কিলিয়ান এমবাপে। — ফাইল চিত্র।
কাতার বিশ্বকাপে সব চেয়ে বেশি আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল ওরা চার জন। মেসি, নেমার, রোনাল্ডো এবং এমবাপে। আমাকে জিজ্ঞাসা করলে বলব, এখনও পর্যন্ত এমবাপেকেই সেরা মনে হয়েছে। যদি বেশ কয়েকটা সহজ সুযোগ না হারাত, আরও বেশি গোল লেখা থাকত ওর নামের পাশে। বিশেষ করে প্রথম ম্যাচটায় অনেকগুলো সুযোগ তৈরিকরেও হারাল।
এক নিঃশ্বাসে এটাও বলে দিতে চাই, বাকি তিন জনও দারুণ ফুটবলার। মেসিকে খুব বেশি ভাবতে দিলেই বিপদ। ওর মস্তিষ্ক তীক্ষ্ণ। রোনাল্ডোরও তাই। গত এক দশক ধরে এই দু’জন এমনি-এমনি বিশ্ব ফুটবলকে শাসন করেনি। নেমারকে চোটের জন্য মাঠের বাইরে কাটাতে হয়েছে। কিন্তু ওর যা প্রতিভা, বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলার হয়ে উঠতেই পারে। তবে তার জন্য সম্পূর্ণ চোটমুক্ত হয়ে উঠতে হবে।
ব্রাজিলকে এই মুহূর্তে খুব শক্তিশালী দেখাচ্ছে। সব দিক দিয়েই। যেমন শারীরিক ভাবে শক্তিশালী, তেমনই টেকনিক্যাল দিক থেকেও অপ্রতিরোধ্য। তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হলুদ-সবুজ জার্সির চিরাচরিত আবেগ। আমি মনে করি, এই দলটা ব্রাজিলের কুড়ি বছরের অপেক্ষা মিটিয়ে কাপ ঘরে আনার ক্ষমতা রাখে।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে দারুণ খেলেছে ব্রাজিল। প্রথম ৪৫ মিনিটেই ম্যাচ শেষ করে দিয়েছিল। এই দলের ছেলেগুলোর মধ্যে স্কিল তো আছেই। দুর্দান্ত গতি রয়েছে প্রত্যেকের। প্রতিভায় ভর্তি। সব চেয়ে বড় কথা, এককাট্টা হয়ে দল হিসেবে খেলছে।
ব্রাজিলে কেউ ভাবে না, কে গোল করবে। এখানে কথায় আছে, কেউ না কেউ ঠিক গোল করে দেবে। মন দাও খেলাটাকে তৈরি করার দিকে। আর একটা ব্যাপার। ব্রাজিলে সব সময় আগে দল, পরে ব্যক্তি। যুগে যুগে ব্রাজিলে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের অসাধারণ সব খেলোয়াড় এসেছে। কিন্তু প্রত্যেকে দলের জন্য খেলেছে, ব্যক্তিগত লক্ষ্য রেখে কেউ কখনও মাঠে নামেনি। এই দলটা সম্পর্কেও সেই কথাটা বলতেই হবে।
নেমারের চোট নিশ্চয়ই বড় ধাক্কা হতে পারত। সৌভাগ্যের যে, ও দ্রুত সেরে উঠে মাঠে ফিরেছে। এটাও বলতে হবে, যে ভাবে ও দায়বদ্ধতা দেখিয়ে চিকিৎসায় সহযোগিতা করে গিয়েছে। ব্রাজিলে নেমারকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত, এ সব ওকে স্পর্শ করেনি। ও নিজেও তো জানে, সমালোচনা হচ্ছে মাঠের বাইরের কারণে। এই দলটার তরুণ প্রজন্মের কাছে নেমারের ভূমিকা নেতার মতো। ভিনিশিয়াস জুনিয়র, রিচার্লিসন, রাফিনা, পাকেতা, রদ্রিগো, অ্যান্টনি— ওরা সবাই নেমারকে আদর্শ মানে। সকলে ওকে খুব শ্রদ্ধা করে। ব্রাজিলের এই দলটা শুধু নেমারের উপরে নির্ভরশীল নয়। দারুণ সব নতুন মুখ এসে গিয়েছে। ওরা যেমন আক্রমণ করতে জানে, তেমনই জানে রক্ষণ সামলাতে হয় কী ভাবে। খুবই গোছানো দল। তবু বলতেই হবে, দলটার ভিতরে নেমারের উপস্থিতির তাৎপর্যটাই অন্য রকম।
আজ, শুক্রবার কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া। একেবারেই হেলাফেলা করার মতো দল নয়। দুর্দান্ত এক ফুটবলার রয়েছে ওদের। কিছুটা বয়স হয়ে গেলেও লুকা মদ্রিচ কিন্তু এখনও রিয়াল মাদ্রিদকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। শেষ বিশ্বকাপেও ক্রোয়েশিয়া ফাইনাল খেলেছে, তাই মদ্রিচ আর ওর দলকে নিয়ে সতর্ক থাকতেই হবে ব্রাজিলকে। এ বার কিন্তু নেমারদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে অনেকবেশি শক্তিশালী।
বিশ্বকাপে একটা ভুলও সব স্বপ্ন চুরমার করে দিয়ে যেতে পারে। ব্রাজিলকে তা মনে রাখতে হবে। আমি যদিও খুব আত্মবিশ্বাসী এই ব্রাজিলকে দেখে। আশা করছি ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে ওরা সেমিফাইনালে উঠবে। তার পরে মুখোমুখি আর্জেন্টিনাবা নেদারল্যান্ডসের।
আর্জেন্টিনার আছে মেসি। বিশ্বসেরাদের এক জন। মেসি এমন এক ফুটবলার, ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে যার দরকার মাত্র একটা পায়ের ছোঁয়া। ওকে জায়গা দিলেই কিন্তু বিপদ। নেদারল্যান্ডসের আছে চতুর এক কোচ— লুইস ফান হাল। আমার মতে, ম্যাচটা খুব ‘ওপেন’ হবে কারণ দু’টো দলই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে ভালবাসে। নেদারল্যান্ডস এখনও হারেনি কিন্তু যে পরিমাণ সুযোগ নষ্ট করেছে, তা আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে করলে কিন্তু ভুগতে হতে পারে। তবু আমি বলব, এই ম্যাচটায় কেউ ফেভারিট নয়। দু’টো দলকেই সেরা ফুটবল খেলতে হবে সেমিফাইনালে যেতে গেলে।
এই বিশ্বকাপে অনেক অঘটন হয়েছে। তবে আমার ব্যক্তিগত মত, ‘অঘটন’ বা ‘চমক’ শব্দ কি এখনকার ফুটবল দুনিয়ায় সত্যিই ব্যবহার করা যায়? ইন্টারনেটের রমরমার যুগে সবার হাতে সব তথ্য রয়েছে। প্রত্যেক দলে এত সব অ্যানালিস্ট রয়েছে প্রতিপক্ষের খেলা সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ তুলে আনার জন্য। শত শত ভিডিয়ো দেখে খেলতে নামছে তারা। তাই ‘অঘটন’ জাতীয় শব্দ ব্যবহার করার আগে আমাদের আর একটু ভাবা উচিত। আমি এটাও মনে করি না যে, তথাকথিত বড় টিম অপেক্ষাকৃত ছোট দলের কাছে হারলেই সেটাকে অঘটন বলতে হবে।
যেমন, আমার মতে, ইরানকে যে ইংল্যান্ড ৬-২ হারাল, সেটা অবাক করার মতো ফল। কারণ ইরান খুব ভাল প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল, যোগ্যতা অর্জন পর্বেও দারুণ খেলেছিল। প্রথম ম্যাচেই ওদের ও ভাবে হারাটা আমার কাছে অঘটন।
শুক্রবার থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল শুরু হচ্ছে আর প্রত্যেকটা দলই ভাল খেলছে। মরক্কোও দারুণ ভাবে উঠে এল শেষ আটে। এই পর্বে চারটি দল আছে, যারা কোনও ম্যাচ হারেনি। অন্য চারটি দল একটি করে ম্যাচ হেরেছে। তবে কয়েকটা বড় অঘটন হয়েছে সন্দেহ নেই। যেমন জার্মানির প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়। প্রি-কোয়ার্টার থেকে স্পেন ছিটকে গেল। আবার এটাও ভাবুন, গ্রুপ পর্বে এক সময় মনে হচ্ছিল, জার্মানি আর স্পেন দু’টো দলই না-ও উঠতে পারে। কোস্টা রিকা আর জাপান চলে যেতে পারে। বিশ্বকাপ মানেই তো এ রকম সব অভাবনীয় ফল। ২০১৮-তে দক্ষিণ কোরিয়া ছিটকে দেয় জার্মানিকে, ২০১৪-তে স্পেন প্রথম রাউন্ডের বাধাইটপকাতে পারেনি।
ইতিহাস বিশ্বকাপে ম্যাচ জেতায় না। জেতায় পরিশ্রম, বর্তমান ফর্ম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy