এই বালুকাবেলায় : গুটি গুটি পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে পেঙ্গুইন
আফ্রিকায় পেঙ্গুইন! এ যেন ‘সোনার কেল্লা’র মন্দার বোসের আফ্রিকায় নেকড়ের মতোই ব্যাপার! শুনে সে রকম মনে হলেও কথাটা সত্যি। আসলে পেঙ্গুইন বললেই আমাদের অভ্যস্ত চোখের সামনে ভেসে ওঠে, আন্টার্কটিকার হাড়কাঁপানো বরফের মাঝে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে বেড়ানো পেঙ্গুইনের ছবি। সেই পেঙ্গুইন কিনা গরমের দেশে এবং বরফ ছাড়াই! একেবারে গুটিকতক হলেও না হয় কথা ছিল। কিন্তু এখানে দলে দলে!
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে গোটা একটি আবাসন এলাকা পেঙ্গুইনের। সমুদ্রের ধার ঘেঁষে বালুকাবেলায় বড়-ছোট-মাঝারি পেঙ্গুইন হাঁটছে, চলছে, ঘুরছে, একে অপরের সঙ্গে খুনসুটি করছে। কখনও জলে চলে যাচ্ছে। গুটি গুটি পায়ে আবার ফিরে আসছে। কখনও বা ঢেউয়ে স্নান সেরে তীরে এসে রোদ পোহাচ্ছে।
শহর কেপ টাউন থেকে ৪৭ কিলোমিটার দূরে কেপ পয়েন্টের দিকে যেতে কেপ পেনিনসুলায় ‘বোল্ডার্স বিচ পেঙ্গুইন কলোনি’। ক্লেন টুইন রোডের একেবারে পাশেই। গাড়িতে ঘণ্টাখানেকের পথ। আবার ট্রেনেও যাওয়া যায় কেপ টাউন থেকে সাইমনস টাউন। সমুদ্রের পাশ দিয়ে ট্রেনলাইন এবং রাস্তা— উপভোগ্য যাত্রাপথ। সাইমনস টাউন থেকে পায়ে হেঁটেও বোল্ডার্স বিচে পৌঁছে যাওয়া যায়। সুন্দর রাস্তার পাশে অভিজাত রেস্তরাঁ, শ্বেতাঙ্গদের দোকানপাট, সুন্দরীদের আনাগোনা, কৃষ্ণাঙ্গ যুবকদের নাচগান করে অর্থ সংগ্রহ—দেখতে দেখতে কখন বিচে পৌঁছে যাবেন, বুঝতেই পারবেন না।
পেঙ্গুইনদের একদম কাছ থেকে দেখার জন্য পর্যটকেরা চেষ্টার কসুর করেন না। সে কথা মাথায় রেখে কাঠের পাটাতন দিয়ে সমুদ্রের প্রায় কাছাকাছি পযর্ন্ত উঁচু প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। কাঠের মজবুত রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে হয়।
এই পেঙ্গুইনদের ডাক শ্রুতিমধুর নয়। হেঁড়ে এবং কর্কশ। তবে দেখতে ভারী সুন্দর। কালো ডানার মাঝে গলা থেকে পেট সাদা বা ধূসর রঙের পেঙ্গুইন ধীর পায়ে যখন হাঁটে, দেখে মনে হয়, ঠিক যেন ধুতির উপরে কোট পরিহিত সে কালের কেতাদুরস্ত বনেদি বাঙালি ভদ্রলোক!
বোল্ডার্স বিচের পেঙ্গুইনরা জ্যাকাস প্রজাতির। নামিবিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার সমুদ্র উপকূল বরাবর পোর্ট এলিজ়াবেথ পর্যন্ত এদের দেখা মেলে। তবে বোল্ডার্স বিচের মতো অন্য কোথাও এত ভিড় নেই।
বোল্ডার্স বিচে এই পেঙ্গুইনরা কী করে এসে পড়ল, সেটাও বলার মতো গল্প। ১৯৮২ সালে এক জোড়া পেঙ্গুইন দম্পতি কী করে যেন পথ ভুলে এই বিচে এসে বাসা বাঁধে। কোটি কোটি বছর বয়সি বড় বড় গ্রানাইটের বোল্ডার, আবহাওয়ার রোষ থেকে ওদের রক্ষা করে। ধীরে ধীরে এই বিচের ঝোপঝাড়, জলপ্রপাত ওদের প্রিয় চারণভূমি হয়ে ওঠে। আজকের এই পেঙ্গুইনকুল সেই হঠাৎ হাওয়ায় ভেসে আসা দম্পতিরই শাখাপ্রশাখা!
১৯১০ সালে এ দেশে পেঙ্গুইনের সংখ্যা ছিল পনেরো লক্ষের মতো। এখন তা নেমে দাঁড়িয়েছে কয়েক হাজারে। খাদ্য হিসেবে পেঙ্গুইনের ডিমের বহুল ব্যবহার, জমিতে সার হিসেবে পেঙ্গুইনের বিষ্ঠা ব্যবহারের জন্য ওদের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। লাগামছাড়া মৎস্য শিকার, বেজি, বিড়াল, কুকুরের চোরাগোপ্তা আক্রমণ, এ সবের জন্যও পেঙ্গুইনের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। জলেও যে এরা নিরাপদ, তা কিন্তু নয়। সেখানেও ফাঁদ পেতে বসে থাকে হাঙর-তিমি।
তবু ওয়ার্ডসওয়র্থের ‘ড্যাফোডিলস’ কবিতার পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করে বলতে চাই, ‘থাউজ়্যান্ডস আই স অ্যাট আ গ্লান্স।’ সেটাই আমার আশা, উত্তমাশা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy