Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
T20 World Cup 2024

বস্তি থেকে বিশ্বকাপ! কী ভাবে ক্রিকেট বিশ্বকাপের মঞ্চে উঠে এল ফুটবল পাগল উগান্ডা

এ বারই প্রথম বিশ্বকাপে খেলতে নামবে উগান্ডা। যে দেশের বড় অংশ বস্তিতে থাকে, সেই দেশ কী ভাবে ক্রিকেটের মঞ্চে নিজেদের জায়গা করে নিল?

cricket

উগান্ডার কয়েক জন ক্রিকেটার। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৪ ১৭:০৯
Share: Save:

দেশের রাজধানীর ৬০ শতাংশ মানুষ বাস করেন বস্তিতে। সেখানেই জন্ম জুমা মিয়াগির। যে দেশের মানুষ কয়েক বছর আগেও খেলা বলতে শুধুই ফুটবল বুঝতেন সেই দেশ এখন টেলিভিশনের পর্দায় ভিড় করেন মিয়াগিকে দেখতে। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম বার খেলতে নামবে আফ্রিকার এই দেশ। সেখানে দলের বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দেবেন এই মিয়াগি।

কী ভাবে ফুটবল পাগল দেশে জায়গা করে নিল ক্রিকেট? তার প্রধান কারণ অর্থ। ক্রিকেট খেললে রোজগার বেশি। উগান্ডায় আগে ক্রিকেটের চল না থাকলেও কেনিয়া, জ়িম্বাবোয়ের মতো দেশে ছিল। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে আফ্রিকার এই দেশে ক্রিকেট ছড়ায়। দু’বছর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপও খেলেছিল উগান্ডা। সেই দলে ছিলেন মিয়াগি।

২১টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলে ৩৪টি উইকেট নিয়েছেন মিয়াগি। তাঁর সতীর্থ সিমন সেসাজি, ইনোসেন্ট মেওয়েবাজ়েরাও বস্তি থেকেই উঠে এসেছেন। এমন জায়গায় তাঁরা থাকেন, যেখানে পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবাই ঠিক মতো পাওয়া যায় না। কিন্তু হাল ছাড়েননি তাঁরা। ক্রিকেট খেলে যে রোজগার করেন তা থেকে নিজেদের এলাকার উন্নতি করারও চেষ্টা করেন তাঁরা।

ক্রিকেটারদের এই লড়াই কাছ থেকে দেখেছেন দলের প্রধান কোচ অভয় শর্মা। বিশ্বকাপের আগে দায়িত্ব নিয়েছেন এই ভারতীয়। মুম্বইয়ের বাসিন্দা অভয় জানেন বস্তির জীবন কেমন হয়। কারণ, এশিয়ার সবচেয়ে বড় বস্তি মুম্বইয়ের ধারাভিকে তিনি কাছ থেকে দেখেছেন। বিশ্বের যে দেশই হোক না কেন, বস্তি থেকে রাজপথে উঠে আসার গল্পটা অনেকটা একই।

তাই বিশ্বকাপে খেলা মিয়াগিদের কাছে জবাব দেওয়ার লড়াই। তাঁদের এলাকার মানুষদের বিশ্ব মানচিত্রে তুলে ধরার লড়াই। অভয়ের মুখে শোনা গিয়েছে সেই কথা। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। আমি দলের দায়িত্ব নেওয়ার আগে জানতাম না ওরা কোন পরিবেশে বড় হয়েছে। যেখানে বেঁচে থাকার জন্যই লড়াই করতে হয়, সেখানে ক্রিকেট খেলেছে ওরা। কোচকে ওরা সম্মান জিতে জানে। ওরা জানে, বিশ্বকাপে একটু ভাল খেলতে পারলে গোটা বিশ্বের নজরে পড়বে।”

ক্রিকেট এখনও সে দেশে পেশাদার নয়। তাই খেলার পাশাপাশি অন্যান্য জীবিকাও রয়েছে ক্রিকেটারদের। তবে সবাই যে অন্য কোনও কাজ করেন তা-ও নয়। তবে আমেরিকা,কানাডা বা ওমানের মতো অন্য দেশ থেকে নয়, নিজেদের দেশের ক্রিকেটারদের উপরেই নির্ভর করে উগান্ডা।

অভয়ের হাত ধরে ক্রিকেটে পরিচিতি চাইছে উগান্ডা। অভয় চান না, কেনিয়ার মতো অবস্থা তাদের হোক। সেই কারণে, একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগোতে চাইছেন তিনি। অভয় বলেন, “২০১১ সালের আগে কেনিয়া ক্রিকেটে পরিচিত নাম ছিল। কিন্তু তার পরে আসতে আসতে হারিয়ে গেল তারা। আমি চাই না উগান্ডার সঙ্গেও সেটা হোক। তাই অনূর্ধ্ব-১৬ স্তরে আরও উন্নতি দরকার। এখন অনূর্ধ্ব-১৯ স্তরে আমরা ভাল করছি। কিন্তু আরও অল্প বয়স থেকে ক্রিকেটার তুলে আনতে হবে। ওদের ভিত মজবুত করতে হবে। তা হলে অনেক বছর খেলতে পারবে ওরা।”

যেটুকু সম্বল আছে, তা নিয়েই এগিয়ে যেতে চাইছেন অভয়। তিনি বলেন, “আমাদের সাধারণ কিছু বিষয়ে আগে জোর দিতে হবে। যেমন, ভাল অনুশীলনের মাঠ থাকতে হবে। কুকাবুরা বলে খেলতে হবে। ঠিক মতো ডায়েট মেনে চলতে হবে। মিয়াগি ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারে। ওর বয়স সবে ২১ বছর। ঠিক মতো তৈরি করতে পারলে ও ভয়ঙ্কর বোলার হয়ে উঠবে।”

৪ জুন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবে উগান্ডা। প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। কয়েক বছর আগে আফগানিস্তানও উগান্ডার মতোই ক্রিকেটের মঞ্চে নিজেদের পরিচিতি তৈরির লড়াই করছিল। সেই লড়াই তারা জিতেছে। সেই আফগানদের বিপক্ষেই আরও একটা লড়াই শুরু হতে চলেছে। এ বার তা করবে উগান্ডা।

অন্য বিষয়গুলি:

T20 World Cup 2024 Uganda T20 Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy