সতীর্থ পেপে-র (বাঁ দিকে) সঙ্গে ম্যাচের পর হাসিমুখে রোনাল্ডো। ছবি: রয়টার্স।
পর্তুগাল ০ — স্লোভেনিয়া ০
(টাইব্রেকারে পর্তুগালে ৩-০ ব্যবধানে জয়ী)
পেনাল্টি মিস্ করে কাঁদলেন। টাইব্রেকারে গোল করে ক্ষমা চেয়ে নিলেন। সোমবার ফ্রাঙ্কফুর্টে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর কান্না-হাসির রাতে পর্তুগালের সম্মান বাঁচালেন গোলকিপার দিয়োগো কোস্তা। টাইব্রেকারে তাঁর তিনটি সেভ কোয়ার্টার ফাইনালে তুলে দিল পর্তুগালকে। নির্ধারিত সময়ে কোনও দলই গোল করতে পারেনি। টাইব্রেকারে রোনাল্ডোর দল জিতল ৩-০ ব্যবধানে। রোনাল্ডো ছাড়াও টাইব্রেকারে গোল করেন ব্রুনো ফের্নান্দেস এবং বের্নার্দো সিলভা। কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে খেলবে পর্তুগাল।
গোটা ম্যাচে ১২০ মিনিটই খেললেন রোনাল্ডো। চারটি ফ্রিকিক পেয়েছিলেন ম্যাচে। তার মধ্যে তিনটি নিজের ‘এলাকা’য়। কোনওটিতেই গোল করতে পারলেন না রোনাল্ডো। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে একটি পেনাল্টি মিস্ করে কাঁদলেন। খেলার ১৫ মিনিট বাকি থাকা সত্ত্বেও। তবে টাইব্রেকারে গোল করে শেষ পর্যন্ত রোনাল্ডোর মুখে একটু হলেও হাসি ফিরল। সেই হাসি আরও চওড়া করে দিলেন কোস্তা। টাইব্রেকারে স্লোভেনিয়ার প্রথম তিনটি শটই বাঁচিয়ে দিলেন তিনি।
স্লোভেনিয়ার বিরুদ্ধে একটাই লক্ষ্য নিয়ে নেমেছিল পর্তুগাল। আক্রমণে আক্রমণে প্রতিপক্ষের নাভিশ্বাস তুলে দেওয়া। সেটাই শুরু থেকে করছিল তারা। আট মিনিটেই পেনাল্টির আবেদন করেছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। রাফায়েল লিয়াওয়ের পাস রোনাল্ডোর কাছে যাওয়ার আগেই ডারকুসিচ সেই বল কেড়ে নেন। বল কাড়াকাড়িতে রোনাল্ডো বক্সের মধ্যেই পড়ে যান। রেফারি পাত্তা দেননি।
পর্তুগাল নিজেদের মধ্যে একাধিক পাস খেলতে খেলতে আক্রমণে উঠলেও স্লোভেনিয়ার রক্ষণকে টলাতে পারেনি তারা। বক্সের কাছাকাছি গিয়ে থেমে যাচ্ছিল পর্তুগালের আক্রমণ। শুধু তাই নয়, পর্তুগালকে চিন্তায় ফেলে মাঝেমাঝেই প্রতি আক্রমণে উঠছিল তারা। রোনাল্ডোকে কড়া মার্কিংয়ে রেখেছিলেন ডারকুসিচ। পর্তুগিজ অধিনায়ককে নড়তেই দিচ্ছিলেন না তিনি। তার মাঝেই ৩০ মিনিটের মাথায় রোনাল্ডো একটি সুযোগ পান। ভিটিনহা একটি ক্রস তুলেছিলেন। কিন্তু রোনাল্ডোর হেড সরাসরি স্লোভেনিয়া গোলকিপার জান ওবলাকের হাতে যায়।
চার মিনিট পরেই বক্সের বাইরে ফ্রিকিক পায় পর্তুগাল। লিয়াওকে ফাউল করেন ডারকুসিচ। রোনাল্ডো নিজের এলাকার মধ্যে ফ্রিকিক পেয়েছিলেন। তাঁর শট ক্রসবারের এক ইঞ্চি উপর দিয়ে চলে যায়। গোলে থাকলে হয়তো গোলকিপারের কিছু করার থাকত না। এর পরে রোনাল্ডো ক্রমশ আগ্রাসী হতে থাকেন। মিনিট চারেক পরে বক্সের বাইরে গোলের কোনাকুনি আরও একটি ফ্রিকিক পায় পর্তুগাল। এ বার অবশ্য রোনাল্ডোর শট গোলের ধারেকাছে ছিল না।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেও পর্তুগালের দাপট ছিল বেশি। তবে এ বার স্লোভেনিয়াও ছেড়ে কথা বলছিল না। পর্তুগাল এক বার আক্রমণে উঠলে পর মুহূর্তেই স্লোভেনিয়া উঠে যাচ্ছিল। ৫৪ মিনিটে আবার ভাল জায়গায় একটি ফ্রিকিক পেয়েছিল পর্তুগাল। অনেকটা দৌড়ে এসে সজোরে শট নেন রোনাল্ডো। ওবলাক সঠিক জায়গায় দাঁড়িয়েছিলেন। ফিস্ট করে বল বার করে দেন।
স্লোভেনিয়াকে দেখে মনেই হচ্ছিল, বিনা যুদ্ধে তারা লড়াই ছাড়বে না। পর্তুগালের ফুটবলারদের চোখে চোখ রেখে সমানতালে লড়ে যাচ্ছিল। সুযোগ পেলেই প্রতি আক্রমণে উঠছিল তারা। এক বার সেসকো একটি সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। পর্তুগাল কিছুতেই স্লোভেনিয়ার রক্ষণ ভাঙতে পারছিল না। নির্ধারিত সময়ের শেষ দিকে রোনাল্ডোকে ভাল একটি পাস বাড়িয়েছিলেন দিয়োগো জোটা। রোনাল্ডোর বাঁ পায়ে নেওয়া শট সরাসরি যায় ওবলাকের কাছে। খেলার শেষ দিকে দু’দলের খেলোয়াড়েরাই একাধিক আক্রমণ করলেও গোল আসেনি।
অতিরিক্ত সময়ের খেলা শুরু হওয়ার পরে পর্তুগালের ফুটবলারদের ক্লান্ত লাগতে শুরু করে। সেখানে স্লোভেনিয়াকে অনেক আত্মবিশ্বাসী লাগছিল। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের শেষ দিকে পেনাল্টি পায় পর্তুগাল। জোটা বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়ার পর তাঁকে আটকে দেন ডারকুসিচ। পেনাল্টি নিতে যান রোনাল্ডোই। উল্টো দিকে থাকা গোলকিপার আতলেতিকো মাদ্রিদে দীর্ঘ দিন খেলেছেন। রিয়াল মাদ্রিদ এবং জুভেন্টাসে থাকার সময় রোনাল্ডোকে ভালই চিনতেন। রোনাল্ডোর শট তিনি বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচিয়ে দেন।
মিস্ করার পরেই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেন রোনাল্ডো। হাত সরাতে দেখা যায় তাঁর চোখে জল। সতীর্থেরা ছুটে এসে তাঁকে সান্ত্বনা দিলেও কান্না থামছিল না পর্তুগিজ অধিনায়কের। তখনও ম্যাচের ১৫ মিনিট বাকি। তখনও সুযোগ ছিল পর্তুগালের কাছে। সেটা বোঝা যাচ্ছিল না রোনাল্ডোর কান্না দেখে। মনে হচ্ছিল তাঁর দল বিদায় নিয়েছে।
১১৫ মিনিটের মাথায় ম্যাচের সহজতম সুযোগ পেয়েছিল স্লোভেনিয়াই। পাস দিতে গিয়ে পেপের পা থেকে বল ফসকে যায়। সামনেই ছিলেন সেসকো। বল নিয়ে এগোতে থাকেন তিনি। সামনে একা পর্তুগালের গোলকিপার ছাড়া কেউ ছিলেন। কোণ দিয়ে শট মেরেছিলেন সেসকো। দিয়োগো কোস্তা বাঁ পা দিয়ে সেই শট বাঁচিয়ে দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy