‘ছোট ছেলে’-কে নিয়ে উচ্ছ্বসিত দীনেশ লাড।
২০১৭ সালের ৩১ অগস্ট থেকে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি। একই ব্যক্তি তাঁর ছোট্ট আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে ক্রিকেট পাগল সমর্থকদের সমালোচনা ও সম্মান দুটোই পেলেন। শুধু বদলে গেল সময়। বদলেছে ভেন্যু। প্রতিপক্ষও আলাদা।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচে ১০ নম্বর জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। এই ১০ নম্বর জার্সি পরেই গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে বছরের পর বছর একসূত্রে জুড়েছেন সচিন তেন্ডুলকর। তাই শার্দুল ঠাকুর ১০ নম্বর জার্সি গায়ে চাপাতেই তাঁকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। সেই ম্যাচে ভাল বোলিং করলেও স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া- ট্রোলড হয়েছিলেন এই মুম্বইকর। তবে সেই শার্দুল এখন ৫৪ নম্বর জার্সি চাপিয়ে আসমুদ্র হিমাচলের মধ্যমণি। সৌজন্যে ব্রিসবেন টেস্টে ১১৫ বলে ৬৭ রানে লড়াকু ইনিংস, যা সাজানো ছিল ৯টা বাউন্ডারি ও ২টি ওভার বাউন্ডারি দিয়ে। সঙ্গে ছিল ওয়াশিংটন সুন্দরের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে ১২৩ রানের মহা মূল্যবান পার্টনারশিপ। যার ফলে অজিদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে ম্যাচে ফিরল ভারতীয় দল।
সপ্তাহের অন্যদিনের মতো এদিনও দীনেশ লাড তাঁর কোচিং ক্যাম্পে ছিলেন। সেখানেই দেখলেন ‘ছোট ছেলে’-র ব্যাটিং বিক্রম। তারপর কচিকাঁচাদের ক্রিকেট পাঠ দেওয়ার মাঝেই আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, ‘‘শার্দুলের জন্য সত্যি গর্ববোধ করছি। ও যে ভাল ব্যাটসম্যান, সেটা ওকে বহুবার বুঝিয়েছি। শুধু ব্যাট চালাতো। কথা কানেই তুলতো না। বোলিং নিয়েই বেশি চিন্তাভাবনা করতো। তবে সে সব কথা থাক। এই ইনিংসের জন্য ওকে সেলাম।’’ কিছুক্ষণ থেমে আবার যোগ করলেন, ‘‘টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে টেল এন্ডাররা রান করেছে এমন উদাহরণ প্রচুর। কিন্তু টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের মতো মাথা ঠান্ডা রেখে ও ডিফেন্স আঁটোসাঁটো করে ইনিংস গড়তে অনেক বছর পর কাউকে দেখলাম। এটাই মুম্বইকরদের বৈশিষ্ট্য। ওর মধ্যে ভাল অলরাউন্ডার হওয়ার সব গুণ আছে। তবে শুধু শার্দুলের কথা বললে অন্যায় হবে। দুটো বাচ্চা ছেলে মনে হচ্ছে টেস্ট ম্যাচটা বাঁচিয়ে দিল।’’
আরও পড়ুন: ব্রিসবেন টেস্টে সুন্দর ঠাকুর গড়ে ম্যাচে ফিরল রাহানের ভারত
অবশ্য শার্দুল ব্যাটিংয়ের নমুনা আগেও দেখিয়েছেন। আইপিএলে রান করেছেন। মুম্বইয়ের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১২৩২ রান রয়েছে। দিল্লির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৮৭ রান। সঙ্গে রয়েছে ৬টা অর্ধ শতরান। কিন্তু এই সাফল্য তো একদিনে আসেনি। ফ্ল্যাশব্যাকে গিয়ে দীনেশ বললেন, ‘‘আমাদের স্কুলের সঙ্গে শার্দুলের অনুশীলন ম্যাচ চলছিল। সেই ম্যাচে ও ৭৮ রান করার পাশাপাশি ৫ উইকেট নেয়। এত কম বয়সে পরিণতবোধ দেখে দারুণ লেগেছিল। তাই ওকে কোচিং করাতে চেয়েছিলাম। শার্দুলের বাবা-মাকেও সেটা বলি। কিন্ত সমস্যা ছিল ওরা পালগড়ে থাকত। যা মুম্বই থেকে তিন ঘন্টা দূরে। তবে ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ওঁরা শার্দুলকে আমার হাতে তুলে দেয়। সেই ওর পথচলা শুরু। আমার কাছে আসার পর ২০০৬ সালে হ্যারিস শিল্ডের একটা ম্যাচে ও এক ওভারে ৬টা ওভার বাউন্ডারি মেরেছিল। স্কুল ক্রিকেটে যা আজও বিরল রেকর্ড।’’
ক্রিকেটার গড়ার জন্য এভাবেই অনেক খুদে প্রতিভাবানদের নিজের বাড়িতে বছরের পর বছর পালন করেছেন স্বর্গীয় রমাকান্ত আচরেকরের এই শিষ্য। এরপরেই জুড়লেন, ‘‘একাধিক ছেলেদের ঘরে এনে রাখা নিয়ে স্ত্রী-র মাঝেমধ্যেই অশান্তি হতো। তবে শার্দুলকে নিয়ে আসার সময় কিছু বলেনি। তাই আজ আমার থেকে ওর ‘ছোট মা’ বেশি গর্বিত।’’
টেস্টে প্রথম হাফ সেঞ্চুরির পর শার্দুল। ছবি : বিসিসিআই টুইটার
সবেমাত্র কেরিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট। ৯৪ রানে ৩ উইকেট নেওয়ার পর এমন ব্যাটিং বিক্রম। ‘ছোট ছেলে’-কে নিয়ে উচ্ছ্বসিত হলেও, ‘বড় ছেলে’-র হারিকিরি দেখে বিরক্ত দীনেশ লাড। ওঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘রোহিত কী যুক্তি দিয়েছে সেটা শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। ওর মতো সিনিয়র ব্যাটসম্যান চলতি সিরিজে একাধিকবার বাজে শট মেরে আউট হল! বাজে শট মারেনি বলেই তো বিশ্বকাপে পাঁচটা শতরান করে। এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন শট মারা অপরাধ। ওর খারাপ শটের জন্যই দল সমস্যায় পড়েছিল।’’
একেবারে শেষে যোগ করলেন, ‘‘ভাল ডেলিভারিতে আউট হলে অন্য কথা। কিন্তু, খারাপ বলে আউট হওয়া মহা অপরাধ। রোহিত তখন স্কুলের ছাত্র। এগারো-বারো বছর বয়স হবে। একটা ম্যাচে নিজের উইকেট ছুড়ে দিয়ে এল। ম্যাচটা ছিল কোয়ার্টার ফাইনাল। রোহিতের বাজে শটের জন্য ওর স্কুল ম্যাচটা হেরে যায়। ওর আউট হওয়ার ধরন দেখে আমি নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি। কানের পাশে কষিয়ে একটা চড় মেরেছিলাম।’’
বোঝা গেল কেন মুম্বইয়ের ক্রিকেটারদের ‘খারুস’ বলা হয়। একইসঙ্গে বোঝা গেল ‘ছোট ছেলে’ লেটার মার্কস নিয়ে পাশ করলেও ‘বড় ছেলে’ কিন্তু তাঁর পরীক্ষায় ডাহা ফেল। তা সে যতই ‘হিট ম্যান’ আইকন হোন।
আরও পড়ুন: কোহালির টুইটে শার্দুল, সুন্দরের লড়াইয়ের বিরাট প্রশংসা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy