নেশনস লিগের চারটি কোয়ার্টার ফাইনালেই টান টান লড়াই হল। একটি ম্যাচের ফয়সালা হল অতিরিক্ত সময়ে। দু’টি ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে। সেমিফাইনালের চারটি দল চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। পর্তুগাল, ফ্রান্স, স্পেন ও জার্মানি উঠেছে শেষ চারে। পর্তুগাল জিতলেও পেনাল্টি ফস্কেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।
পর্তুগালের বিরুদ্ধে প্রথম পর্বে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল ডেনমার্ক। ফলে ঘরের মাঠে জয় ছাড়া উপায় ছিল না পর্তুগালের। শুরুতেই সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল তারা। ৬ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি পায় পর্তুগাল। কিন্তু গোল করতে পারেননি রোনাল্ডো। তবে প্রথমার্ধে ডেনমার্কের জোয়াকিম অ্যান্ডারসেনের আত্মঘাতী গোল খেলায় ফেরায় পর্তুগালকে।
দ্বিতীয়ার্ধে ৫৬ মিনিটের মাথায় আবার ডেনমার্ককে এগিয়ে দেন রাসমাস ক্রিস্টেনসেন। ৭২ মিনিটে সেই রোনাল্ডোই আবার দলের রক্ষাকর্তা হয়ে দেখা দেন। গোল করে সমতা ফেরান তিনি। চার মিনিট পরে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনে গোল আবার এগিয়ে দেয় ডেনমার্ককে। তবে পর্তুগালও ছাড়ার পাত্র ছিল না। ৮৬ মিনিটের মাথায় ফ্রান্সিস্কো ট্রিনকাও পর্তুগালে হয়ে গোল করেন। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ৯১ মিনিটের মাথায় আবার গোল করেন ট্রিনকাও। প্রথম বারের মতো এগিয়ে যায় পর্তুগাল। ডেনমার্ক অনেক চেষ্টা করলেও গোল শোধ করতে পারেনি। ১১৫ মিনিটের মাথায় গোল করে পর্তুগালের জয় নিশ্চিত করেন গনসালো র্যামোস। দুই পর্ব মিলিয়ে ৫-৩ গোলে জেতেন রোনাল্ডোরা।
জার্মানি বনাম ইটালি ম্যাচের দ্বিতীয় পর্বের খেলা ৩-৩ গোলে ড্র হয়। প্রথমার্ধে তিনটি গোল করে জার্মানি। ৩০ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করেন জোশুয়া কিমিচ। ৩৬ মিনিটে জামাল মুসিয়ালা ও ৪৫ মিনিটে টিম ক্লেইনডিয়েনস্ট গোল করেন। প্রথম পর্বে ২-১ গোলে জিতেছিল জার্মানি। ফলে দ্বিতীয় পর্বের প্রথমার্ধের শেষে ৫-১ গোলে এগিয়ে যায় তারা। দেখে মনে হচ্ছিল, বড় হার অপেক্ষা করছে ইটালির সামনে।
আরও পড়ুন:
দ্বিতীয়ার্ধে খেলায় ফেরে ইটালি। ৪৯ ও ৬৯ মিনিটে জোড়া গোল করেন মোইস কিয়ান। ৫-১ থেকে ৫-৩ হয় খেলা। ইটালি গোল করার আপ্রাণ চেষ্টা করছিল। সংযুক্তি সময়ে গিয়াকোমো রাসপাদোরি আরও একটি গোল করেন। কিন্তু সমতা ফেরাতে পারেনি ইটালি। শেষ পর্যন্ত ৫-৪ গোলে জার্মানির কাছে হারতে হয় ইটালিকে।
নেশনস লিগের বাকি দু’টি কোয়ার্টার ফাইনাল গড়ায় টাইব্রেকারে। স্পেন বনাম নেদারল্যান্ডসের প্রথম পর্বের খেলা ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল। দ্বিতীয় পর্বেও কাউকে এগিয়ে রাখা গেল না। সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হল। দ্বিতীয় পর্বেও শুরুতে এগিয়ে যায় স্পেন। ৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন মিকেল ওয়্যারজ়াবাল। দ্বিতীয়ার্ধে ৫৪ মিনিটের মাথায় সেই পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরান নেদারল্যান্ডসের মেম্ফিস ডেপায়। ৬৭ মিনিটে আবার স্পেনকে এগিয়ে দেন ওয়্যারজ়াবাল। ৭৯ মিনিটে সমতা ফেরান ইয়ান মাটসেন। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে ১০৩ মিনিটের মাথায় গোল করেন লামিন ইয়ামাল। দেখে মনে হচ্ছিল, স্পেন জিতে যাবে। কিন্তু ১০৯ মিনিটের মাথায় আবার পেনাল্টি পায় নেদারল্যান্ডস। গোল করেন জাভি সিমন্স।
দুই পর্ব মিলিয়ে ৫-৫ শেষ হওয়ায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে বাজিমাত করে স্পেন। প্রথম তিনটি শটে নেদারল্যান্ডসের ভার্জিল ভ্যান ডাইক, কুপমেইনার্স ও সিমন্স গোল করেন। অন্য দিকে স্পেনের মিকেল মেরিনো, ফেরান টরেস ও অ্যালেক্স গার্সিয়া গোল করেন। চতুর্থ শট ফস্কান নেদারল্যান্ডসের নোয়া ল্যাং। স্পেনের ইয়ামালও গোল করতে পারেননি। পঞ্চম শটে গোল করেন নেদারল্যান্ডসের কেনেথ টেলর ও স্পেনের অ্যালেক্স বায়েনা। ষষ্ঠ শঠ ফস্কান নেদারল্যান্ডসের ডনিল মালেন। স্পেনের পেদ্রি গোল করতে ভুল করেননি। ৫-৪ টাইব্রেকার জিতে সেমিফাইনালে যায় স্পেন। বিদায় নেয় নেদারল্যান্ডস।
প্রথম পর্বের খেলায় ফ্রান্সকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বে ঘরের মাঠে দাপট দেখাল ফ্রান্স। প্রথমার্ধে গোল না হলেও দ্বিতীয়ার্ধে ৫২ মিনিটের মাথায় মাইকেল ওলিস ও ৮০ মিনিটের মাথায় উসমান দেম্বেলে গোল করেন। ৯০ মিনিটের শেষে ফল ২-২ থাকায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও দু’দলকে আলাদা করা যায়নি। ফলে ফয়সালা হয় টাইব্রেকারে। সেখানে বাজিমাত করে ফ্রান্স।
প্রথম পাঁচটি শটের মধ্যে ক্রোয়েশিয়ার নিকোলা মোরো, মারিয়ো প্লাসিচ ও ক্রিশ্চিয়ান জাকিচ গোল করেন। মার্টিন বাতুরিনা ও ফ্রাঞ্জো ইভানোভিচ গোল করতে পারেননি। ফ্রান্সের প্রথম চারটি শটের মধ্যে তিনটিতে গোল হয়। কিলিয়ান এমবাপে, চুয়ামেনি ও কোলো মুয়ানি গোল করলেও জুলস কুন্ডে গোল করতে পারেননি। শেষ শটে থিয়ো হের্নান্দেস গোল করতে পারলেই ফ্রান্স জিতে যেত। কিন্তু তিনি পারেননি। সপ্তম শট ফস্কান ক্রোয়েশিয়ার জোসিপ স্টানিসিচ। অন্য দিকে ফ্রান্সের উপামেকানো গোল করতে ভুল করেননি। ৫-৪ টাইব্রেকার জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফ্রান্স। প্রথম পর্বে জিতেও বিদায় নিতে হয় ক্রোয়েশিয়াকে।
নেশনস লিগের প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি জার্মানি ও পর্তুগাল। খেলা হবে ৫ জুন। দ্বিতীয় সেমিফাইনাল হবে স্পেন ও ফ্রান্সের মধ্যে। ৬ জুন হবে সেই খেলা।