দুই-গ্রহ লজ্জার হার। ম্যাচের পরে মাথায় হাত বিপর্যস্ত ইস্টবেঙ্গল তারকা কোলাদোর। (ডান দিকে) দুই গোলদাতা মার্কাস ও কিসেক্কা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ইস্টবেঙ্গল ১ • গোকুলম ৩
জ়িনেদিন জ়িদান কয়েক দিন আগেই বলেছিলেন, ‘‘শুধু মাত্র ট্রফি জিততে না পারাকে আমি ব্যর্থতা মনে করি না। আমার কাছে ব্যর্থতার অর্থ, ফুটবলারদের চেষ্টা না করা। মাঠে নেমে একশো শতাংশ না দেওয়া।’’
বুধবার কল্যাণীতে গোকুলম এফসির বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের লজ্জাজনক হারের নেপথ্যে ফুটবলারদের অসহায় আত্মসমর্পণ। ইস্টবেঙ্গল কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়া রিয়াল মাদ্রিদে অবশ্য জ়িদানের সঙ্গে কখনও কাজ করেননি। তিনি বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলেন আর এক বিখ্যাত প্রাক্তন ম্যানেজার জোসে মোরিনহোর।
ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেই গোকুলমের স্পেনীয় কোচ সান্তিয়াগো ভালেরার গলায় ছিল হুঙ্কার। বলেছিলেন, ‘‘আলেসান্দ্রো দারুণ অভিজ্ঞ কোচ। ওদের স্পেনীয় ফুটবলারেরাও দারুণ। তবে আমাদের দলও শক্তিশালী। আমরা কী করতে পারি, তা ডুরান্ড কাপেই দেখিয়েছিলাম।’’
ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে পিছিয়ে গিয়েও শেষ মুহূর্তে মার্কাস জোসেফের গোলে দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল গোকুলম। টাইব্রেকারে জিতে ফাইনালে গিয়েছিলেন তাঁরা। জিতলেও সেই ম্যাচে কী কী ভুলভ্রান্তি করেছিলেন ফুটবলারেরা, গোকুলমের স্পেনীয় কোচ তাঁর ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন। বুধবার ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে ছয় ফুটবলার পরিবর্তন করেছিলেন তিনি।
ডুরান্ডের হার থেকে আলেসান্দ্রো যে কোনও শিক্ষাই নেননি, তা মকর সংক্রান্তির বিকেলেই প্রমাণিত। আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য লাল-হলুদের স্পেনীয় কোচ যাঁদের উপরে সব চেয়ে বেশি ভরসা করছেন, তাঁরাই কিন্তু বুধবার কল্যাণীতে ডোবালেন আলেসান্দ্রোকে।
গত মরসুমে অল্পের জন্য আই লিগ জিততে না পারলেও ইস্টবেঙ্গলের খেলা নজর কেড়েছিল। এনরিকে এসকুয়েদা-জবি জাস্টিন যুগলবন্দি বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। তেমনই রক্ষণে স্তম্ভ হয়ে উঠেছিলেন জনি আকোস্তা, লালরাম চুলোভারা। এই মরসুমে তাঁদের কেউ নেই। এনরিকের পরিবর্তে মার্কোস খিমেনেস দে লা এসপারা মার্তিনকে নিয়েছেন আলেসান্দ্রো। কিন্তু স্পেনীয় স্ট্রাইকার গোল করতেই যেন ভুলে গিয়েছেন। শুধু তাই নয়। পুরো ম্যাচ গোকুলম রক্ষণে কার্যত লুকিয়ে থাকলেন তিনি। তবুও লাল-হলুদ কোচ এখনও মার্কোসকে আড়াল করে চলেছেন। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নতুন কোনও স্ট্রাইকারকে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নন তিনি। হারের পরে আলেসান্দ্রোর ব্যাখ্যা, ‘‘ছ’টা ম্যাচে কখনও এক দল খেলাতে পারিনি। তার উপরে সমস্যা আরও বেড়েছে, বোরখা গোমেস পেরেস দেশে ফিরে যাওয়ায়।’’
আকোস্তার বিকল্প হিসেবে যে মার্তি ক্রেসপিকে নিয়েছেন আলেসান্দ্রো, কল্যাণীতে নিজের গোলেই বল ঢুকিয়ে দিলেন তিনিই। তারই সঙ্গে গোকুলমের দুই বিদেশি স্ট্রাইকার হেনরি কিসেক্কা ও মার্কাস জোসেফকে আটকাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেয়েছেন তিনি।
একই হাল মাঝমাঠেরও। কাশিম আইদারা, লালরিনডিকা রালতে থেকে পিন্টু মাহাতো— মনে হচ্ছিল যেন প্রথমবার একসঙ্গে খেলতে নেমেছেন। কেউ যেন কাউকে চেনেন না। অনেকটা গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নানের আগে কলকাতায় আসা তীর্থযাত্রীদের মতো। দেখতে যাবেন ভিক্টোরিয়া, অথচ ভুল করে উঠে পড়েছেন শ্যামবাজারগামী বাসে। ব্যতিক্রম খুয়ান মেরা গঞ্জালেস ও খাইমে সান্তোস কোলাদো। এই দুই স্পেনীয়ও যা একটু চেষ্টা করলেন। ম্যাচের ন’মিনিটে মেরার অসাধারণ শট গোকুলম গোলরক্ষক ও ইস্টবেঙ্গলের বাতিল উবেইদ সি কের হাতে লেগে ক্রসবার ছুঁয়ে বাইরে যায়।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনাহীন ফুটবল খেললে যা হওয়ার, ঠিক সেটাই হল। ২১ মিনিটে ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডারদের ভুলে গোল করে হেনরি কিসেক্কা এগিয়ে দেন গোকুলমকে। ২৭ মিনিটে সমতা ফেরান কাশিম। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মুহূর্তে আত্মঘাতী গোল করেন মার্তি। ৬৬ মিনিটে গোল করে মার্কাস ডার্বির মহড়ায় লাল-হলুদ শিবিরে আরও অন্ধকার নামালেন।
সমর্থকদের ক্ষোভের মুখেও তিনি যে উদ্বিগ্ন নন, সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করলেন আলেসান্দ্রো। বললেন, ‘‘এটা নিছকই একটা হার। একে আমি বিপর্যয় বলে মনে করছি না। আমরা ভাল খেলতে পারিনি। বেশ কিছু ভুল হয়েছে। যখন আমরা ভাল খেলতে শুরু করলাম, তখনই দ্বিতীয় গোলটা হয়ে গেল।’’ যোগ করেছেন, ‘‘দল হারলে সমর্থকদের ক্ষুব্ধ হওয়া অতি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।’’ আগামী রবিবার মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ডার্বি। এই মুহূর্তে দলের যা হাল তাতে কি জেতা সম্ভব? মোরিনহোর প্রাক্তন সহকারী বলছেন, ‘‘হাতে সময় খুব কম। দ্রুত ভুলভ্রুতি শুধরে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।’’ আলেসান্দ্রো যা-ই বলুন, ডার্বিতে হারের আতঙ্কে লাল-হলুদ সমর্থকদের রক্তচাপ বুধবার থেকেই বাড়তে শুরু করে দিয়েছে।
ইস্টবেঙ্গল: লালথুমাওয়াইয়া রালতে, কমলপ্রীত সিংহ, মার্তি ক্রেসপি, আশির আখতার, অভিষেক অম্বেকর, পিন্টু মাহাতো (রোনাল্ডো অলিভিয়েরা), কাশিম আইদারা, লালরিনডিকা রালতে (টনদোম্বা সিংহ নওরেম), খুয়ান মেরা গঞ্জালেস, খাইমে সান্তোস কোলাদো ও মার্কোস খিমেনেস দে লা এসপারা মার্তিন।
গোকুলম: উবেইদ সি কে,নওচা সিংহ, আন্দ্রে ডেনিস এতিয়েনে, জাস্টিন জর্জ, সলমান কালিয়াথ (লালরোমাওয়াইয়া), শিবিল মুহম্মদ (জুড গার্সিয়া), মুথু আই এম (মালেংনাম্ব মিতেই), সেবাস্টিয়ান থাংমুয়ানসাং, হেনরি কিসেক্কা ও মার্কাস জোসেপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy