Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

নীল-সবুজের মেলা, উত্তরবঙ্গের গজলডোবা পাখি-প্রকৃতির অপরূপ মিলন

তিস্তা এখানে খরস্রোতা নয়। পাহাড়ের পাদদেশে এখানে নদী প্রশস্ত, ধীর-স্থির। চারপাশে অরণ্য।

নীলিমা: নৌকায় চেপে ভ্রমণ

নীলিমা: নৌকায় চেপে ভ্রমণ

ঊর্মি নাথ
শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ০১:০৩
Share: Save:

চখাচখিদের ডাকে গজলডোবা এখন মুখর, খবরটা পেয়েই ছুট দিয়েছিলাম উত্তরবঙ্গে। জলপাইগুড়ির ওদলাবাড়ি অঞ্চলের ছোট্ট গ্রাম এই গজলডোবা। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ১৮-১৯ কিলোমিটার দূরে। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে এখানে তিস্তা নদীর উপরে বাঁধ দেওয়া হয়। তিস্তা ব্যারেজ হওয়ায় শিলিগুড়ি থেকে ডুয়ার্স যাওয়ার রাস্তাটাও সুগম হয়েছে। ফলে পরিচিতি বেড়েছে পর্যটকদের কাছে। আছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটক বিভাগের থাকার জায়গা ‘ভোরের আলো’।

তিস্তা এখানে খরস্রোতা নয়। পাহাড়ের পাদদেশে এখানে নদী প্রশস্ত, ধীর-স্থির। চারপাশে অরণ্য। শান্ত, সবুজ, বিস্তৃত এই প্রকৃতির মাঝে শীতের শুরুতেই মধ্য এশিয়া, ইউরোপ ও পৃথিবীর অন্যান্য জায়গা থেকে দল বেঁধে চলে আসে পরিযায়ী পাখির দল। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এখানে জলে, ডাঙায়, আকাশে সব জায়গায় পাখি। আর এটাই গজলডোবার আকর্ষণ।

এনজেপি থেকে গাড়ি ভাড়া করে গজলডোবা আসতে সময় লাগল এক ঘণ্টা। স্টেশনের ওয়েটিং রুমে ফ্রেশ হয়ে, ভারী প্রাতরাশ সেরে যাত্রা শুরু করেছিলাম। তিস্তা ব্যারেজে গাড়ি থেকে নামতেই চোখে পড়ল দূরে পাখিদের ওড়াউড়ি। উদ্দেশ্য ছিল নদীর বুকে ভাসতে ভাসতে পাখিদের ছবি তোলা। যাঁরা তিস্তায় মাছ ধরেন, তাঁরাই নৌকা করে নিয়ে যান নদীতে। পর্যটকদের নিয়ে যেতে যেতে এখন তাঁরা মাঝি কাম গাইড। প্রায় সব পাখির নাম তাঁদের কণ্ঠস্থ। এমনকি কোন পাখির ঝাঁক কোথায় থাকতে পারে, সে আন্দাজও তাঁরা দিতে পারেন। তবে এখানকার নৌকাগুলি বেশ সরু। মাঝি ছাড়া দু’জনের বেশি জায়গা হয় না একটায়। দাঁড় টেনে কিছু দূর এগোতেই চোখে পড়ল একঝাঁক রাডি শেলডাক। তাদের কমলা ডানা ফ্রেমবন্দি করতেই চোখ চলে গেল দূরে ভেসে যাওয়া আর একদল নর্দার্ন পিনটেলের দিকে। তাদের থেকে চোখ সরাতেই উড়ন্ত মালাড। কিছু দূর যাওয়ার পরে দেখি, তিস্তার নীল জল আর সবুজ পাহাড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা! এমন চমৎকার ল্যান্ডস্কেপ চুপ করিয়ে দিল কিছুক্ষণের জন্য।

জুটিতে: নদীর চরে চখাচখির মেলা

এক সময়ে নৌকা এসে থামল চরে। সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে রেড নেপড আইবিস, রিভার ল্যাপউইং, লিটল রিংড প্লোভার, নর্দার্ন ল্যাপউইং... আরও কত কী! ভ্রমণের মাঝে গল্প জুড়লেন মাঝি। ওই যে দূরে অরণ্যে, তার নাম বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল। কথিত আছে, সেখানে নাকি রুক্মিণীকে নিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এই অরণ্যে তাঁরা লুকিয়েছিলেন। ঘটনার সত্য-মিথ্যা যাচাই করার দরকার অবশ্য পড়েনি। এমন প্রকৃতির মাঝে পালিয়ে এসে থাকতে মন্দ লাগবে না!

ছবি তুলে, গল্প করে, নদীতে ভেসে গোটা দিনটাই কেটে গেল। দেখা মিলল গুজ়্যান্ডার, লিটল ইগ্রেট, কমন শেলডাক, লেসার হুইসলিং ডাক, টাফটেড ডাক, গ্রে হেডেড ল্যাপউইং, লিটল গ্রেব, কমন টিল, পার্পল হেরন-সহ আরও অনেক পাখির। এই সময়টায় স্থানীর পাখিদেরও সংখ্যা বেশি। দিনের আলো কমতেই পাড়ের দিকে

নৌকা ঘোরালেন মাঝি। ছবি তোলা হল, তার চেয়েও বেশি দেখা হল নয়ন ভরে।

পাড়ে নামতেই মালুম হল, বেজায় খিদে পেয়েছে। গাড়ির চালক তা আগাম আন্দাজ করেই খাবারের অর্ডার দিয়ে রেখেছিলেন ব্যারেজের গায়ে একটি দোকানে। সুস্বাদু বরোলি মাছের ঝাল সহযোগে ভাত খেতে খেতে ভুলে গেলাম তখন বিকেেল চায়ের সময় হয়ে গিয়েছে!

অন্য বিষয়গুলি:

Gajoldoba Tourism Travel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy