ট্রফি নিয়ে শিয়নটেক। ছবি রয়টার্স
ফরাসি ওপেনের ট্রফি নিয়ে তখন তিনি চিত্র সাংবাদিকদের সামনে পোজ দিতে দাঁড়িয়েছেন। হঠাৎই ট্রফির উপরের অংশ খুলে দেখলেন ভেতরে কিছু রয়েছে কি না। ফাঁকা দেখেই হতাশায় মাথা নাড়তে লাগলেন ইগা শিয়নটেক। তৎক্ষণাৎ সেই ছবি টুইট করে ফরাসি ওপেন লিখল, ‘দুঃখিত, ট্রফির ভেতরে তিরামিসু নেই।’ উল্লেখ্য, ‘তিরামিসু’ এক ধরনের ইটালীয় ডেজার্ট, যা শিয়নটেকের প্রিয়ও বটে। ট্রফি নিয়ে লকার রুমে ফিরে তিরামিসু চেখে দেখবেন কি না জানা নেই, তবে কোর্টে তাঁর যে রূপ রবিবার ফরাসি ওপেনে দেখে গেল, তা একেবারেই ‘মিষ্টি’ ছিল না।
পেটানো চেহারা, নিয়ন্ত্রিত আবেগ, লৌহকঠিন মানসিকতা। শিয়নটেককে বর্ণনা করা যায় তিন ভাবেই। ফাইনাল খেলতে আসা পর্যন্ত তিনি মাত্র একটি সেট হারিয়েছিলেন। কিন্তু উল্টো দিকে যাঁর বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলেন, সেই কোকো গফ একটিও সেট হারাননি। উল্টে অনেক বেশি চাপমুক্ত হয়ে নেমেছিলেন। ‘টেনিসের থেকে পড়াশুনো বেশি ভাল লাগে’, ফাইনালের আগে এমন মন্তব্য করা গফকে বরং অনেক বেশি চাপে থাকতে দেখা গেল। ফল যা হওয়ার তাই হল। ২০২০ সালে আমেরিকার সোফিয়া কেনিনকে হারিয়ে প্রথম বার ফরাসি ওপেন জিতেছিলেন শিয়নটেক। দ্বিতীয় ফরাসি ওপেন জয়ের সময়েও হারালেন এক আমেরিকানকে।
Sorry, tiramisu not included 😉#RolandGarros | @iga_swiatek pic.twitter.com/uRs7SXCK6j
— Roland-Garros (@rolandgarros) June 4, 2022
জয়ের পরেই কোর্ট ছেড়ে ছুটে বেরিয়ে যেতে দেখা গেল পোলিশ তারকাকে। ভেতরে ঢুকে সিঁড়ি বেয়ে সোজা গ্যালারিতে চলে এলেন। সেখানে ছিলেন তাঁর কোচ, পরিবার। প্রত্যেককে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আরও এক জন বিশেষ অতিথির দেখাও পেয়ে গেলেন। তিনি রবার্ট লেয়নডস্কি। পোল্যান্ডের অন্যতম সেরা ফুটবলার। আগামী বুধবারই বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে নেশন্স লিগের কঠিন ম্যাচ। তার আগে স্বদেশির খেলা দেখতে পোল্যান্ড থেকে চলে এসেছেন লেয়নডস্কি।
কোর্টে শিয়নটেককে দেখে মনে হচ্ছিল কঠোর মানসিকতার এক চরম উদাহরণ। পয়েন্ট, গেম, সেট জিতলেও কোনও উচ্ছ্বাস দেখাচ্ছিলেন না। গণিত ভালবাসেন। খেলার মধ্যেও যেন অঙ্কের ছোঁয়া। হিসেব কষে ম্যাচ খেললেন। কখন দক্ষতা কাজে লাগাতে হবে, কখন শক্তিনির্ভর টেনিস খেলতে হবে, কখন বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে বিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করতে হবে, সবই যেন ছন্দে ছন্দে দেখা গেল। ম্যাচের সময় পয়েন্ট বা সেট জিতে মুষ্টিবদ্ধ হাতটা এক বার বুকের কাছে আনছিলেন। ফের নতুন গেমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
সেই শিয়নটেকের চোখেও জল দেখা গেল ম্যাচের শেষে। ট্রফি নেওয়ার আগে ভাষণ দিতে উঠে চিকচিক করে উঠল চোখ। হেসে হেসে কথা বলছিলেন ঠিকই, কিন্তু পুরোপুরি আবেগ ধরে রাখতে পারছিলেন না। বক্তব্যের বেশিটাই ছিল প্রতিপক্ষকে নিয়ে। বললেন, “তোমাকে অনেক শুভেচ্ছা। প্রতি সপ্তাহে যদি উন্নতি করতে পারো, তা হলে এক দিন নিশ্চয়ই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছবে।” ধন্যবাদ দিলেন বাবাকে, যাঁর উৎসাহে টেনিসে হাতেখড়ি। দিদি আগাকেও ধন্যবাদ জানালেন। প্রবল চাপ থাকা সত্ত্বেও ট্রফি জিততে পেরে তিনি যে খুশি, সেটাও বললেন। সমবেদনা জানালেন যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে।
বাবা টমাস ছিলেন রোয়ার। অংশ নিয়েছেন ১৯৮৮ সোল অলিম্পিক্সে। বাবার উৎসাহেই টেনিসে আসা। দলগত খেলার থেকে মেয়েকে ব্যক্তিগত ইভেন্টে উৎসাহী করেন টমাস। প্রথমে সাঁতারের প্রশিক্ষণ নিতেন শিয়নটেক। কিন্তু জলের ভীতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। শেষে মেয়েকে টেনিস শেখাতে শুরু করেন টমাস। টমাসের বড় মেয়ে আগাটাও টেনিস খেলতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু চোট-আঘাত জনিত সমস্যায় তাঁর কেরিয়ার দীর্ঘ হয়নি। অন্য দিকে, ২০১৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক টেনিস প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শুরু করেন ইগা শিয়নটেক।
মনেপ্রাণে আদ্যন্ত কিশোরী পোল্যান্ডের এই খেলোয়াড়। ভালবাসেন ঘন ঘন মোবাইল ফোন পাল্টাতে। ভালবাসেন বিড়াল। ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে চোখ রাখলে পোষ্যকে নিয়ে একাধিক ছবি দেখতে পাওয়া যাবে। আগের বার ফরাসি ওপেন জয়ের আগে তাঁর বড় চিন্তা ছিল, ওয়ারশ-র বাড়িতে বসে তাঁর পোষ্য বিড়াল ম্যাচ দেখছে তো? তাঁর জীবনে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়। তিনি নিয়মিত মনোবিদের দ্বারস্থ হন। শিয়নটেক মনে করেন, আধুনিক টেনিসে মনের জোর সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্থিতি না না থাকলে সাফল্য ধরে রাখা যাবে না, এটাই তাঁর ধারণা। টেনিসের পাশাপাশি পড়াশোনা নিয়েও মনোযোগী। পছন্দের বিষয় গণিত। আগেই জানিয়েছিলেন, গণিতের প্রতি ভালবাসা তাঁকে ভাল টেনিস খেলতেও সাহায্য করেছে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy