এখনও পর্যন্ত সভাপতি ঠিক করতে পারল না মোহনবাগান। শুধু তাই নয়, এ দিনের সভায় কার্যকরী কমিটির সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধের ছবি স্পষ্ট হয়ে উঠল বৈঠক পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনেও।
বুধবারের বৈঠকে মাঠ সচিব হিসেবে পিন্টু বিশ্বাসের নাম আলোচনায় উঠলে আপত্তি জানান স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবাদিক সম্মেলনেও নিজের আপত্তি গোপন করলেন না তিনি। সাংবাদিক সম্মেলনে সচিব দেবাশিস দত্ত পিন্টু বিশ্বাসের (বিদ্যুৎ এবং ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের আত্মীয়) নাম মাঠ সচিব হিসেবে ঘোষণা করলে মুখ্যমন্ত্রীর ভাই সেখানেও তাঁর আপত্তির কথা জানান। দেবাশিস জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত কারণে নির্বাচিত মাঠ সচিব তন্ময় চট্টোপাধ্যায় ইস্তফা দিয়েছেন। নিজের ব্যবসার কাজ সামলে ক্লাবে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারবেন না বলে আগেই জানিয়ে ছিলেন তিনি। তাঁর ইস্তফাপত্র এ দিনের বৈঠকে গৃহীত হয়েছে। তবে তাঁকে কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। ক্লাবের নিয়ম মেনেই তাঁর জায়গায় কমিটির সদস্য পিন্টু বিশ্বাসকে মাঠ সচিব করার প্রস্তাব উঠলে আপত্তি জানান স্বপন। সাংবাদিক সম্মেলনে স্বপন আপত্তির কারণ হিসেবে বলেন, “যে সদস্য দু’বছর কার্ড নবীকরণ করেননি…” তাঁকে থামিয়ে দেন সচিব। দেবাশিস বলেন, “থাক না।” পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় অন্যতম সহ-সভাপতি কুণাল ঘোষকে।
সভাপতি হিসেবে এখনও কাউকে বেছে নেওয়া না হলেও সচিবের আশ্বাস কয়েক দিনের মধ্যেই সেই নাম চূড়ান্ত হয়ে যাবে। দেবাশিস এ দিনের সভায় জানিয়েছেন, প্রাক্তন সহ-সভাপতি সৌমিক বসুকে আবার সহ সভাপতি পদে আনা হয়েছে। কমিটিতে এসেছেন প্রাক্তন সচিব প্রয়াত অঞ্জন মিত্রর মেয়ে সোহিনী মিত্র। তবে এখনও একটি সহ-সভাপতি পদ খালি রয়েছে। সেই জায়গায় কে আসবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আলোচনা হয়েছে ক্লাবের নামের আগে থেকে এটিকে শব্দ মুছে ফেলা নিয়েও। সচিব বললেন, ‘‘নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কালকেই সমাধান হয়ে যাবে না। একটু সময় লাগবে। নিশ্চিত ভাবে সমাধান হবে।’’ ভাল দল তৈরি এবং আইএসএলে ভাল ফলের জন্য সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন দেবাশিস। তাঁর বক্তব্য, সিইএসসি কর্ণধারকে তাঁরা এখন আর ইনভেস্টর হিসেবে মনে করেন না। তিনিও এখন ক্লাবেরই একজন।
ক্লাবের দুই গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারির মধ্যে মতান্তর সামনে আসার পর অন্যতম সহ-সভাপতি কুণাল ঘোষ বলেন, “দু’একটি বিষয়ে মতান্তর হতেই পারে। ক্লাবে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে। যা হবে সবাই আলোচনা করেই হবে। ক্লাবের সচিবের সঙ্গে ফুটবল সচিবের কোনও বিরোধ নেই।’’ সভাপতি চূড়ান্ত করতে না পারা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘যোগ্য ব্যক্তি অনেকেই আছেন। আমরা কাউকে অসম্মানিত করতে চাই না। সবার সঙ্গে আলোচনা করে সভাপতি বেছে নেওয়া হবে।’’ একই সঙ্গে তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘এত দিন যা হওয়ার হয়েছে। এখন নতুন ভাবে সব কিছু হবে। আগের সঙ্গে অনেক কিছুই মিলবে না।’’
পরে ফুটবল সচিব স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি এবং দেবাশিস দত্ত সবসময় এক সঙ্গে ছিলাম। এক সঙ্গে নির্বাচন করেছি। আমাদের মধ্যে কোনও ভাগাভাগি নেই। কাউকে করতেও দেব না। আগামী তিন বছরে আমরা মোহনবাগান ক্লাবকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাব।’’ সবুজমেরুন সচিব বলেন, ‘‘এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়। অনেক কিছু ভাল হয়। অনেক কিছু হয় না। এত বড় সমাজে এক সঙ্গে চলতে গেলে ছোট খাট এরকম ঘটনা ঘটে। সেগুলো গুরুত্ব দিলে হবে না। আমাদের সামনে এগোতে হবে। কাজ করতে হবে।’’ তিনি আরও জানান, ‘‘২০ বছর ক্লাবের সদস্য এবং সভাপতি হতে পারেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা ৩২ জন। অনেকের বয়স হয়েছে। অনেকে অসুস্থ। তাঁদের মধ্যে থেকে বেছে সাত জনের নাম নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে থেকেই কেউ সভাপতি হবেন।’’
এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আরও দুই সহ-সভাপতি এবং রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় এবং মলয় ঘটকও। ঠিক হয়েছে, আগামী ২৩ এপ্রিল মোহনবাগানের বার্ষিক সভা হবে। বৈঠকের পর প্রথম বার হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।