১১৮ মিনিটে গোল করে স্পেনের নায়ক হয়ে উঠলেন মিকেল মেরিনো। ছবি: রয়টার্স।
স্পেন — ২
জার্মানি — ১
চলতি ইউরোর সবচেয়ে ধারাবাহিক দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। ফলে খেলা যে টান টান হবে তা আগে থেকেই আশা করা হয়েছিল। সেটাই হল। দু’দলই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলল। ড্যানি অলমোর গোলে স্পেন প্রথমে এগিয়ে গেলেও জার্মানি হাল ছাড়েনি। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগে সমতা ফেরান ফ্লোরিয়ান উইর্ৎজ়। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ১১৮ মিনিটের মাথায় গোল করেন স্পেনের মিকেল মেরিনো। আর ফিরতে পারেনি জার্মানি। ঘরের মাঠে হেরে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। জার্মানি প্রথম আয়োজক দেশ যারা ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বিদায় নিল।
গত বার ইউরোর সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে অলমো পেনাল্টি ফস্কেছিলেন। ইটালির কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল স্পেন। এ বার একটি গোল করলেন। একটি করালেন। খলনায়ক থেকে নায়ক হয়ে উঠলেন তিনি।
স্পেনের বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে কয়েকটি পরিবর্তন করেছিলেন জার্মানির কোচ জুলিয়ান নাগেলসম্যান। এমরে চ্যান, লেরয় সানেদের শুরু থেকে খেলান তিনি। সানেকে রাখা হয়েছিল নিকো উইলিয়ামসকে আটকানোর জন্য। স্পেনের আক্রমণ ভাঙার বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল টনি ক্রুজ়কে। সেখানেই ভুল করে ফেলেন নাগেলসম্যান। ক্রুজ় অনেকটা সময় জুড়ে রক্ষণকে সাহায্য করে গেলেন। ফলে প্রথমার্ধে জার্মানির আক্রমণে সমস্যা হল।
খেলার ৮ মিনিটের মাথায় বড় ধাক্কা খায় স্পেন। চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় পেদ্রিকে। বাধ্য হয়ে অনেক আগেই অলমোকে নামান স্পেনের কোচ লুইস ডে লা ফুয়েন্তে। তবে তা শাপে বর হয়। অলমো নামায় স্পেনের আক্রমণে অভিজ্ঞতা বাড়ে।
প্রথম থেকেই শারীরিক ফুটবল চলছিল। শুরুতে জার্মানির ফুটবলারেরা বেশ কয়েকটি কড়া ট্যাকল করেন। কিন্তু রেফারি শুরুতে খেলার ছন্দ খারাপ করতে চাননি। তার মাঝেই ২১ মিনিটের মাথায় ভাল সুযোগ পান জার্মানির কাই হাভার্ৎজ়। জোশুয়া কিমিকের ক্রস থেকে তাঁর হেডে বেশি গতি ছিল না। উনাই সিমোনের বাঁচাতে সমস্যা হয়নি।
দু’দলই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলছিল। বক্স থেকে বক্সে আক্রমণ হচ্ছিল। ফলে সতর্ক থাকতে হচ্ছিল দু’দলের রক্ষণকেই। প্রথমার্ধে কিছুটা হলেও এগিয়ে ছিল স্পেন। মাঝমাঠের দখল তাদের বেশি ছিল। ৪০ মিনিটের মাথায় অলমোর শট ভাল বাঁচান জার্মানির গোলরক্ষক ম্যানুয়েল ন্যুয়ের। গোলশূন্য অবস্থায় প্রথমার্ধ শেষ হয়।
দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হওয়ার দু’মিনিটের মাথায় ভাল সুযোগ পান স্পেনের অধিনায়ক আলভারো মোরাতা। লেমিন ইয়ামালের পাস ধরে গোল করতে পারতেন তিনি। গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি তিনি। যদিও ৪ মিনিট পরেই জার্মানিকে ধাক্কা দেন অলমো। আবার ইয়ামাল ডান প্রান্ত ধরে উঠে বক্সে পাস বাড়ান। ডান পায়ের শটে গোল করেন অলমো। এগিয়ে যায় স্পেন।
গোল খাওয়ার পরে বদলে গেল জার্মানির খেলা। খোঁচা খাওয়া বাঘের মতো আক্রমণ শুরু করে তারা। ক্রুজ়কে আক্রমণে এগিয়ে দেন কোচ। নামান নিকলাস ফুলক্রুগ, ফ্লোরিয়ান উইর্ৎজ়দের। ফলে একের পর এক আক্রমণ ভেসে আসছিল স্পেনের বক্সে। কিছুটা রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে স্পেন।
৭০ মিনিটের মাথায় রবার্ট আন্দ্রিচের শট ভাল বাঁচান সিমোন। ৭৭ মিনিটের মাথায় বক্সের ভিতর থেকে ফুলক্রুগের শট পোস্টে লেগে ফেরে। কোনও ভাবেই স্পেনের গোলের মুখ খোলে যাচ্ছিল না। ৮২ মিনিটের মাথায় সিমোনকে এগিয়ে থাকতে সরাসরি গোল লক্ষ্য করে শট মারেন হাভার্ৎজ়। বল বারের একটু উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।
শেষ তাস হিসাবে টমাস মুলারকেও নামিয়ে দেন জার্মানির কোচ। লাগাতার আক্রমণের ফল পায় জার্মানি। ৮৯ মিনিটের মাথায় মিটেলস্টাডের ক্রস হেডে নামিয়ে দেন হাভার্ৎজ়। চলতি বলে ডান পায়ের শটে গোল করেন উইর্ৎজ়। পোস্টে লেগে বল জালে জড়িয়ে যায়। সমতা ফেরায় জার্মানি। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধেও আক্রমণাত্মক ফুটবল দু’দলের। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, কোনও দলই টাইব্রেকারের কথা ভেবে খেলছে না। প্রথমার্ধে কোনও গোল না হলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বক্সের মধ্যে হাতে বল লাগে স্পেনের কুকুরেয়ার। পেনাল্টির আবেদন করে জার্মানি। কিন্তু কুকুরেয়া ইচ্ছাকৃত ভাবে হাতে বল লাগাননি। তাই রেফারি পেনাল্টি দেননি।
দু’দলের ফুটবলারেরাই নিজেদের ১০০ শতাংশ দেওয়ায় শেষ দিকে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন। বাধ্য হয়ে দু’দলের কোচই ছ’জন পরিবর্ত ফুটবলার নামান। আর কোনও তাস বাকি ছিল না তাঁদের হাতে। ১১৫ মিনিটের মাথায় কিমিকের শট ভাল বাঁচান সিমোন। খেলা ধীরে ধীরে টাইব্রেকারের দিকে এগোচ্ছিল। ঠিক তখনই স্পেনের জাদু। বাঁ প্রান্ত থেকে বল তোলেন অলমো। হেডে ন্যুয়েরকে পরাস্ত করেন মিকেল মেরিনো। গোলের ক্ষেত্রে জার্মানির ডিফেন্ডার রুডিগারের দোষ ছিল। নিজের জায়গায় ছিলেন না তিনি। ফলে ফাঁকায় হেড করেন মেরিনো।
আর ফিরতে পারেনি জার্মানি। একেবারে শেষ মুহূর্তে সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিলেন ফুলক্রুগ। কিন্তু মেরিনো হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। তাঁর হেড পোস্টের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ঘরের মাঠে হেরে বিদায় নিতে হয় তাদের। খেলার শেষ মিনিটে লাল কার্ড দেখেন স্পেনের ড্যানি কার্ভাহাল। দলের জন্য কার্ড দেখেন তিনি। তাতে রাগ করেননি কোচ। কার্ভাহালকে জড়িয়ে ধরেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy