উইম্বলডনের প্রথম রাউন্ডে ভিনাস উইলিয়ামসকে হারানোর পরে ইউক্রেনের এলিনা শ্বিতোলিনার। ছবি: রয়টার্স
মাসখানেক আগে ফরাসি ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালের পরে বিদ্রুপ শুনতে হয়েছিল এলিনা শ্বিতোলিনাকে। কারণ, প্রতিপক্ষ আরিনা সাবালেঙ্কার কাছে হেরে তাঁর সঙ্গে হাত মেলাননি শ্বিতোলিনা। নেপথ্যে কোনও ব্যক্তিগত সমস্যা নেই। সমস্যা দুই দেশের। শ্বিতোলিনা ইউক্রেনের। আর সাবালেঙ্কার বেলারুসের। সেই বেলারুস যারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ ঘোষণার পর থেকে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশকে সমর্থন করছে। সেখানে ব্যক্তিগত লড়াইয়ের থেকে বড় হয়ে উঠেছিল দেশের লড়াই। সেই লড়াই দেখা যাচ্ছে উইম্বলডনেও। ইউক্রেন ও রাশিয়ার খেলোয়াড়েরা ভাল ভাবেই তা টের পাচ্ছেন।
উইম্বলডনের প্রথম রাউন্ডেই ভিনাস উইলিয়ামসকে হারিয়েছেন শ্বিতোলিনা। পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নকে হারিয়েও তাঁর মন পড়ে ইউক্রেনে। পরিবার কেমন আছে, সেই চিন্তা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাঁকে। শ্বিতোলিনা বলেন, ‘‘সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই খবর দেখে নিই। কোর্টে থাকলেও পরিবারের খবর নিই। দেশের পরিস্থিতি কেমন আছে, সে দিকে নজর থাকে। এটাই এখন আমার রোজনামচা।’’
টেনিসে স্বপ্নের সময় কাটাচ্ছেন শ্বিতোলিনা। ফরাসি ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলেন। উইম্বলডনের সেমিফাইনালেও খেলেছেন। এ বারও অবাছাই হিসাবে সুযোগ পেয়ে প্রথম রাউন্ডেই হারিয়েছেন ভিনাসকে। কিন্তু তাঁর মন পড়ে রয়েছে ইউক্রেনে। শ্বিতোলিনা বলেন, ‘‘আমি তো এখন ভাল আছি। দেশের বাইরে আছি। কিন্তু দেশে কত মানুষ দুঃখে আছে। সেটা সব সময় মনে করার চেষ্টা করি। ওদের জন্যই ভাল খেলার একটা বাড়তি তাগিদ অনুভব করি।’’
ফরাসি ওপেনে শোনা বিদ্রুপ মনে রাখতে চান না শ্বিতোলিনা। উইম্বলডনে সমর্থন পাচ্ছেন তিনি। তাতেই খুশি ইউক্রেনের ২৮ বছরের টেনিস তারকা। শ্বিতোলিনা বলেন, ‘‘ইংল্যান্ডে অনেক সমর্থন পাচ্ছি। শুধু আমি নই, ইউক্রেনের প্রতি এখানকার মানুষের একটা সমর্থন রয়েছে। সেটা দেখে খুব ভাল লাগছে।’’
২০২২ সালে রাশিয়ার টেনিস খেলোয়াড়দের নির্বাসিত করেছিল উইম্বলডন। এ বার সেই নির্বাসন তুলে নিয়েছে তারা। কিন্তু তার একটা শর্ত রয়েছে। রাশিয়া ও বেলারুসের খেলোয়াড়দের লিখিত ভাবে জানাতে হচ্ছে যে প্রতিযোগিতা চলাকালীন তাঁরা নিরপেক্ষ থাকবেন। অর্থাৎ, কোনও ভাবেই ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণকে সমর্থন করতে পারবেন না। এমনকি রাশিয়ার সরকার ও সরকার-অনুমোদিত সংস্থা থেকে আর্থিক সাহায্য নিতে পারবেন না। সেই চুক্তিতে সই করার পরেই খেলার সুযোগ পেয়েছেন ড্যানিল মেদভেদেভ, আন্দ্রে রুবলেভ, ভেরোনিকা কুদেরমেতোভারা।
যদিও গত বছর তাঁদের নির্বাসিত করার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি রুবলেভ। তাঁর মতে, এতে নিজেদেরই ক্ষতি করেছিল উইম্বলডন। পুরুষদের ক্রমতালিকায় সাত নম্বরে থাকা রুবলেভ বলেন, ‘‘নির্বাসিত না করে অন্য কোনও উপায় বার করা যেত। এটা করে ওরা নিজেদেরই ক্ষতি করেছে। কারণ, আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা টেনিস খেলোয়াড়। যদি ওরা টেনিসের উন্নতি চাইত, তা হলে অন্য কিছু ভাবতে পারত।’’
তার মধ্যেই মে মাসে মাদ্রিদ ওপেনে রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের সংস্থা ট্যাটনেফ্টের লোগো লাগানো পোশাক পরে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন কুদেরমেতোভা। কারণ, এই সংস্থা রাশিয়ার সেনাকে গাড়ির টায়ার সরবরাহ করে। সরাসরি পুতিনের সঙ্গে যোগ রয়েছে সংস্থার মালিকের। কুদেরমেতোভাকে পুরস্কারও দিয়েছে তারা। রাশিয়ান খেলোয়াড় অবশ্য জানিয়েছিলেন, উইম্বলডনে খেলার জন্য সংস্থার লোগো নিজের পোশাক থেকে সরিয়ে দেবেন তিনি। সেটা করেছেন। কিন্তু তার পরেও বিতর্ক কমছে কি? কোর্টে হয়তো দু’দেশের খেলোয়াড়েরা মুখোমুখি হচ্ছেন, কিন্তু কোর্টের বাইরে! দেখা হলে কথা হচ্ছে? কুদেরমেতোভা বলেন, ‘‘ইউক্রেনের খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা হলে কুশল বিনিময়ের চেষ্টা করছি। কেউ পাল্টা জবাব দিচ্ছে। আবার কেউ মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছে।’’
ঠিক যেমনটা সাবালেঙ্কার সঙ্গে হাত না মিলিয়ে চলে গিয়েছিলেন শ্বিতোলিনা। নেটের কাছে কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করে তার পর চলে যান সাবালেঙ্কা। সেই বিবাদ কিন্তু উইম্বলডনেও চলছে। কোর্টের লড়াইয়ের বাইরেও হচ্ছে অন্য একটি লড়াই। কখনও কখনও তা আবার ছাপিয়ে যাচ্ছে কোর্টের লড়াইকেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy