ছবি এএফপি।
ভারতীয় সময় দুপুর বারোটা নাগাদ ম্যাঞ্চেস্টারে ড্রেসিংরুমে যখন রোহিত শর্মারা ঢুকছেন, তখন তিনি ৭,৩৩২ কিলোমিটার দূরে মুম্বইয়ে। বোরিভালির স্বামী বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নেটে ব্যস্ত কচিকাঁচাদের ক্রিকেট শেখাতে।
কিন্তু খুদে প্রতিভাদের নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যেও কোচ দীনেশ লাড চোখ রাখছিলেন টিভিতে। মাঝেমধ্যেই নেট ছেড়ে উঠে যাচ্ছিলেন খেলা দেখতে। আসলে রবিবার দুপুরে তাঁর শরীরটা মুম্বইয়ে থাকলেও, মনটা যে ছিল ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। কারণ এই স্কুলে ক্রিকেট শিখিয়েই তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের পরিধি থেকে কেন্দ্রবিন্দুতে তুলে এনেছেন এ দিনের ভারত-পাক ম্যাচের নায়ক রোহিত গুরুনাথ শর্মাকে।
ভারতীয় সময় বিকেল পাঁচটা। ভারতীয় ইনিংসের ৩০ ওভার শেষ হয়েছে সদ্য। শাদাব খানের বলে সিঙ্গলস নিয়ে রোহিত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৮৫ বলে পূর্ণ করেছেন তাঁর ২৪তম শতরান। তখনই বোরিভালির সেই ‘লাড স্যার’-কে ফোনে ধরা গেল। ফোন ধরে বাচ্চা ছেলের মতো আবেগে কেঁদেই ফেললেন দীনেশ। বললেন, ‘‘আজ আমি গর্বিত। স্বপ্ন দেখতাম ওয়ান ডে ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে শতরান করবে আমার ছাত্র। আমার সেই স্বপ্ন পূর্ণ করে দিল রোহিত।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘পাকিস্তান ম্যাচ যুদ্ধ নয়। কিন্তু আমাদের দেশের কোনও ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ পাকিস্তানের কাছে হারতে চায় না। সেই আত্মসম্মানের ম্যাচে রোহিত এ রকম ঝকঝকে ইনিংস খেললে গর্ব তো হবেই।’’
ছোটবেলায় রোহিতের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। কিন্তু স্কুল ক্রিকেটের একটি ম্যাচে মারমুখী রোহিতকে দেখে মনে ধরেছিল দীনেশের। তিনি তখন বোরিভালির এই স্কুলে নিখরচায় ক্রিকেট খেলা শেখাতেন। দীনেশই তাঁকে তুলে এনে এই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করেন। ছোট্ট ‘হিটম্যান’-এর স্কুলে ভর্তির এককালীন অর্থ মকুব করিয়ে দেন অধ্যক্ষকে অনুরোধ করে। স্কুলে পড়ার মাসিক বেতন ছিল চড়া। সেটাও দীনেশ দিতেন নিজের পকেট থেকে। এ দিন সেই প্রসঙ্গ তুলতেই রাশভারী ‘লাড স্যার’ বলেন, ‘‘স্কুলের অধ্যক্ষ বলেছিলেন কেন এত উদ্যোগ নিচ্ছেন? তাঁকে বলেছিলাম, এই ছেলেটা একদিন ভারতের হয়ে খেলবে। আপনার স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করবে। আজ ঠিক সেটাই হয়েছে।’’
ছাত্রের সাফল্যের জন্য সকালে গিয়ে স্থানীয় গণপতি মন্দিরে পুজো দিয়ে এসেছিলেন দীনেশ। সে কথা জানিয়ে বলছিলেন, ‘‘বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আগে আমার কাছে এসেছিল আশীর্বাদ নিতে। খুব চিন্তাক্লিষ্ট মুখ করে রোহিত বলেছিল, আইপিএলে রান পাইনি স্যার। বিশ্বকাপে যাতে রান পাই তার জন্য আশীর্বাদ করুন।’’ দীনেশ বলে চলেন, ‘‘সে দিন ওকে বলেছিলাম, তোর টেকনিক নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। বিশ্বকাপে ধৈর্য দরকার। ধৈর্য বিষয়টা খুব তেতো। কিন্তু ফলটা মিষ্টি। তুই ধৈর্য ধরে ১০-১৫ ওভার ক্রিজে থাক। বিশ্বকাপে তোর ব্যাটে রানের বন্যা বইবে। সেটা রোহিত মেনে চলছে। তাই অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা বা পাকিস্তান—কোনও দেশের বোলাররাই ওকে কম রানে ফেরাতে পারছে না। যারা ভাবছে, রোহিতকে শর্ট বল দিয়ে কাবু করবে, বোকামিই করছে। রোহিত ব্যাকফুটে কিন্তু দারুণ পোক্ত।’’
ফোন ছাড়ার আগে বললেন, ‘‘আজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শতরান করে রোহিত আমাকে দ্বিতীয় বার গর্বিত করল।’’ প্রথম বার কবে? দীনেশ বলেন, ‘‘ক্লাস সিক্সে রোহিতকে এই স্কুলে এনে ভর্তি করার দ্বিতীয় বছরে আমাদের অখ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মুম্বইয়ে স্কুল ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন করেছিল। যাদের হারিয়েছিলাম, সেই স্কুলের কোচ ছিলেন আমার ক্রিকেট গুরু। তিনি আমার কাছে ম্যাচ হেরে বলেছিলেন, দারুণ কাজ করছ।’’
কে তিনি? দীনেশ বলেন, ‘‘রমাকান্ত আচরেকর। আমার গুরু। সে দিন রোহিতের ধুন্ধুমার ইনিংসই আমার জীবনে ওই ‘রেড লেটার ডে’ এনে দিয়েছিল। ঠিক যেমন আজ আর একবার দিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে শতরান করে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy