কোপা আমেরিকা থেকে বিদায় নেওয়ার পর হতাশ ব্রাজিল দলের নানা মুহূর্ত। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ
‘জোগো বোনিতো’। অর্থাৎ ‘সুন্দর ফুটবল’।
ব্রাজিলের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে এই দুই শব্দ। পাঁচ বারের বিশ্বজয়ী, ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সফল দলের খেলা বছরের পর বছর ধরে আনন্দ দিয়ে এসেছে ফুটবলপ্রেমীদের। গোটা বিশ্ব কুর্নিশ করেছে এই ফুটবলকে। মুগ্ধ হয়েছে পেলে, জিকো, সক্রেটিস থেকে রোনাল্ডো, রোনাল্ডিনহোদের খেলা দেখে। সেই ব্রাজিলের সুন্দর ফুটবল তো দূর, ফুটবল বিষয়টাই প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। উরুগুয়ের বিরুদ্ধে কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে হার ব্রাজিলের ফুটবলের অধঃপতনের আরও একটি উদাহরণ হিসেবে উঠে এসেছে।
শেষ বিশ্বকাপ এসেছে ২২ বছর আগে। শেষ ট্রফি ৫ বছর আগে। বড় ট্রফি বলতে সেই ২০১৩ সালে জেতা কনফেডারেশন কাপ, তা-ও ১১ বছর আগে। বছরের পর বছর ধরে ট্রফি খরা তো রয়েছেই, পাশাপাশি মরক্কো, সেনেগালের মতো দলের কাছে হার ব্রাজিলের লজ্জা আরও বাড়িয়েছে। সঙ্কটের এই সময়ে ব্রাজিল দলে এমন এক জনকেও দেখা যাচ্ছে না, যিনি ত্রাতা হয়ে দাঁড়াতে পারেন।
কেন ব্রাজিলের ফুটবলের এই অবস্থা? কোথায় সমস্যা হচ্ছে?
খুঁজতে গেলে বেরিয়ে আসছে বেশ কিছু কারণ। সেগুলি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ, যে দ্রুত সমাধান না করলে ব্রাজিলের ফুটবল আরও নিম্নগামী হতে পারে।
অর্থের লোভে তরুণ ফুটবলারদের বিদেশ পাড়ি
গত কয়েক বছর ধরেই এই সমস্যাটা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ব্রাজিলের তরুণ ফুটবলারদের একে একে ছিনিয়ে নিচ্ছে ইউরোপের ক্লাবগুলি। সে দেশের ঘরোয়া লিগে থাকা বিভিন্ন ক্লাবের ‘স্কাউট’রা (যাঁরা প্রতিভাবান ফুটবলার খুঁজে বার করেন) খবর পাঠাচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গে ক্লাবগুলি অর্থের থলি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে সেই খুদে ফুটবলারদের পিছনে। এই ব্যাপারে গত কয়েক বছরে টেক্কা দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ব্রাজিল থেকে খুঁজে এনেছে ভিনিসিয়াস, রদ্রিগো এবং এনদ্রিককে।
ভিনিসিয়াস এবং রদ্রিগো ইতিমধ্যেই নিজেদের জায়গা মোটামুটি পাকা করেছেন। কিন্তু মাদ্রিদের জার্সি গায়ে পরার আগেই প্রশ্ন উঠেছে এনদ্রিককে নিয়ে। কিছু দিন আগে পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে এত চর্চা হচ্ছিল যে, মনে হচ্ছিল চাঁদে পাড়ি দিয়েছেন। সেই এনদ্রিক উরুগুয়ের বিরুদ্ধে সফল পাস দিয়েছেন মাত্র একটি। সেটি হল খেলা শুরু হওয়ার, অর্থাৎ ‘কিক অফ’-এর পাস। প্রতিভাবান ফুটবলারের যদি এই হাল হয়, তা হলে বাকি দলের কী হাল হতে পারে, সেটা সহজেই অনুমেয়। তিনি ১৮ বছর হওয়ার আগে পর পর দু’টি ম্যাচে গোল করেছিলেন, যা ব্রাজিলের হয়ে একমাত্র পেলে ছাড়া আর কেউ পারেননি।
ভিনিসিয়াস এবং রদ্রিগো তবু কিছুটা সুনাম রেখেছেন। কিন্তু উরুগুয়ের বিরুদ্ধে ভিনিসিয়াসকে নির্বাসনের কারণে পায়নি ব্রাজিল। নেমার তো চোটের কারণে প্রতিযোগিতায় থেকেও নেই। ফলে তাদের আক্রমণও দানা বাঁধেনি। গোটা ম্যাচে মাত্র তিনটি শট নিয়েছে তারা। তা ছাড়া, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভিনিসিয়াসের খারাপ ফর্মে চলে যাওয়ার একটা বদভ্যাস রয়েছে। একই কথা রদ্রিগোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পেলে তো দূর, রোনাল্ডো বা রোনাল্ডিনহোর মতো প্রতিভা বা দক্ষতাও তাঁদের নেই। বাকি যে খেলোয়াড়েরা রয়েছেন, তাঁরা তুলনাতেই আসেন না। ফলে দলে শক্তি না থাকায় ব্রাজিলেরও ধার হারিয়েছে।
প্রাক্তন ফুটবলার সমরেশ চৌধুরি আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “নেমারের না থাকাটা একটা বড় ফ্যাক্টর। ও চোট পাওয়ায় ব্রাজিলের ফুটবলে সেই ধারটা নেই। আগে লিয়োনেল মেসির উপর নির্ভর করে থাকত আর্জেন্টিনা। এখন মেসি-নির্ভরতা কাটিয়ে উঠেছে ওরা। কিন্তু ব্রাজিলের নেমার-নির্ভরতা এখনও কাটেনি। তাই ওরা ভুগছে।” আর এক প্রাক্তনী মানস ভট্টাচার্য বললেন, “ব্রাজিলের ফুটবলারদের মধ্যে জেতার ইচ্ছের অভাব রয়েছে। শারীরিক ভাষাতেই সেটা বোঝা যাচ্ছে। ওদের মধ্যে জেতার সেই একাগ্রতা নেই। দলে প্রতিভার তো অভাব নেই। সেটা কাজে লাগাতে পারছে না ওরা।”
সুন্দর ফুটবল থেকে সরে আসা
কিছু বছর আগে পর্যন্ত লাতিন আমেরিকার ফুটবল ছিল শৈল্পিক ফুটবল। সেই ফুটবলের ধারক ও বাহক ছিল ব্রাজিলই। আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ের মতো দল থাকলেও ব্রাজিলের ‘জোগো বোনিতো’ বা সুন্দর ফুটবলের জয়গান হত সবচেয়ে বেশি। সেই ফুটবল থেকে সরে এসেছে সেলেকাওরা। এর মূল কারণ, ব্রাজিলের বেশির ভাগ ফুটবলার খেলেন ইউরোপের কোনও না কোনও ক্লাবে। সেখানে ফুটবল অনেক বেশি কৌশলগত। ফলে ব্রাজিলের ফুটবলে স্বাভাবিক যে শিল্প ছিল, তা হারাতে বসেছে। অনায়াসে দু’-তিন জনকে কাটিয়ে বেরিয়ে যাওয়া, ব্যক্তিগত নৈপুণ্য, কিছুই আর চোখে পড়ছে না।
কিছু দিন আগে আর্জেন্টিনার কোচ লিয়োনেল স্কালোনি বলেছিলেন, লাতিন আমেরিকার ফুটবল ক্রমশ ‘রোবট’-এর মতো হয়ে যাচ্ছে। যাঁরা ড্রিবলিং বা কাটিয়ে নিয়ে এগোতে অভ্যস্ত, তাঁরা এখন বল পেলেই পাস করে দিচ্ছেন। আতঙ্কিত স্কালোনি বলেছিলেন, ‘‘যদি মেসিকে আট বছর বয়স থেকে বলা হত, পাস করো, ভাবুন আজকের মেসিকে আমরা দেখতে পেতাম কি না।’’ স্কালোনির মতে, ৭-৮ বছর বয়সী ফুটবলারদের নিজেদের মতো খেলতে দেওয়া উচিত। খেলা ঠিক করতে হবে ১৪-১৫ বছর বয়স থেকে। না হলে ফুটবলের সৌন্দর্য হারাবে। দুঃখের বিষয়, ব্রাজিলের খুদে ফুটবলারেরাও এখন ইউরোপ বা সৌদি আরবের অর্থের হাতছানি সম্পর্কে অবগত। ফলে ইউরোপীয়রা যে ভাবে খেলেন, সেই ফুটবল তারা অনুসরণ করছে ছোটবেলা থেকেই। ব্রাজিলের নিজস্ব ঘরানা এতে হারাতে বসেছে।
ব্রাজিলের প্রাক্তন ফুটবলার গ্রাফাইট বলেছেন, “ব্রাজিলের ফুটবলের অতীত ঘরানা এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এখন আর তার কোনও অস্তিত্ব নেই।” ফুটবল ঐতিহাসিক ডেভিড গোমেসের কথায়, “ব্রাজিল ফুটবল তার পরিচিতি হারাতে বসেছে।” একই কথা বললেন মানসও। তাঁর কথায়, “ব্রাজিলের খেলার মধ্যে সৌন্দর্যের অভাব রয়েছে। জোগো বোনিতো আর দেখা যাচ্ছে না। আগের বিশ্বকাপ দেখেই বুঝেছি, ব্রাজিলের খেলায় আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে।”
সঠিক মানের কোচের অভাব
জাতীয় দলের কোচিং আরও একটা সমস্যার কারণ। নিন্দকেরা বলেন, ব্রাজিলের কোচের পদ এখন ‘মিউজ়িক্যাল চেয়ার’-এ পরিণত হয়েছে। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের পর তিতে দায়িত্ব ছেড়েছিলেন। তার পর তিন বার কোচ বদল হয়েছে। ২০২৩ সালে পাঁচ মাসের জন্য দায়িত্ব নিয়েছিলেন রামন মেনেজেস। ২০২৩-২৪ মরসুমে ছ’মাসের জন্য দায়িত্বে ছিলেন ফের্নান্দো দিনিজ়। এ বছরের জানুয়ারি থেকে দায়িত্বে দোরিভাল জুনিয়র।
তাঁর সঙ্গেও ব্রাজিলের ফুটবলারদের যে খুব একটা বনিবনা রয়েছে এমন নয়। সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছিল, যেখানে ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা নিজেদের মধ্যে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে ম্যাচের কৌশল আলোচনা করছিলেন। সেখানে পাশ থেকে উঁকিঝুঁকি মারতে দেখা গিয়েছে কোচ দোরিভালকে। কোচকে ছাড়াই ‘টিম হাড্ল’ সাধারণত কোনও দলে দেখা যায় না। ব্রাজিলের দলের মধ্যেই ভাঙন তৈরি হয়েছে কি না, এই ভিডিয়ো সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
ব্রাজিল ফুটবল সংস্থায় এখনও অলিখিত নিয়ম রয়েছে যে, সে দেশের কোচ ছাড়া আর কেউ জাতীয় দলের দায়িত্ব নেবেন না। এই সমস্যা তাদের আরও বিপদে ফেলেছে। সাধারণত ব্রাজিলের জাতীয় দলের কোচ যাঁরা হন, তাঁরা সে দেশের ক্লাবে সাফল্য পাওয়ার পর দায়িত্ব নেন। ২০২৩ সালে সাও পাওলোকে ব্রাজিলিয়ান কাপ জেতার পর দোরিভাল জাতীয় দলের কোচ হন। কিন্তু ইউরোপীয় ফুটবলের কোচিংয়ে প্রতিনিয়ত যে বদল বা বিপ্লব চলছে, সে সম্পর্কে তাঁরা অবগত নন। অনেকে নিজেদের চেষ্টায় ইউরোপে গিয়ে কোচিং শিখে আসেন। কিন্তু আর্থিক কারণে অনেকেই সেই রাস্তায় হাঁটেন না। ফলে ফুটবল বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তাঁদের জ্ঞান বা ব্যাপ্তি আটকে থাকে একটি নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যেই। ইউরোপীয় ধাঁচের অনুশীলন, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আরও বিভিন্ন বিষয়ে তাঁরা পিছিয়ে থাকেন। এ কারণে যে ভিনিসিয়াস, রদ্রিগো বা ডগলাস লুইজ়দের দেখা যায় ক্লাবের হয়ে ভাল খেলতে, তাঁরাই ব্রাজিলের জার্সিতে ব্যর্থ হন। এর অন্যতম কারণ, দেশীয় কোচের কৌশলের সঙ্গে অল্প সময়ে মানিয়ে নিতে না পারা।
দেশীয় কোচই নিয়োগ করতে হবে, এই ধারণা থেকে সরে এসে সম্প্রতি ব্রাজিল কার্লো আনচেলোত্তির বিষয়ে আগ্রহী হয়েছিল। রিয়াল মাদ্রিদের কোচকে ছিনিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল তারা। আনচেলোত্তি প্রথমে দোনোমোনো করছিলেন। পরে মাদ্রিদেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অনেকে বলেন, আর্থিক কারণ নয়, ব্রাজিল ফুটবলের দুরবস্থা দেখেই নাকি তিনি দায়িত্ব নিতে চাননি।
ঘরোয়া লিগের খারাপ মান
লাতিন আমেরিকার যে ক্লাব ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়, সেখানে গত পাঁচ বার ব্রাজিলের ক্লাবই জিতেছে। এমনকি, বিশ্ব ক্লাব কাপেও (পুরনো ফরম্যাটে) ব্রাজিলের ক্লাবের রেকর্ড ভাল। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যে মানের ফুটবল হয়, তার ধারেকাছেও নেই সেই প্রতিযোগিতা। ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলে একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে মাত্র কয়েকটি ক্লাবেরই। ইউরোপের অনেক ছোট দেশের ক্লাব ফুটবলেও তার থেকে ভাল মানের ফুটবল খেলা হয়।
গত বারের ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্স। তাদের ৪-০ গোলে হারিয়েছিল ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। দু’দলের পার্থক্য বার বার বুঝতে পেরেছেন সমর্থকেরা। আধুনিক ফুটবলে যে কোনও দেশের উত্থানের নেপথ্যে থাকে ক্লাব ফুটবলের মান। এশিয়ার দেশগুলির ক্ষেত্রে তা আরও ভাল করে বোঝা যাবে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, ব্রাজিলের ক্লাব ফুটবলের মান তত খারাপ হচ্ছে। মানস এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “লাতিন আমেরিকা এবং ইউরোপের ফুটবলে আকাশ-পাতাল তফাত রয়েছে। ইউরোপীয় ঘরানার সঙ্গে পেরে উঠছে না ওরা। দক্ষতা, প্রতিভা সবেতেই পিছিয়ে। না হলে উরুগুয়ে-ব্রাজিল ম্যাচে এত মারপিট হয়।”
ফুটবল ঐতিহাসিক গোমেস বলেছেন, “এক বার ভাবুন তো, ইংল্যান্ড বা স্পেনে ব্রাজিলের যে ফুটবলারেরা খেলে, তারা নিজেদের দেশে খেললে কেমন হত? ডগলাস লুইজ়, লুকাস পাকুয়েতা, জোয়াও গোমেস, ব্রুনো গিমারায়েস, রিচার্লিসনেরা ব্রাজিলে খেললে এই মহাদেশের ফুটবলের চেহারাই বদলে যেত। কিন্তু আর্থিক প্রলোভন কেউই এড়াতে পারেনি।” গোমেসের মতে, যে প্রথা শুরু হয়েছে, তা শেষ করা খুবই কঠিন কাজ। তাঁর কথায়, “ব্রাজিলের ক্লাবগুলির এত বেতন দেওয়ার ক্ষমতা নেই। পাশাপাশি, দেশের প্রতিভা বিদেশে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থের লোভ তারাও এড়াতে পারে না। ফলে অকালে অনেক প্রতিভা ঝরে যাচ্ছে।” গোমেসের দাবি, রাজনৈতিক নেতাদেরও এ ব্যাপারে ময়দানে নামার সময় হয়েছে।
এর মধ্যেও আশার আলো দেখছেন সমরেশ। তাঁর মতে, ব্রাজিলের ফুটবলে একটা খারাপ সময় যাচ্ছে, যেটা তারা দ্রুত কাটিয়ে উঠবে। তিনি বলেছেন, “১৯৭০-৭৮ সালের মধ্যে মোহনবাগানের একটা খারাপ সময় গিয়েছিল। সেটা ওরা কাটিয়ে উঠেছিল। তাই ব্রাজিলের এই খারাপ সময়ও কাটবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কোনও ভাবে ওদের সব বিষয় ঠিকঠাক কাজ করছে না। দ্রুতই সেটা মিটে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy