Advertisement
E-Paper

সুনীলের মন্ত্রে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন সতীর্থদের

০২৪ সালের ৬ জুন যুবভারতী ছেড়েছিলেন চোখের জলে। কাঁদিয়েছিলেন হাজার হাজার ক্রীড়াপ্রেমীকেও। সুনীলের বিদায়ের পরের ন’মাস ভারতীয় ফুটবল যেন ছিল অভিভাবকহীন।

মহড়া: ভারতীয় দলের অনুশীলনে সুনীল।

মহড়া: ভারতীয় দলের অনুশীলনে সুনীল। এআইএফএফ।

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৫ ০৯:২৯
Share
Save

তিনি ফুটবলের সাধক। ভারতীয় ফুটবলের মুশকিল আসান। আবার অনুজ সতীর্থদের ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার মন্ত্রও দিচ্ছেন! তিনি— সুনীল ছেত্রী।

২০২৪ সালের ৬ জুন যুবভারতী ছেড়েছিলেন চোখের জলে। কাঁদিয়েছিলেন হাজার হাজার ক্রীড়াপ্রেমীকেও। সুনীলের বিদায়ের পরের ন’মাস ভারতীয় ফুটবল যেন ছিল অভিভাবকহীন। ফুটবলাররা যেন ছিলেন সব বিছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা। মাঠেও তার প্রভাব পড়েছিল ভয়ঙ্কর ভাবে। ম্যাচ জেতা তো দূরের কথা, ভারতীয় দল যেন লড়াই করতেই ভুলে গিয়েছিল। পরিস্থিতি সামলাতেই সুনীলেরই শরণাপন্ন হলেন ভারতীয় দলের কোচ মানোলো মার্কেস। অবসর ভেঙে ন’মাস পরে জাতীয় দলে ফিরেই চল্লিশোর্ধ্ব সুনীল গোল করে বুঝিয়ে দিলেন, বয়স কেবলই একটা সংখ্যা।

সুনীলের প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে ফুটবলমহল দুই মেরুতে বিভক্ত। কারও কারও মতে, চল্লিশোর্ধ স্ট্রাইকারকে ফিরিয়ে আনার অর্থ ভারতীয় ফুটবলকে আরও পিছিয়ে দেওয়া। কেউ আবার মন করছেন, একমাত্র সুনীলের পক্ষেই সম্ভব সুদিন ফেরানো। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিক বৈঠকে মানোলো খোলাখুলি বলেই দিলেন, ‘‘সুনীল ভারতীয় ফুটবলের এক জন কিংবদন্তি। চলতি মরসুমে ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা (১২)। আমাদের প্রথম কয়েকটি ম্যাচে গোল করতে সমস্যা হচ্ছিল, তবে সুযোগ তৈরি করতে নয়। সুনীল জাতীয় দলে ফেরায় সেই সমস্যা অনেকটাই দূর হয়েছে।’’ একমত সন্দেশ জিঙ্ঘনও। বললেন, ‘‘আমরা সবসময়ই আশা করি যে সুনীল গোল করবে। ও ইতিমধ্যেই ৯৫টি গোল করেছে। ওকে আবার দলে পেয়ে আমরা উচ্ছ্বসিত। সুনীলের দক্ষতা এতটাই উচ্চমানের যে, শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সব দলের কাছেই ও বিপজ্জনক।’’

আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৯৫ গোল করা ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার নিজেও জানেন তাঁর প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তুঙ্গে। হয়তো এই কারণেই নিজেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন বাইরের জগৎ থেকে। ভারতীয় দলে ফেরা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি সুনীল। এমনকী, অধিনায়ক হওয়া সত্ত্বেও এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের দিন শিলংয়ে সাংবাদিক বৈঠকে আসেননি কোচের সঙ্গে। পাঠিয়েছিলেন সতীর্থ সন্দেশ জিঙ্ঘনকে। অদৃশ্য বলয় যেন তৈরি করেছেন নিজের চারপাশে।

সুনীল কি তা হলে বদলে গিয়েছেন? ভারতীয় দলের অন্দরমহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল সম্পূর্ণ অন্য তথ্য। সুনীল আগের মতোই রয়েছেন। অনুশীলনে যেমন নিজেকে নিংড়ে দিচ্ছেন, তেমনই অনুজ সতীর্থদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখার জন্য নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। ভারতীয় দলের এক সদস্যই শোনালেন আশ্চর্য এই কাহিনি। বলছিলেন, ‘‘বর্তমান দলে সকলেই সুনীলের চেয়ে ছোট। অনেকেরই জন্ম ও জাতীয় দলে খেলা শুরু করার পরে। টিম হোটেলে অবসর সময়ে সুনীল অনুজ সতীর্থদের জিজ্ঞেস করে, ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের কী কী পরিকল্পনা রয়েছে। কী ভাবে অর্থ সঞ্চয় করছে। এর পরে সুনীল রীতিমতো ক্লাস নিচ্ছে ওদের।’’ কী বলছেন ক্লাসে? তিনি বললেন, ‘‘সুনীল ওদের বোঝাচ্ছে, ফুটবলারদের খেলোয়াড়িজীবন খুব বেশি নয়। তাই বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে গিয়ে অর্থ উড়িয়ে দিলে বিপর্যয় অনিবার্য। সতীর্থদের উদ্দেশে সুনীলের পরামর্শ, জীবনে শৃঙ্খলা আনতে হবে। অর্থ সঞ্চয় করতে হবে ভবিষ্যতের জন্য। কারণ, ফর্ম চিরকাল থাকে না। খেলা শেষ হওয়ার পরে কেউ মনে
রাখবে না।’’

অনুশীলনে কিন্তু সুনীল সম্পূর্ণ অন্য এক মানুষ। সোমবার বিকেলে শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে অনুশীলন শুরু হওয়ার কথা ভারতীয় দলের। সাড়ে পাঁচটার একটু আগে মাঠে নেমে রাবার ব্যান্ডের সাহায্যে একা একাই স্ট্রেচিং শুরু করে দিলেন সুনীল। তার পরে শুরু করলেন অনুশীলন। প্রস্তুতির ফাঁকে দলের অন্যান্য ফুটবলাররা নিজেদের মধ্যে হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠছেন। কিন্তু সুনীল সর্বদা মগ্ন অনুশীলনে। চল্লিশোর্ধ্ব বয়সেও অনায়াসে গতিতে পিছনে ফেলে দিচ্ছেন উদান্ত সিংহদের মতো তরুণ তুর্কিদের। ভারতীয় ফুটবলের আর এক কিংবদন্তি আই এম বিজয়ন সব সময়ই বলেন, ‘‘জাতীয় দলে যদি সুনীলকে পাশে পেতাম, আরও অনেক দিন হয়তো খেলতে পারতাম।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sunil Chhetri India Football Team

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}