Advertisement
E-Paper

বিনিয়োগ নেই, ফিকে আইএসএলের স্বপ্ন, শতবর্ষে ম্রিয়মান মশাল

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে এটিকের সঙ্গে মিশে গিয়ে আইএসএল খেলবে। মেগা টুর্নামেন্টে খেলার সম্ভাবনা কমে আসছে ইস্টবেঙ্গলের জন্য।

আবেগের নাম ইস্টবেঙ্গল। —নিজস্ব চিত্র।

আবেগের নাম ইস্টবেঙ্গল। —নিজস্ব চিত্র।

কৃশানু মজুমদার

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২০ ১৫:২৯
Share
Save

পিছন ফিরে না তাকিয়ে সামনের দিকে তাকানো উচিত। ইস্টবেঙ্গলের শতবার্ষিকীতে ক্লাবকর্তাদের উদ্দেশে এমনই পরামর্শ লাল-হলুদ-এর প্রাক্তন কোচ ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের।

আজ শতবর্ষে পা রাখল ইস্টবেঙ্গল। ঐতিহাসিক দিনে বিনিয়োগকারীর নাম ঘোষণা হতে পারে ভেবে অনেকেই ক্লাব তাঁবুতে উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু ঘণ্টা খানেকের অনুষ্ঠানে তেমন কিছুই ঘোষণা হল না। এ বছর প্রিয় ক্লাব আইএসএল খেলবে কিনা, তাও জানতে পারলেন না ভক্তরা।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এ বার তারা আইএসএল খেলবে। মেগা টুর্নামেন্টে খেলার সম্ভাবনা কমে আসছে ইস্টবেঙ্গলের জন্য। এ রকম পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক অতীতের সব চেয়ে জনপ্রিয় কোচের পরামর্শ, ‘‘আমার মতে, এ বছর আই লিগ জিতে পরের বছর আইএসএল খেলার জন্য তৈরি হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আই লিগ জিতে আইএসএল-এ খেলতে নামলে সমর্থকরাও খুশি হবে।’’

আরও পড়ুন: বন্যা আক্রান্তদের জন্য বিরাট-ঋদ্ধিদের নিলাম

সাহেব কোচের হাতে যখন দলের রিমোট কন্ট্রোল ছিল, তখনও দিনের শেষে ভক্তরা খুশি মনেই মাঠ থেকে বাড়ি ফিরতেন। মর্গ্যানের হাত ধরে দর্শনীয় ফুটবল খেলেছিল ইস্টবেঙ্গল। দু’জন স্টপারের মাঝখানে পেন্ডুলামের মতো দুলতেন মেহতাব হোসেন। লম্বা বল ফেলে দুটো উইংকে সচল রাখতেন তিনি। কখনও নাইজেরিয়ান প্লে মেকার পেন অরজি পায়ের কাজ দেখিয়ে গোলের গন্ধ মাখা বল বাড়াতেন তোলেগ ওজবে-রবিন সিংহের জন্য, আবার কখনও আর এক উইংয়ে গতির ঝড় তুলতেন ইশফাক আহমেদ। সাহেব কোচও চলে গেলেন ক্লাব ছেড়ে, সেই খেলাও হারিয়ে গেল।

মর্গ্যান অধ্যায়ের পরে স্পেনীয় কোচ-ফুটবলারদের জমানা একরাশ বিতর্কই জন্ম দিয়ে গেল। সাফল্যের মুখ আর দেখল না ক্লাব। এখন প্রতি দিনই ইস্টবেঙ্গলের আইএসএল-এ অংশ নেওয়া নিয়ে হচ্ছে বিতর্ক। শনিবারে ক্লাব তাঁবুর অনুষ্ঠানে ‘অ্যালমানাক’ প্রকাশিত হল। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ইতিহাস নিয়ে চর্চা হল। কিন্তু সামনের দিকে ক্লাবকে কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, তার দিক নির্দেশ করা হল না। অথচ এ রকমটা তো হওয়ার কথা ছিল না।

কোচ মর্গ্যান এবং সহকারী ওয়ারেন হ্যাকেটের সঙ্গে হাল্কা মেজাজে মেহতাব ও অভিজিৎ মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

শতবর্ষের বছরেই তো একে একে ভাল খবর আসার কথা ছিল। ক্লাবের সহ সচিব শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত বলছিলেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল ক্লাব এবং তার সঙ্গে জড়িত মানুষজন কখনও লড়াই ছেড়ে চলে যায় না। সব সময়ে চেষ্টা চালিয়ে যায়। আমরাও বিনিয়োগকারী জোগাড় করার চেষ্টায় রয়েছি। এখনই হয়তো বলার মতো জায়গায় আমরা নেই। তবে লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরে আসব না। শতবর্ষে সেই স্পিরিটটাই তো আমাদের প্রেরণা। শেষ দেখে ছাড়ব। আজকের মিটিংয়ে সুভাষ ভৌমিক বলে গেলেন, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কবে আইএসএল খেলবে, সেটা আইএসএল-এর মাথাব্যথার কারণ, ইস্টবেঙ্গলের নয়। আজ সমস্ত ইস্টবেঙ্গল ভক্তদের তো সুভাষ ভৌমিকের এই কথাই প্রেরণা হওয়া উচিত।”

আশিয়ান জয়ী কোচের কথায় প্রেরণা খুঁজছেন কর্তারা। আর এক প্রাক্তন কোচ মর্গ্যান ঐতিহাসিক লগ্নে ক্লাবকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল ক্লাব সাফল্য পাক, সেই শুভেচ্ছাই জানাই। সেই সঙ্গে একটা কথা বলতে চাই। পিছন ফিরে আর তাকিও না। অতীতে যা হয়েছে, তা ইতিহাস। ভবিষ্যতের জন্য সামনের দিকে তাকাতে হবে।’’

২০১০ সালে লাল-হলুদের কোচ হয়ে এসে প্রথম মরসুমেই ফেডারেশন কাপ জিতে নিয়েছিলেন মর্গ্যান। কটকের সেই ফেডারেশন কাপের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানকে ১-০ গোলে হারিয়ে ‘ভারতসেরা’ হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। সেই মুহূর্তটাও এখনও ভুলতে পারেন না সাহেব কোচ। তিনি বলছেন, ‘‘আমার প্রথম মরসুমে ফেডারেশন কাপ জেতাটাই স্মরণীয় মুহূর্ত। প্রথম টুর্নামেন্টেই সাফল্য পাওয়া তো মনে থাকবেই। তা ছাড়া পরে এএফসি কাপে প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে গ্রুপ পর্বে অপরাজিত ছিলাম। সেটাও খুব মনে পড়ে।’’

মর্গ্যান জমানাতেও বিতর্ক হয়েছিল। কর্তারা তাঁর পরামর্শ মতো প্লেয়ার সই না করানোয় কলকাতা লিগ জিতে উঠেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে দেশের বিমানে উঠে পড়েছিলেন। লাল-হলুদ কোচ হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংসে কর্তাদের নির্দেশ ছিল তাঁর সহকারী ওয়ারেন হ্যাকেটকে ছেঁটে ফেলতে হবে। মর্গ্যান মানেননি। তিনি বলছেন, ‘‘আমার অ্যাসিস্ট্যান্টকে ছেঁটে ফেলতে হবে, এ কথা বলা হয়েছিল আমাকে। আমি সেটা মানতে পারিনি। তাই ইস্টবেঙ্গল ছাড়তে বাধ্য হই।’’

আরও পড়ুন: দর্শক রেখে ম্যাচ করার পরিকল্পনা মরুদেশের কর্তাদের

ক্লাব সাফল্য না পেলে সরে যেতে হয় কোচকে। গোল করতে না পারলে স্ট্রাইকারকে ছেঁটে ফেলা হয়। কিন্তু প্রশাসনে কোনও পরিবর্তন হয় না। মর্গ্যান বলছেন, ‘‘আইএসএল-এ খেললে নতুন স্পনসর আসবে। তখন ম্যানেজমেন্টেও হয়তো পরিবর্তন হবে। তবে আমি বলব, আই লিগ জিতলে স্পনসরদের ক্লাবে টানা সম্ভব হবে। নতুন স্পনসর এলে প্রশাসনকে আপাদমস্তক পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে।’’

পরিস্থিতি এখন যা, তাতে আইএসএল নয়, আই লিগ খেলাই ইস্টবেঙ্গলের কাছে দস্তুর। প্রাক্তন কোচের পরামর্শ মতো এ বারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আইএসএল-এ প্রবেশ করার কি চেষ্টা করবে লাল-হলুদ? আপাতত ইস্টবেঙ্গলকে ঘিরে একরাশ প্রশ্ন। জবাব দেওয়ার যে কেউ নেই।

East Bengal Centenary Trevor James Morgan

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।