ইউএস ওপেনে সেরিনা উইলিয়ামস। ছবি রয়টার্স।
সেরিনা উইলিয়ামস ৪১-এর দোরগোড়ায়। প্রায় এক বছর টেনিস কোর্ট থেকে দূরে থাকার পরে এই বছরের উইম্বলডন খেলতে নেমেছিলেন। অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সবুজ কোর্টে বোঝা গিয়েছিল, একটা বছর খেলা থেকে সরে থাকলে কী হয়। সেটা আরও স্পষ্ট হয়েছিল টরন্টো এবং ওহিয়োতেও। তিনটি প্রতিযোগিতাতেই শুরুতেই বিদায় নিয়েছিলেন। কোনও কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছিল না। গতি অসম্ভব মন্থর হয়ে গিয়েছিল। রিফ্লেক্স কমে গিয়েছিল। বিপক্ষের যে সেকেন্ড সার্ভগুলিতে গোলার মতো রিটার্ন করতেন, সেখানেই বার বার টাইমিংয়ে গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছিল।
তার পর অবসরের সিদ্ধান্ত এবং আবির্ভাব ইউএস ওপেনে। মন্থর গতি, টাইমিংয়ে গোলমাল— সব কিছুকে শত মাইল পিছনে ফলে নামলেন আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে।
ইউএস ওপেনে গত সোমবারই কি শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন সেরিনা উইলিয়ামস? এই আশঙ্কায় তাঁর ম্যাচ দেখার জন্য গ্যালারি ভরিয়েছিলেন দর্শকেরা। ভরা স্টেডিয়ামে খেলতে নেমে সমর্থকদের হতাশ করেননি ১৯৯৯ সালে প্রথম বার ইউএস ওপেন জেতা সেরিনা। প্রথম রাউন্ডে জেতেন স্ট্রেট সেটে। ডাঙ্কা কোভিনিচকে হারান ৬-৩, ৬-৩ গেমে। প্রথম তিনটি গেমে পাঁচ বার ব্রেক পয়েন্টের সুযোগ পেয়েছিলেন কোভিনিচ। কিন্তু সেরিনার জন্য ছিলেন সমর্থকেরা। সেরিনার খেলা দেখতে উপস্থিত ২৯,৪০২ জন দর্শক। তাঁদের চিৎকার ম্যাচে উজ্জীবিত করে সেরিনাকে। ম্যাচে ফিরে আসেন তিনি। ৪০ বছরের টেনিস তারকা পাঁচ বার বিপক্ষের সার্ভিস ব্রেক করেন।
ম্যাচ জিতে সেরিনা বলেন, “আমি চাই সবাই বুঝুক যে, আমি চেষ্টা করেছিলাম। যতই বাধা আসুক, নিজের সেরাটা দেওয়া জরুরি। কেরিয়ারে অনেক উত্থান-পতন হয়েছে, আমি চাই মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে।”
সোমবারের পুনরাবৃত্তি এক দিন পরেই।
কোর্ট-ভর্তি দর্শক। সকলের মনে আবার প্রশ্ন, এটাই কি শেষ ম্যাচ ২৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালকিনের? শেষ বারের মতো দেখা যাচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েটার শক্তিশালী সার্ভ? ২৩ বছর আগে ১৭ বছরের যে বাচ্চা মেয়েটা ইউএস ওপেন জিতেছিল, সেই মেয়েটাকে আর দেখা যাবে না এই কোর্টে লড়াই করতে? সেই সব প্রশ্নের উত্তর ৭-৬, ২-৬, ৬-২। দ্বিতীয় বাছাই অ্যানেট কোন্টাভেইটকে ৭-৬, ২-৬, ৬-২ গেমে হারিয়ে দেন সেরিনা। আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামের দর্শকদের অন্তত আরও এক বার তাঁকে দেখার সুযোগ করে দিলেন সেরিনা উইলিয়ামস।
আবার উৎকণ্ঠা। সেই দিনটা কবে? প্রথম রাউন্ডে তিনি যখন খেলতে নামছেন, তখন আবহে ক্যুইন লাতিফার ভিডিয়ো। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচেও সেটা শুরুতে দেখানো হয়। কানায় কানায় ভর্তি আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে ছিল চাঁদের হাট। দর্শকাসনে ছিলেন মাইক টাইসন, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা, বিল ক্লিনটন, হিউ জ্যাকম্যান, টাইগার উডসরা। এবং অবশ্যই মা ওরাসিন প্রাইস, মেয়ে অলিম্পিয়া, স্বামী অ্যালেক্সিস ওহানিয়ান। বিদায়ের মঞ্চ তৈরি করে রেখেছিলেন আয়োজকরা। কিন্তু টেনিস দেবতা বোধ হয় চাননি এত সহজে তাঁকে বিদায় দিতে।
ম্যাচের পরে মেরি জো ফার্নান্ডেজ কোর্টেই সেরিনাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘এখানে তুমি যে টেনিস খেলছ, তাতে নিজেই কি অবাক হওনি?’’ সেরিনা তাঁর দিকে তাকিয়ে একটা চাপা হাসি হাসেন। কয়েক সেকেন্ডের একটা নির্বাক মুহূর্ত। বলে দিয়েছিল অনেক কিছু। সত্যিই সেটা বলার জন্য কোনও শব্দের দরকার ছিল না। তবু সেরিনার মুখ দিয়ে বেরিয়েছিল ছ’টি শব্দ, ‘‘আই অ্যাম জাস্ট সেরিনা ইউ নো।’’
হ্যাঁ, তিনি যে সেরিনা, সেটা এই বিদায়বেলাতেও বার বার বুঝিয়ে দিলেন। তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছে সেরিনা বলেন, “কোনও তাড়া নেই। এখনও কিছু দেওয়া বাকি আছে। আমি ভাল খেলোয়াড়। চ্যালেঞ্জ পছন্দ করি। দ্বিতীয় সেট হেরে মনে হয়েছিল এই বোধ হয় সব শেষ হয়ে গেল। নিজেকে বোঝালাম যে সেরাটা দিতে হবে। এই সবই আমার কাছে বোনাস। নিজেকে আর প্রমাণ করার কিছু নেই। কিছু হারানোর নেই।”
সেরিনা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি শুধু অবসর নেওয়ার জন্য ইউএস ওপেনে নামেননি। তিনি খেলতেই নেমেছিলেন। টেনিস কোর্টে র্যাকেট হাতে তিনি সেই লড়াইয়ে সহজে হার মানবেন না। মেয়েদের টেনিসকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেওয়া সেরিনা জানেন, তাঁকে দেখে একাধিক প্রজন্ম অনুপ্রেরণা পায়। তাই সহজে লড়াই ছাড়তে রাজি ছিলেন না তিনি।
এই জন্যই সেরিনার জন্ম বোধ হয় এক বারই হয়। এই জন্যই হয়তো বিদায়বেলায় পুনর্জন্ম হয় সেরিনার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy