Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Tokyo Olympic 2020

Tokyo Olympics: মহিলা হকি দলের সাফল্যের পিছনে সব থেকে বেশি অবদান যাঁর, চিনে নিন সেই শোয়ার্ড মারিনকে

২০১৬-য় অলিম্পিক্সে সবার শেষে শেষ করেছিল মহিলা হকি দল। এরপরেই তৎকালীন পুরুষ দলের কোচ রোলান্ট অল্টমান্স মহিলা দলের কোচ হিসেবে মারিনের নাম তোলেন হকি ইন্ডিয়ার কর্তাদের কাছে।

শোয়ার্ড মারিন

শোয়ার্ড মারিন ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২১ ০৯:১২
Share: Save:

গত সপ্তাহের কথা। অলিম্পিক্সের প্রথম তিন ম্যাচে হারের হ্যাটট্রিকের পর নিজের ঘরে মহিলা হকি দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকলেন কোচ শোয়ার্ড মারিন। দুরু দুরু বুকে মেয়েরা হাজির হলেন কোচের ঘরে। বেশিরভাগেরই ধারণা ছিল কোচ হয়তো রাগারাগি করবেন এবং বকুনি দেবেন।

ব্যাপারটা মোটেই সে দিকে গড়ায়নি। মারিন একটাও কথা বলেননি। তার বদলে খেলোয়াড়দের দেখালেন একটা অনুপ্রেরণামূলক সিনেমা। ঘণ্টা আড়াই এ ভাবে যাওয়ার পর কিছু টুকটাক কথা বলে প্রত্যেককে বিদায় জানালেন। কিন্তু ততক্ষণে গোটা ঘরের আবহ বদলে গিয়েছে। যাঁরা ভয় নিয়ে ঘরে ঢুকেছিলেন, প্রত্যেকেই বুক ফুলিয়ে বেরিয়ে আসছেন।

মানসিকতার এই বদল দেখা গেল পরের ম্যাচগুলিতে। অলিম্পিক্স থেকে প্রায় ছিটকে যাওয়া একটা দল ঘুরে দাঁড়াল এবং কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়ে দিল তিন বারের সোনাজয়ী অস্ট্রেলিয়াকে। এই অসাধ্য সাধনের পিছনে যদি সব থেকে বেশি কারওর হাত থেকে থাকে, তিনি নেদারল্যান্ডসের কোচ শোয়ার্ড মারিন।

২০১৬-য় অলিম্পিক্সে সবার শেষে শেষ করেছিল মহিলা হকি দল। এরপরেই তৎকালীন পুরুষ দলের কোচ রোলান্ট অল্টমান্স মহিলা দলের কোচ হিসেবে মারিনের নাম তোলেন হকি ইন্ডিয়ার কর্তাদের কাছে। তখনকার বিশ্বের এক নম্বর মহিলা হকি দল নেদারল্যান্ডসের কোচ ছিলেন মারিন। তবু ভারতের প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দেননি।

এসে যা দেখেছিলেন, তাতে খুব একটা প্রফুল্ল হতে পারেননি মারিন। দলের অনেক মহিলা খেলোয়াড় গোল করা তো দূর, ঠিক করে দৌড়তে পারতেন না। ফিটনেসের চূড়ান্ত অভাব ছিল। জেতার খিদে নেই। ব্যক্তিগত লক্ষ্যপূরণে বেশি ব্যস্ত ছিলেন। ‘চক দে ইন্ডিয়া’ সিনেমায় পর্দার কবীর খান যে ভাবে দেশকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, সে ভাবেই মহিলা দলের খোলনলচে বদলাতে নামলেন মারিন।

দলে আনা হল একাধিক নতুন খেলোয়াড়কে। যাঁরা অযোগ্য ছিলেন তাঁরা একে একে বাদ পড়লেন। দলকে কড়া অনুশীলনে ব্যস্ত রাখতেন তিনি।

রানির সঙ্গে মারিন।

রানির সঙ্গে মারিন।

যখন দলটিকে নিজের হাতে প্রায় গড়ে তুলেছেন, তখনই এল বিপদ। ২০১৮ কমনওয়েলথ গেমসের আগে রাতারাতি পুরুষ দলের কোচ করে দেওয়া হল মারিনকে। মহিলা দলের কোচ হলেন হরেন্দ্র সিংহ। মারিনের কোচিং ছকে কমনওয়েলথ গেমস থেকে মহিলারা পদক জিতলেন বটে, কিন্তু পুরুষদের হকিতে মিলল চূড়ান্ত ব্যর্থতা। দীর্ঘদিন পর কমনওয়েলথ হকিতে খালি হাতে ফিরেছিল ভারত।

আবারও আসরে নামল হকি ইন্ডিয়া। মারিন এবং হরেন্দ্রর ভূমিকা অদল-বদল করা হল। মহিলা দলের কোচিং ফিরে পেলেন মারিন। সেখান থেকেই পরিবর্তনের শুরু।

বিদেশি দলগুলির বিরুদ্ধে যত বেশি সম্ভব ম্যাচ খেলিয়ে রানি রামপালদের তৈরি করতে চাইছিলেন মারিন। তবে বাধ সাধল অতিমারি। খেলাধুলো বন্ধ হয়ে গেল। মারিনের স্ত্রী এবং তিন সন্তান বিপদে ছিলেন নেদারল্যান্ডসে। মারিনও দ্রুত দেশে ফিরবেন ঠিক করেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর থেকে ফিরে যান। পরে এক সাক্ষাৎকারে নিজের এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, দেশে গেলে যদি আর ফিরতে না পারেন? রানি রামপালদের নিয়ে তাঁর যে স্বপ্ন তা তো অপূর্ণই থেকে যাবে। ফিরতে না পারার ভয়েই ভারত ছাড়েননি।

বাইরে অনুশীলনের সুযোগ ছিল না। ঘরের মেয়েদের ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য কিছু কাজ দেন মারিন। আগেই নিজের সহকারী হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন ইয়ানেকে স্কোপম্যানকে। তাঁর সঙ্গে জুটি বেধে মহিলা দলের খেলার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করতে বসেন। মেপে নেন প্রতিপক্ষদেরও।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য চলতি বছরে একের পর এক সফর বাতিল হয়ে গিয়েছিল। মারিন কোনও অভিযোগ করেননি। বরং মেয়েদের শারীরিক শক্তি এবং দক্ষতার পাশাপাশি মানসিক শক্তিতে বিশেষ জোর দিয়েছেন। তারই ফল মিলেছে অলিম্পিক্সে। বিশ্বের সেরা দলগুলির বিরুদ্ধে টক্কর দিতে ভয় পাননি রানি, বন্দনা কাটারিয়া, সেলিমা টেটে, শর্মিলা চানুরা। মহিলা দলের খেলায় উল্লসিত হয়ে টুইট করেছেন খোদ শাহরুখ খানও।

ইতিহাস তৈরি করেছে মহিলা দল। আর সেই ইতিহাস তৈরির অন্যতম নেপথ্যনায়ক যদি কেউ থেকে থাকেন, তাহলে তিনি নিঃসন্দেহে এই ডাচ কোচ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy