E-Paper

বাগানে ফুল ফোটাচ্ছেন নলকূপ মিস্ত্রির পুত্র

সোমবার রাতে যুবভারতীতে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ময়দানের নতুন দীপেন্দুর গোলে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট সমতা ফেরানোর পরে চোখ জলে ভরে উঠেছিল প্রদীপবাবুর।

হুঙ্কার: মোহনবাগানের অন্যতম ভরসা এখন দীপেন্দু। 

হুঙ্কার: মোহনবাগানের অন্যতম ভরসা এখন দীপেন্দু।  ছবি: এফএসডিএল।

শুভজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৪৭
Share
Save

রাত শেষ হওয়ার আগেই চম্পাহাটির রায়পুর গ্রামের ছোট্ট বাড়ি থেকে নলকূপ বসানোর যন্ত্রপাতি নিয়ে এখনও বেরিয়ে পড়েন প্রদীপ বিশ্বাস। কোনও দিন কাজ জোটে। কখনও জোটে না। প্রবল আর্থিক সঙ্কটেই তাঁর ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ফুটবলের প্রতি ভালবাসা কমেনি।

দীপেন্দু বিশ্বাস তখন ভারতীয় ফুটবলের উজ্জ্বল তারকা। আই এম বিজয়নের সঙ্গেও তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে তাঁর। সেই দীপেন্দুকে দেখেই নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন প্রদীপবাবু। ঠিক করলেন, যদি ছেলে হয়, নাম রাখবেন দীপেন্দু। শেখাবেন ফুটবল। সোমবার রাতে যুবভারতীতে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ময়দানের নতুন দীপেন্দুর গোলে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট সমতা ফেরানোর পরে চোখ জলে ভরে উঠেছিল প্রদীপবাবুর। ফিরে গিয়েছিলেন অতীতের সেই দুঃসহ দিনগুলিতে। আনন্দবাজারকে তিনি বলছিলেন, ‘‘অগ্রণী ক্লাবে খেলতাম। কিন্তু অর্থের অভাবে দু’বেলা খাওয়া জুটত না। বাধ্য হয়েই ফুটবল ছেড়ে নলকূপ বসানোর কাজ শুরু করি। খেলাও দেখতাম। দীপেন্দু বিশ্বাস তখন মোহনবাগানের হয়ে দুর্দান্ত খেলছেন। আমি ভক্ত হয়ে গেলাম। মনে মনে ঠিক করি, পুত্র সন্তান হলে, নাম রাখব দীপেন্দু।’’

নর্থ ইস্টের বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস জয়ের পরে মোহনবাগান কোচ হোসে ফ্রান্সিসকো মলিনা যাঁকে এই মুহূর্তে দেশের সেরা স্টপারের আখ্যা দিয়েছেন, সেই দীপেন্দুর ফুটবলার হওয়ার কথাই ছিল না! বঙ্গ ডিফেন্ডারের বাবা বলছিলেন, ‘‘দীপেন্দুকে প্রথমে অ্যাথলেটিক্সে দিয়েছিলাম। স্কুলের হয়ে দারুণ দৌড়ত। এক দিন ও বলল, ‘‘বাবা আমি ফুটবলার হতে চাই। কী করব? দারুণ খুশি হয়েছিলাম।’’ একই সঙ্গে উদ্বেগও বেড়েছিল প্রদীপবাবুর। সামান্য রোজগারে দু’বেলা ঠিক মতো খাওয়া জোটে না। ছেলেকে বুট-জার্সি কিনে দেওয়ার অর্থ কী ভাবে জোগাড় করবেন? তিনি বলছিলেন, ‘‘গ্রামের মাঠেই অনুশীলন শুরু করল ও। খুব কষ্ট করে বুট-জার্সি কিনতাম। শুরুর দিকে ও গোলকিপিং করত। সেই সময় বারুইপুরে সাগর সঙ্ঘের মাঠে মনোজিৎ দাস প্রশিক্ষণ দিতেন। দীপেন্দুকে সেখানেই ভর্তি করে দিয়েছিলাম। মনোজিৎ স্যরের জন্যই ও ফুটবলার হতে পেরেছে।’’

ভারতীয় দল ও কলকাতার তিন প্রধানের প্রাক্তন ফুটবলার মনোজিৎ যদিও কৃতিত্ব নিতে নারাজ। বললেন, ‘‘নিজের যোগ্যতায় এই জায়গায় এসেছে দীপেন্দু। ছোটবেলা থেকেই ও কথা খুব কম বলত। কিন্তু অক্ষরে অক্ষরে আমার সব পরামর্শ মেনে চলত। অসম্ভব পরিশ্রমী ও শৃঙ্খলাপরায়ণ।’’ যোগ করলেন, ‘‘দীপেন্দু বিরাট প্রতিভা নিয়ে জন্মায়নি। কিন্তু ওর শেখার আগ্রহ প্রচণ্ড। ও চোটমুক্ত থাকতে পারলে অনেক দূর যাবে।’’

ডিফেন্ডার হয়েও দীপেন্দুর গোল করার দক্ষতার নেপথ্যে অন্যতম কারিগর মনোজিৎ। বলছিলেন, ‘‘দীপেন্দুকে প্রথম থেকেই বলে এসেছি, সুব্রত ভট্টাচার্যের মতো রক্ষণ থেকে উঠে গিয়ে হেড করে গোল যদি করতে পারলেই দাম বাড়বে। প্রথম একাদশেও জায়গা পাবি। দীপেন্দু শুধু আমার কথা শুনেছে। নিজেকে তৈরি করেছে। নর্থ ইস্টের বিরুদ্ধে গোল করেই তা প্রমাণ করেছে।’’

সদ্য স্নাতক দীপেন্দুর মাঠের বাইরে লড়াইয়ের কাহিনিও কম চমকপ্রদ নয়। অনুশীলনে কঠোর পরিশ্রম, টানা ম্যাচ খেলার ক্লান্তি সত্ত্বেও লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছেন। মোহনবাগান রক্ষণের অন্যতম ভরসার বাবা বলছিলেন, ‘‘খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে দীপেন্দু। তবে পরীক্ষার সময়ও অনুশীলন বন্ধ করেনি। প্রচণ্ড পরিশ্রম করেই এই জায়গায় এসেছে।’’

লড়াই যে দীপেন্দুর রক্তে!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mohun Bagan football footballer ISL 2024-25 Dipendu Biswas

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।