Advertisement
E-Paper

ফুটবলে ইতিহাস! জোড়া পায়ের রিচার্লিসনদের দশ গোল এক পায়ের ওলেক্সির

২০০৯ সাল থেকে পুসকাস পুরস্কার দেয় ফিফা। হাঙ্গেরির ফুটবলার ফেরেঙ্ক পুসকাসের নামাঙ্কিত এই পুরস্কার দেওয়া হয় সেই ফুটবলারকে, যিনি বছরের সব থেকে সুন্দর গোলটি করেন। এই বছর সেই পুরস্কার পেলেন ওলেক্সি।

Marcin Oleksy scored goal in side kick

শরীর ছুড়ে সাইড ভলিতে গোল মারসিন ওলেক্সির। ছবি: টুইটার

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:০৮
Share
Save

২০২২ সালে ফুটবল মাঠে সেরা গোল কোনটি? এই প্রশ্নের উত্তরে কেউ বলবেন বিশ্বকাপে ব্রাজিলের রিচার্লিসনের সাইড ভলির কথা, কেউ আবার বলবেন মার্সেইয়ের হয়ে দিমিত্রি পায়েতের দূরপাল্লার শটে গোলের কথা। কিন্তু ফিফার বর্ষসেরা গোলের পুসকাস পুরস্কারটি নিয়ে গেলেন মারসিন ওলেক্সি। কে তিনি? কোন ক্লাবের ফুটবলার? ইউরোপের কোনও লিগে খেলেন? এমন নানা প্রশ্ন মনে জাগা স্বাভাবিক। কারণ পুসকাস পুরস্কার পাওয়ার আগে তাঁর নাম শোনেননি অনেকেই।

২০০৯ সাল থেকে পুসকাস পুরস্কার দেয় ফিফা। হাঙ্গেরির ফুটবলার ফেরেঙ্ক পুসকাসের নামাঙ্কিত এই পুরস্কার দেওয়া হয় সেই ফুটবলারকে, যিনি বছরের সব থেকে সুন্দর গোলটি করেন। এই বছর সেই পুরস্কার পেলেন ওলেক্সি। পোল্যান্ডের ক্লাব ওয়ারটা পোজ়নানের হয়ে গোলটি করেন তিনি। ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর ম্যাচ ছিল পোজ়নান এবং স্টল আরজেসজোয়ের মধ্যে। তাঁর করা গোল সম্পর্কে ওলেক্সি বলেন, “আমার সতীর্থ দাউইদ নোভাক আমার পাস বাড়িয়েছিল। ওকে বলের দিকে এগোতে দেখেই বুঝেছিলাম যে আমাকে পাস দেবে। লাফিয়ে উঠে সাইডভলি মেরেছিলাম। পরিষ্কার হিট ছিল। মারার পর দেখতে পাই গোলপোস্টের কোণ ঘেঁষে বলটা জালে জড়িয়ে যাচ্ছে। আমি সব সময় চাইতাম একটা সুন্দর গোল করতে। প্রচণ্ড গর্বিত হয়েছিলাম ওই গোলটা করার পর।” বিশ্বকাপে রিচার্লিসনও সাইডভলিতে গোল করেছিলেন। সেই গোলটিও ছিল পুসকাস পুরস্কার পাওয়ার দৌড়ে। ব্রাজিলের ফুটবলারের সেই গোলকে হারিয়েই জিতলেন ওলেক্সি।

পোল্যান্ডের ফুটবলার তিনি। খেলেন সেই দেশের ক্লাব ওয়ারটা পোজ়নানের হয়ে। তাঁর ফুটবল খেলা যদিও লিয়োনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোদের থেকে আলাদা। ওলেক্সি খেলেন ‘অ্যাম্পিউটি ফুটবল’। অর্থাৎ এমন ফুটবলার যাঁর পা নেই। ওলেক্সির বাঁ পা নেই। সেই ধরনের ফুটবলে শরীর ছুড়ে সাইড ভলিতে গোল করেন ওলেক্সি। তিনিই প্রথম ‘অ্যাম্পিউট’ ফুটবলার যিনি পুসকাস পুরস্কার পেলেন।

পোল্যান্ডের এই ফুটবলার কিন্তু মূল স্রোতের ফুটবলারদের সঙ্গে লড়েই সেরা হয়েছেন। রিচার্লিসন, পায়েতদের দশ গোল দিয়েই পুসকাস পুরস্কার জিতেছেন। ওলেক্সি এক জন নির্মাণকর্মী ছিলেন। ২০১০ সালের ২০ নভেম্বরের দুর্ঘটনা জীবন পাল্টে দেয় ওলেক্সির। রাস্তায় গর্ত ভরাট করার কাজ করছিলেন তিনি। সেই সময় একটি গাড়ি এসে ধাক্কা মারে ওলেক্সিকে। তাঁর পায়ের উপর দিয়ে চলে যায় গাড়িটি। ২৩ বছরের ওলেক্সি ভেবেছিলেন তিনি হয়তো আর বাঁচবেন না। দুর্ঘটনার পর জ্ঞান হারান ওলেক্সি। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয় বাঁ পা-টি।

ওলেক্সি বলেন, “অস্ত্রোপচারের পর জ্ঞান ফেরে আমার। তখন দেখি আমার একটা পা নেই। তাতে যদিও আমার কোনও দুঃখ হয়নি। দুর্ঘটনার পর আমি নিজের পায়ের অবস্থা দেখেছিলাম। বুঝতে পেরেছিলাম কী হতে পারে। তাই মনে হয় আমার অতটা দুঃখ হয়নি।”

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময় হুইলচেয়ারে ছিলেন ওলেক্সি। সেই সময় তাঁকে যদি কেউ বলতেন যে, তিনি ফুটবল খেলবেন, তা হলে হয়তো সে কথা নিজেই হেসে উড়িয়ে দিতেন ওলেক্সি। তাঁর সঙ্গী এউইলিনা সেই সময় অন্তঃসত্ত্বা। ওলেক্সি বলেন, “শুরুর দিকে নিজের অবস্থা মেনে নিতে খুব কষ্ট হত। সব দায়িত্ব পড়েছিল আমার সঙ্গীর ঘাড়ে। এউইলিনা সেই সময় অন্তঃসত্ত্বা। আমি যেন ওর আরও এক সন্তান। খারাপ লাগত ওর জন্য। সব কিছু একা করতে হত। নিজেকে সময় দিতে পারত না ও। এউইলিনা যা করেছে তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ বললে কিছুই বলা হয় না। ওর জন্যই আমি আবার নিজেকে খুঁজে পেয়েছি।”

Marcin Oleksy with Puskas Award

পুসকাস পুরস্কার হাতে মারসিন ওলেক্সি। ছবি: রয়টার্স

দুর্ঘটনার আগেও ফুটবল খেলতেন ওলেক্সি। তাঁর আদর্শ ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের প্রাক্তন গোলরক্ষক ইকের ক্যাসিয়াস। ওলেক্সি নিজেও গোলরক্ষক ছিলেন। দুর্ঘটনার পর যদিও তাঁর ফুটবল খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ওলেক্সির ফুটবলে ফেরার পিছনে তাঁর ছেলের ভূমিকা রয়েছে। পুসকাস পুরস্কারজয়ী ওলেক্সি বলেন, “দুর্ঘটনার পর আমি প্রথম বার পায়ে বল লাগাই ছেলের সঙ্গে খেলতে গিয়ে। দারুণ আনন্দ পেয়েছিলাম। আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল ওই ঘটনা। আবার অনুশীলন শুরু করি। তার পর ‘অ্যাম্পিউট’ ফুটবল খেলতে নামি।”

‘অ্যাম্পিউট’ ফুটবলে দ্রুত নাম করতে শুরু করেন ওলেক্সি। পোল্যান্ডের জাতীয় দলেও ডাক পান তিনি। সেই দলের অন্যতম ফুটবলার এখন ওলেক্সি। পুসকাস পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ার পরই তারকা হয়ে ওঠেন তিনি। ওলেক্সি বলেন, “আমার সন্তানরা গর্বিত। কিলিয়ান এমবাপের সঙ্গে আমার ছবি দেখে ছেলের স্কুলের বন্ধুরা আমাকে তারকা ভাবছে। আমার মনে হয় ওরা বলবে এমবাপের সই এনে দিতে। আমি ভাবতেই পারছি না যে, এমন ফুটবলারদের সঙ্গে আমার নাম একসঙ্গে নেওয়া হচ্ছে। আশা করব ওরাও খুশি হবে আমার নামের পাশে নিজেদের দেখে।”

পোল্যান্ডের ফুটবলার বলতেই রবার্ট লেওয়ানডস্কির নাম নেওয়া হয়। তিনি ওলেক্সির হয়ে একটি পোস্ট করেছিলেন। সেই পোস্টের কথা জানেন ওলেক্সি। তিনি বলেন, “রবার্ট আমার নাম নিয়েছে। এটা দারুণ ব্যাপার। আমি গর্বিত। পোল্যান্ডে রবার্টের প্রচুর সমর্থক। তাঁকে দেখে ফুটবলার হতে চায় অনেকে। পোল্যান্ডের ‘অ্যাম্পিউট’ ফুটবলের মুখ রবার্ট। বহু দিন ধরেই ও আমাদের ফুটবলের পাশে আছে।”

ওলেক্সির বিশ্বাস তাঁর পাওয়া পুসকাস পুরস্কার পাল্টে দেবে ‘অ্যাম্পিউট’ ফুটবলকে। আরও প্রচারে এনে দেবে এই খেলাকে। ওলেক্সি বলেন, “আশা করব বিশ্ব দেখবে যে, আমরা সেটাই করছি যেটা আমরা করতে ভালবাসি। এই খেলাটার জন্য আমি খুশি। আমার করা গোলটি শুধু আমার নয়, ‘অ্যাম্পিউট’ ফুটবল পরিবার এই গোল করেছে।”

Marcin Oleksy Ferenc Puskás fifa Richarlison

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।