কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুশীলনে মেসি। শুক্রবার।
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনুশীলন মাঠে যাওয়ার পথে গেটের বাইরে আর্জেন্টিনার নীল-সাদা পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক দল সমর্থকের উল্লাসধ্বনি শুনে একটু থামলেন তিনি। ভক্তদের উদ্দশে হাত নেড়ে আবার হাঁটতে শুরু করলেন লিয়োনেল মেসি। মুখে গভীর চিন্তার ছাপ। রাশিয়ার সেই রাত কি এখনও ভুলতে পারেননি তিনি? এই শেষ ষোলোর দ্বৈরথেই আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছিল ফ্রান্সের কাছে। এ বার পরীক্ষা কাতারে। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। নাকি সতীর্থ অ্যাঙ্খেল দি’মারিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় আরও উদ্বিগ্ন বোধ করছেন আর্জেন্টিনীয় কিংবদন্তি?
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। আর্জেন্টিনার এই সমর্থকরা নিজের দেশের সাংবাদিকদের ভিড়ে মিশে নিরাপত্তারক্ষীদের চোখ এড়িয়ে ঠিক পৌঁছে গিয়েছিলেন মাঠের সামনে। যদিও অনুশীলন দেখার অনুমতি তাঁরা পাননি। দূর থেকেই ভামোস আর্জেন্টিনা...ভামোস মেসি... গান গাইছিলেন।
কাতারের বিশেষত্ব হল, আপনি দেখলেন সামনেই মেট্রো স্টেশন। রাস্তা পেরোলেই পৌঁছে যাবেন। কিন্তু যেই আপনি এগোতে গেলেন, দেখলেন রাস্তা বন্ধ। অনেকটা হেঁটে ঘুরপথে স্টেশনে পৌঁছতে হবে। একই অবস্থা হয় স্টেডিয়ামে প্রবেশের ক্ষেত্রেও। গাড়ি করে গেলেও নিস্তার নেই। নির্দিষ্ট গন্তব্যের অনেক দূরেই নেমে পড়তে হবে। কাতারের এই ভুলভুলাইয়ায় শুক্রবার বিকেলে পথ হারিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার কোচ লিয়োনেল স্কালোনিও!
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ ষোলোর ম্যাচের আগের দিন কাতার কনভেশন সেন্টারে স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে আর্জেন্টিনার সাংবাদিক বৈঠক শুরু হওয়ার কথা। প্রথমে আসবেন মিডফিল্ডার রদ্রিগো দি পল। তার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন স্কালোনি। মিনিট দশেকের মধ্যেই রদ্রিগো সাংবাদিক বৈঠক শেষ করে বেরিয়ে গেলেন। অথচ স্কালোনির দেখা নেই। ফিফার আধিকারিকরা ব্যস্ত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেছেন। সাংবাদিকদের মধ্যেও অসন্তোষ বাড়ছে। কোথায় গেলেন তিনি? প্রাক-ম্যাচ সাংবাদিক বৈঠক কি তিনি করবেন না? প্রায় পঁচিশ মিনিট পরে হাঁফাতে-হাঁফাতে ঢুকলেন আর্জেন্টিনার কোচ। সাংবাদিক বৈঠক পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ফিফার আধিকারিকরা জানালেন, রাস্তা গুলিয়ে গিয়েছিল স্কালোনির গাড়ির চালকের। অনেক ঘুরে আসতে হয়েছে বলেই এত দেরি।
সত্যিই কি তাই? নাকি দি’মারিয়াকে সুস্থ করে তুলতে ব্যস্ত ছিলেন স্কালোনি। সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই তিনি বললেন, ‘‘অ্যাঙ্খেলের যে চোট লেগেছিল, তা আমি জানতামই না। ও নিজেই আমাকে জানায়, সমস্যা হচ্ছে।’’ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দি’মারিয়া কি খেলতে পারবেন শেষ পর্যন্ত? চিন্তিত স্কালোনি বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে কিছু বলা খুবই কঠিন। আমি নিজেও বুঝতে পারছি না, আদৌ ও খেলতে পারবে কি না। একটু পরেই আমরা অনুশীলনে নামব। সেখানে অ্যাঙ্খলকে দেখার পরেই বিষয়টা পরিষ্কার হবে আমাদের কাছে।’’
কোথায় চোট দি মারিয়ার? চিন্তিত স্কালোনি বললেন, ‘‘মাংসপেশি ও তন্তুতে চোট রয়েছে অ্যাঙ্খেলের। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন গাঁটেও ব্যথা রয়েছে।’’ আর্জেন্টিনা কোচের মতে, টানা ম্যাচ খেলার জন্যই চোট-আঘাত বাড়ছে ফুটবলারদের। পোল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ ষোলোয় যোগ্যতা অর্জনের রাতেই বলেছিলেন, ‘‘মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে ম্যাচ খেলতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। এটা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু কিছু করার নেই। ফিফার সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করার উপায় নেই।’’ এ দিন বললেন, ‘‘বৃহস্পতিবার আমাদের রিকভারি সেশন ছিল। শুক্রবার মাত্র একটা দিনই রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য।’’ যোগ করলেন, ‘‘পোল্যান্ড ম্যাচের পরে আমরা হোটেলে ফিরে শুতে গিয়েছিলাম ভোর চারটের সময়। ফুটবলাররা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগই পাচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়ার সেই সমস্যা হয়নি। ওরা আমাদের খেলা শুরু হওয়ার চার ঘণ্টা আগে ম্যাচে নেমেছিল। তার পরে হোটেলে ফিরে টেলিভিশনের সামনে বসে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে আমাদের খেলা দেখেছে। এই বিশ্বকাপে একমাত্র আর্জেন্টিনাকেই পরপর ম্যাচ খেলতে হচ্ছে ৭২ ঘণ্টারও কম সময়ে। বাকি দলগুলিকে এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। আমি কোনও অভিযোগ করছি না, তবে মনে করি বিশ্বকাপে সবার জন্যই একই নিয়ম হওয়া উচিত।’’
আর্জেন্টিনার সমর্থকরা অবশ্য দি মারিয়াকে নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন। বলেই দিলেন, ‘‘যদি শুনতাম, মেসি অসুস্থ, তা হলেই চিন্তিত হতাম। কারণ, ওঁর কোনও বিকল্প হয় না। দি’মারিয়া খেলতে না পারলেও ওর শূন্য স্থান পূরণ করার মতো ফুটবলার আমাদের দলে অনেক আছে।’’ পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিজে গোল না পেলেও ববাবরের মতো একাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছিলেন মেসি।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দি’মারিয়ার বিকল্প কে হবেন সেই প্রসঙ্গে স্কালোনিও বলে দিলেন, ‘‘আমাদের দলে একাধিক ফুটবলার রয়েছে। কেউ যদি খেলতে না পারে, তার শূন্য স্থান পূরণ করার দায়িত্ব বাকিদের নিতে হবে। আমার বিশ্বাস, ছেলেরা হতাশ করবে না।’’ আর্জেন্টিনা শিবিরে প্রধান চিন্তা অস্ট্রেলিয়ার শারীরিক ফুটবল নিয়ে। ফ্রান্সের কাছে প্রথম ম্যাচ ১-৪ গোলে হেরেছিলেন ক্রেগ গডউইনরা। তার পরে টিউনিশিয়া ও ডেনমার্ককে হারিয়ে শেষ ষোলোয় যোগ্যতা অর্জন করে অস্ট্রেলিয়া। শনিবার আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে কোচ গ্রাহাম আর্নল্ডের প্রধান লক্ষ্যই থাকবে মেসিকে খেলতে না দেওয়া। রক্ষণে পায়ের জঙ্গল তৈরি করা। অস্ট্রেলিয়া শিবিরের শুক্রবার সকালে ফুটবলারদের গ্রাহাম বলেছেন, ‘‘আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা টানা ম্যাচ খেলে ক্লান্ত। আমাদের এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। ওদের খেলতে দেওয়া চলবে না। বিশেষ করে বল নিয়ে মেসির দৌড় যে কোনও মূল্যে আটকাতে হবে তোমাদের।’’
মেসি নিজেও জানেন তাঁর জন্য অস্ট্রেলিয়ার কোচ চক্রব্যূহ রচনা করবেন। পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে পেনাল্টি নষ্ট করার যন্ত্রণা হয়তো এখনও হয়তো তাঁর মনের মধ্যে কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে। শুক্রবার সন্ধেয় কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা বেরিয়ে যাওয়ার পরে দীর্ঘক্ষণ তিনি পেনাল্টি ও ফ্রি-কিকের মহড়াও দেন বলে জানা গিয়েছে। অনুশীলন করেছেন দি’মারিয়াও।
বিশ্বকাপের সব ম্যাচই যে এখন ফাইনাল মেসিদের কাছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy