোয়ান থেকে নীলনদ হয়ে। সেই সব পাথর কী ভাবে সাজানো হয়েছিল কিংবা অত উঁচুতে তোলা হয়েছিল, তা নিয়ে অবশ্য নিশ্চিত নন ইতিহাসবিদেরা। তবে অনেক রকম জ্যামিতিক হিসেবের কথাই বলা হয়। কেন তৈরি হয়েছিল পিরামিড? প্রাচীন মিশরীয়রা জন্মান্তরে বিশ্বাস করত। সেই সভ্যতার চতুর্থ রাজবংশের আমলে তাই গিজ়া মালভূমির উপরে তৈরি হয় এই আশ্চর্য সমাধিক্ষেত্র। সেখানেই আছে তিন ফারাও খুফু, খাফরে আর মেনকাউরে-র বিরাট পিরামিডগুলো। আছে স্ফিংস, আরও অনেক সমাধি এবং শিল্প-শ্রমিকদের গ্রাম। প্রাচীন কালের পৃথিবীর সাত আশ্চর্যের মধ্যে পিরামিডই সবচেয়ে পুরনো এবং অনেকাংশে অক্ষত।

তবে খ্রিস্টপূর্ব ২৫৬০ অব্দে একদল লোক ভাবল, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সৌধ বানাবে, যা উচ্চতায় ৪৮১ ফুট আর চওড়ায় ৭৫৬ ফুট। আর তা বানিয়েও ফেলল, এটা বিশ্বাস করতে সত্যি একটু অস্বস্তি হয়। তারা তো যেমন-তেমন করে বানায়নি। পিরামিডগুলোর উপরে ছিল আলাবাস্তার চুনাপাথরের আবরণ। তার ফলে অত বড় ইমারতগুলো সব সময়ে চকচক করত। এখন আমরা যা দেখে এত অবাক হই, তা কিন্তু কেবল ভিতরের কঙ্কাল। উচ্চতাও সেই সময়ের চেয়ে ২৬ মিটার কম। আসলে মৃত মানুষকে জীবন্তের মতো করে রেখে দেওয়ার জন্য ৭০ দিন ধরে এক কঠিন চিকিৎসাপ্রণালী— মমিফিকেশন— চালানোও তো প্রায় অবিশ্বাস্য এক ব্যাপার। সেই মমিকে রাখার ঘর, পিরামিড যে আরও তাজ্জব হবে, তা আর বেশি কথা কি!

ফারাও খুফুর পিরামিডটাই আকারে সবচেয়ে বড়, তার নাম গ্রেট পিরামিড। পাথরের ধাপে ধাপে এর গা বেয়ে কিছুটা ওঠা যায়। ভিতরে নামার ব্যবস্থাও আছে। তবে পিরামিডে নামার উত্তেজনাটুকু ছাড়া বাকিটা বেশ কষ্টকর। ভিতরেও কিচ্ছু নেই। ফারাওদের আমলে পিরামিডের ভিতরে যে মমি এবং ধনরত্ন থাকত, তার বেশির ভাগই লুঠ হয়ে গিয়েছে, বাদবাকিটা এখন মিউজ়িয়ামে।

খুফুর পিরামিডের সামনে থেকে ঘোড়ার গাড়িতে উঠলাম। বাকি দুই পিরামিড পেরিয়ে সেটা চলল একেবারে সাহারা মরুভূমির ভিতরে, একটা বালির পাহাড়ের দিকে। সেখান থেকে গোটা মালভূমির একটা প্যানোরোমিক ভিউ পাওয়া যায়। একসঙ্গে তিনটে বড় পিরামিড এবং তার সঙ্গে তিনটে ছোট পিরামিড মিলিয়ে গোটা চত্বরটা দেখা যায়। গিয়ে দাঁড়ানোর পরে যে দৃশ্য দেখলাম, তার বর্ণনা করতে গেলে লালমোহনবাবুর শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া উপায় নেই— ‘সাহারায় শিহরণ’! ধু ধু মরুভূমির মধ্যে ছ’টা পিরামিড, পাশ দিয়ে এক চিলতে রাস্তা। এই দৃশ্য দেখার জন্যই তো মিশরে আসা।

গিজ়ার পরে মেম্ফিস-সাকারা না গেলে ভ্রমণ শেষ হয় না। গিজ়ার দক্ষিণে ফারাওদের রাজধানী ছিল মেম্ফিস। গিজ়া থেকে দাহশুর পর্যন্ত যতগুলো পিরামিড চত্বর আছে, পুরোটা মিলিয়েই ইউনেসকো ওয়র্ল্ড হেরিটেজ সাইট। এই সমস্ত সমাধিক্ষেত্র মেম্ফিস শহরকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল। এই এলাকায় সবুজ কিছু বেশি। অধুনা গঞ্জ শহর, একটা খালের ধার ধরে অনেকটা রাস্তা যেতে হয়। দ্রষ্টব্য বলতে ওপেন এয়ার মিউজ়িয়াম। সেখানে ফারাও দ্বিতীয় রামসেসের অনেক মূর্তি আছে, আছে সে যুগের কিছু হায়রোগ্লিফিক্স লেখা এবং সমাধির অন্যান্য নমুনা।

সাকারায় আছে ফারাও জ়োসেরের বিখ্যাত স্টেপ পিরামিড। এটাও মরুভূমির মধ্যে, শহর ছাড়িয়ে একটু উঁচুতে। সাকারার কিছু সমাধির ভিতরে অবশ্য দেওয়াল জুড়ে ছবি আঁকা এবং হায়রোগ্লিফিক্সে লেখা দেখতে পেলাম।

এ সব ছবি খুব অপরিচিত বলব না। বাঙালি ছেলেবেলার সঙ্গে মিশরের প্রতি টান পরতে পরতে জড়িয়ে। তাই জানাও। খানিকটা ইতিহাস বইয়ে, খানিকটা রহস্যে। তাকে চাক্ষুষ করার পরে যে ঘোর লাগবে, তা বলাই বাহুল্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Egypt Pyramid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy